ছেলের ঈদ সালামীর টাকা দিয়ে শুরু নুরজাহান কুরুশ কাঁটায় স্বপ্ন বুনছেন লাখ টাকার
জিয়াউর রহমান জিয়া চিলমারী (কুড়িগ্রাম) থেকে : তিন বছর আগে ছেলের ঈদ সালামীর ৪ হাজার টাকা দিয়ে সুতা কিনে হাতের কাজ শুরু করেন নুরজাহান বেগম। এরপর তেমন সারা না মিললেও এখন মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। কুরুশ কাটার কাজ শুরুর পর স্থানীয় নারীদের বাড়ি বাড়ি ডেকে এনে কাজ শিখিয়েছেন এখন তাদের দিয়ে অর্ডারের কাজ করে নিচ্ছেন এই নারী উদ্যোক্তা।
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের রমনা মিয়া বাড়ি এলাকার মো: আসিফ ইকবালের সহধর্মিণী নুরজাহান বেগম। প্রথমে নুরজাহান বেগম মায়ের কাছে কুরুশ-কাঁটার কাজ শিখেছেন। এরপর স্বল্প পরিসরে নিজের ব্যবহারের জন্য তৈরি করতেন বিভিন্ন ধরনের সুতার পণ্য। পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যমে বেশ ভালো সারা পেতে থাকলে ছেলের ঈদ সালামীর চার হাজার টাকা দিয়ে সুতা কিনে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন এই ব্যবসা। এরপর প্রথম দুই বছরে নিজের সামান্য মুনাফা দিয়ে চলছিল তার কুরুশ-কাঁটার ব্যবসা। পরের বছর বেসরকারি সংস্থার ২২ হাজার টাকা পান। পরে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে পুরো উদ্যমে শুরু করেন ব্যবসা। তিন বছরে প্রায় লাখ টাকা আয় করেছেন এই নারী উদ্যোক্তা। এখন তিনি শুধু নিজ এলাকায় নয় অনলাইনের মাধ্যমে এসব পণ্য বিক্রি করছেন বিভিন্ন জেলায়।
নুরজাহান বেগম বলেন, চাহিদা বেশি হওয়ায় নিজ এলাকার নারীদের ফ্রিতে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এখন তার তত্ত্বাবধানে কাজ করছেন ওই এলাকার প্রায় ১০ থেকে ১২ জন নারী। কাজ শিখে এখন অর্ডারের কাজও করেন কলি নামে এক নারী। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের হাত খরচ চালাতে পারে নিজেই। কলি খাতুন বলেন, নুরজাহান বেগম দীর্ঘদিন থেকে কুরুশ-কাঁটার কাজ করেন। একদিন এখানে এসে দেখি ইনি কাজ করছেন। পরে সেখান থেকে এই কাজ শেখার আগ্রহ হয়। পরে আমিও কাজ শিখি। শুধু আমি নই আমার এলাকার আরও অনেক নারী এখানে ফ্রিতেই কাজ শিখেছেন। এখন পড়ালেখার পাশাপাশি আমি এই কাজ করে নিজের হাত খরচ চালাতে পারছি।
অপর এক গৃহিনী বলেন, আমরা আগে কুরুশ-কাঁটার কাজ জানতাম না পরে নুরজাহান আপার থেকে কাজ শিখে এখন সংসারে আয় করতে পারছি। সাংসারিক ভাবেও এখন স্বচ্ছতা এসেছে। নারী উদ্যোক্তা নুরজাহান বেগম বলেন, কুরুশকাটার কাজ সুতা দিয়ে করতে হয়। আমার এখানে ডাইনিং টেবিলের সেট, কুসুন কভার, মশারির কভার, বাচ্চাদের টুপি, জুতা, জামার গলা, ব্যাগ, গায়ের শালসহ ১৫-২০টি প্রোডাক্ট রয়েছে। এছাড়াও ক্রেতারা যেভাবে চান আমরা সেই ভাবেই কাজ করে দেই। এখন এলাকার বাইরেও অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলাতেও বিক্রি করছি মোটামুটি ভাবে।
আরও পড়ুনতিনি আরও বলেন, আমার তিন বছরের প্রায় লাখ টাকা আয় হয়েছে। এখন যদি বেশি বিক্রি করতে পারি তাহলে প্রতি মাসে প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হবে। তা দিয়ে আমি আমার সংসারে স্বচ্ছলতা নিয়ে এসেছি। আমি নিজে থেকে এই এলাকার ১০-১২ জন নারীকে এই কাজ শিখিয়েছি। এখন তারাও অনেকটাই স্বাবলম্বী।
রমনা মডেল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আঁকা বলেন, নুরজাহান বেগম দীর্ঘদিন থেকে কুরুশ-কাঁটার কাজ করে আসছেন। উনি একজন নারী উদ্যোক্তা। ওনার এই হস্তশিল্প সঠিকভাবে বাজারজাত করতে পারলে তিনি স্বাবলম্বী হতে পারবেন। চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুজ কুমার বসাক বলেন, উদ্যোক্তা যারা আছেন, যারা ভাল কাজ করেন তাদের পাশে আছি।
মন্তব্য করুন