ভিডিও বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কুকীর্তি ফাঁস করায় আল জাজিরার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা

কুকীর্তি ফাঁস করায় আল জাজিরার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে চেয়েছিলেন হাসিনা

হাসিনা সরকারের আমলেই ২০২১ সালে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স ম্যান’ নামে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। ওই তথ্যচিত্রে, কীভাবে শেখ হাসিনার প্রশাসনের অধীনে ব্যাপকভাবে দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে তা তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরেই তৎপর হয়ে ওঠে হাসিনা প্রশাসন এবং আল জাজিরা ও প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিক এমনকি তথ্য সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পরিকল্পনা শুরু করে।

ব্রিটিম সংবাদপত্র দ্য সানডে টাইমস জানিয়েছে, প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর আলজাজিরার বিরুদ্ধে মামলা করার উদ্যোগ নেয় হাসিনা প্রশাসন। এছাড়া এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর তথ্য ফাঁসকরা হুইসেলব্লোয়ার জুলকারনাইন সায়ের খানের ভাইকে লোহার রড দিয়ে পেটানো হয়। যারা প্রতিবেদনে সহায়তা করেছিলেন তাদের অনেকে ভয়ে দেশ ছাড়তেও বাধ্য হন।

ব্রিটিশ সংবাদপত্রটি আরও জানিয়েছে যে, তথ্যচিত্রের সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য সেই সময় সরকার বাংলাদেশে ডেভিড বার্গম্যানকে গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা করেছিল। হাসিনা সরকার তথ্যচিত্রটিকে মানহানিকর এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে এবং ইউটিউব ও ফেসবুককে ভিডিও প্রতিবেদনটি সরিয়ে নিতে চাপ দিতে থাকে। এমনকি বাংলাদেশের হাইকোর্টও এই প্রতিবেদন সরাতে হাসিনার পক্ষে রায় দেয়। তবে ইউটিউব বা ফেসবুক কেউই এতে কর্ণপাত করেনি।

‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স ম্যান’ তথ্যচিত্রে বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ, তার পরিবার ও অন্যান্যদের কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করা হয়। যার জের ধরে, আজিজ আহমেদ এবং তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। এছাড়াও তথ্যচিত্রে তুলে ধরা হয়, কীভাবে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে প্রতিদ্বন্দ্বীকে অপহরণের মত অপকর্মে লিপ্ত হাসিনার নিয়োগ করা ব্যক্তিরা।

রাষ্ট্রীয় এই দুর্নীতি ও কুকীর্তি ফাঁসের পর এটি লুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে টাইমস জানিয়েছে, তথ্যচিত্রটি মিথ্যা আখ্যায়িত করে আলজাজিরার বিরুদ্ধে এ ব্যাপারে মামলা করতে প্রখ্যাত ব্রিটিশ ব্যারিস্টার ডেসমোন্ড ব্রাউনি কেসির সঙ্গে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে যোগাযোগ করেছিল লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন

সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুথানের পর শেখ হাসিনার বাড়ি থেকে এ সংক্রান্ত একটি নথি পেয়েছে তারা। এতে উল্লেখ আছে, ব্যারিস্টার ব্রাউনি এ ব্যাপারে সহায়তা করতে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে সম্মতি জানিয়েছেন। এমনকি তিনি ক্লার্ক উইলিয়ামস নামের এক আইনজীবীর সঙ্গে হাসিনার প্রতিনিধিদের যোগাযোগও করিয়ে দেন। যিনি যুক্তরাজ্যে ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে মামলায় সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।

সানডে টাইমস বলেছে, শেখ হাসিনার বাড়ি থেকে পাওয়া নথিতে উল্লেখ আছে, তার সরকার আলজাজিরার পাশাপাশি ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। বার্গম্যান প্রতিবেদনটি তৈরীতে সহায়তা করেছিলেন। নথিতে আরও পাওয়া গেছে, বার্গম্যানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা একাধিক মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন এবং একটা সময় তাকে আটক করার পরিকল্পনাও করেন তারা।

সানডে টাইমস আরও জানিয়েছে, হাসিনার প্রতিনিধিরা আইনজীবী ক্লার্ক-উইলিয়ামসের কাছে দাবি করেন, প্রতিবেদনে অনেক অপূর্ণ তথ্য রয়েছে। তা সত্ত্বেও এটি হাসিনার মানসম্মানকে ক্ষুন্ন করেছে। ওই সময় আলজাজিরা ও বার্গম্যানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা নিয়ে আলোচনা হয় তাদের। মামলাটি জেনারেল আজিজ, নাকি বাংলাদেশ সরকার করবে সেটি নিয়েও কথাবার্তা হয়। এমনকি অবসরপ্রাপ্ত কোনো সেনা কর্মকর্তাকে দিয়ে মানহানির মামলা করানোর ব্যাপারেও কথা হয় তাদের।

ব্যারিস্টার ব্রাউনি সানডে টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন, তিনি প্রাথমিকভাবে মামলার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে যুক্তরাজ্যের আদালতে মামলা করতে চাইলেও শেখ হাসিনা সরকার এটি আর করেনি বলে জানিয়েছেন তিনি। এর পরিবর্তে ইউটিউব ও ফেসবুকক থেকে তথ্যচিত্রটি সরাতে তৎপর হয় তারা।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্লাস্টিক দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার

ঠাকুরগাঁও হরিপুরে ১৭২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই

গোপালগঞ্জে ট্রাকচাপায় সাইকেল আরোহী নিহত

মানিকগঞ্জে মাদরাসা শিক্ষিকার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার

চকবাজারে বাসায় ঢুকে নারীসহ দুইজনকে চোরের ছুরিকাঘাত, যুবক আটক

শেখ হাসিনা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালালে ভারতকে দায় নিতে হবে : নাহিদ