জিয়া ইতিহাসের এক অনন্য নাম
বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশে উদিত হয়েছিল একটি উজ্জ্বল সোনালী নক্ষত্র, যার ক্ষণিকের আভায় দেশ নবরূপে উদ্ভাসিত হয়েছিল। উদ্দাম প্রাণশক্তি, নবতর উদ্দীপনা আর মহামঙ্গলের প্রেক্ষাপটে অর্থাৎ একাত্তরের তরঙ্গে যে কন্ঠটি বাংলাদেশের মানুষকে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে উদ্দীপ্ত করে তোলে, সেই কন্ঠই ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারিতে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি গ্রামের একটি কক্ষে তাঁর মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রথম যে কন্ঠধ্বনি উচ্চারিত হয় তাতেই অনুরণিত হয়েছিল স্বাধীনতার ধ্বনি।
যা সে দিনের সেই নবজাতকের উত্তোলিত মুষ্টিবদ্ধ হাত ও পৃথিবীর আলোবাতাস পেয়ে সর্বপ্রথম উচ্চকিত কন্ঠধ্বনি শুনে কেউ তাঁর মর্মকথা বুঝতে পারেননি। বুঝছেন ৩৫ বছর পর। বুঝেছেন বাগবাড়ির মানুষ। বাংলাদেশের মানুষ- দুনিয়ার মানুষ। অর্থাৎ একাত্তরের মার্চে বেতার তরঙ্গে যখন ভেসে আসে “আমি মেজর জিয়া বলছি” স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণের ঘোষণা যা মুক্তিপাগল মানুষকে হানাদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে অস্ত্র ধরার সাহস জুগিয়েছিল। যার কন্ঠের আহবান এদেশের মানুষকে একটি নতুন মানচিত্র ও পতাকা অর্জনে সফল লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
সেই কন্ঠই দুনিয়ার বুকে সর্বপ্রথম বাগবাড়ির ঐতিহ্যবাহী তালুকদারবাড়ির ওই কক্ষে স্বাধীনতার জন্য চিৎকার দিয়ে ওঠে। তাঁর সেদিনের সেই চিৎকারের মর্মকথা, ভাষা কারোপক্ষে বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। কিন্তু স্রষ্টার রহস্যের সৃষ্টির মধ্যে ওই নবজাতকের কন্ঠধ্বনিতে স্বাধীনতার ঘোষণাই উচ্চারিত হয়েছিল। যদি তাই না হবে এবং স্রষ্টার ইচ্ছা ও সময়ের পরিক্রমায় ’৭১ এর মার্চে চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র হতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাটি করে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, বাগবাড়িতে ভূমিষ্ঠ হওয়া জিয়াই জন্মলগ্নে সুতীব্র চিৎকার করে জানিয়ে দিয়েছিলেন “আমিই এই বাংলাদেশকে এদেশের মানুষের জন্য স্বাধীন সার্বভৌম এবং বাসোপযোগী করে যাব”। নয়মাস মুক্তিযুদ্ধ হলো। দেশ স্বাধীন হলো।
দেশের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটলো না। স্বাধীনতার মূল্যবোধ যত্রতত্র লুন্ঠিত হলো। ক্ষুধা-দারিদ্রের করাল গ্রাসে লাশ পড়ে থাকলো সর্বত্র। গণতন্ত্রের কবর রচিত হলো। সেনাবাহিনীকে পঙ্গু করার চক্রান্ত চললো। দেশ এক বিক্ষুদ্ধ পরিস্থিতির মুখোমুখি। দেশের সবস্তরের মানুষ নেতৃত্ব শূন্য, দিকনিদেশনাহীন, কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছিল। সামরিক অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানে দেশ এক চরম নৈরাজ্যকর অবস্থায় চলে যায়। উপ-সেনাপ্রধান হিসেবে জিয়া ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে বন্দি হন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর সিপাহী-জনতার মহান বিপ্লব জিয়াকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসে ক্ষমতার দৃশ্যপটে। সেই নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণ করতে জিয়া কাঁধে তুলে নেন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। শুরু হয় জিয়ার আরেক কঠিন রাজনৈতিক জীবন। চরম বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্য থেকে রাষ্ট্রকে তুলে আনার কঠিন দায়িত্বটি অর্পিত হয় জিয়ার কাঁধে।
মানুষ হয় শঙ্কামুক্ত, কেটে যায় মানুষের অনিশ্চয়তা, মানুষ ফিরে পায় শক্তি, সাহস ও অনুপ্রেরণা। ইতিহাসের অমোঘ প্রয়োজনে, ঘটনা বিবর্তনে এমন এক রাজনৈতিক পরিমন্ডলে তিনি প্রবেশ করেছিলেন যখন প্রচলিত রাজনীতি যা অন্যান্য রাজনীতিকরা জনগণের জন্যে, দেশের জন্যে-যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার কথা বলতেন বা বলেছেন তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন-জনগণ পেশাদার রাজনীতিকদের কাছে শুধুমাত্র শোষণের শিকার হয়, জনগণের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না।
ঔপনিবেশিক কাঠামোর কোন পরিবর্তন না হওয়ায় জনগণ শুধু অতীতের রাজনীতি ও রাজনীতিকদের শোষণের মৃগয়া ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। তিনি এ অবস্থা থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে চাইলেন, ফলে রাজনীতিকে তিনি শহর থেকে গ্রামে বিস্তার ঘটালেন। সে কারণে প্রেসিডেন্ট জিয়া এবং বিএনপির রাজনীতি ভিন্নপ্রেক্ষিত নিয়ে এসেছে। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে, কারণ বিএনপি গণমানুষের দল। এই দলে যারা সরাসরি জড়িত এবং বিএনপিকে যারা সমর্থন করে তারা প্রকৃত দেশপ্রেমিক।
আরও পড়ুনবিএনপির বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে আওয়ামী লীগ এবং তাদের সুবিধাভোগী মিডিয়া যে সকল প্রপাকান্ডা ছড়িয়েছে তা ছিলো ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যার কোনটারই প্রমাণ করতে পারেনি। ৭২-৭৫ পর্যন্ত শেখ মুজিবের দুঃশাসন ছিল লুট-পাট, রাহাজানি, চুরি-ডাকাতি, দুর্ভিক্ষ, ধর্ষণ, মানুষ খুন এবং বিরোধীমত দমন। যা ফেরাউন হাসিনার দুঃশাসনের হুবহু শাসনব্যবস্থা। যারা সরাসরি আওয়ামী লীগ করতো এবং যারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করতো তাদের অধিকাংশের হুস ফিরেছে,তারা আওয়ামী লীগকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখা শুরু করেছে।
মানুষের ক্ষোভ এমন পর্যায়ে গেছে যে আওয়ামী দলীয় কার্যালয়গুলো বতর্মানে গণশৌচাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিএনপির উচিত কঠোর হস্তে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন বিএনপির মূলনীতি হওয়া,সুযোগ সন্ধানীদেরকে চিহিৃত করতে হবে এবং অতি উৎসাহীদের লাগাম টেনে ধরতে হবে,অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে,সেই সাথে হায়েনা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন প্রজেক্টে নিয়ে বিএনপির যে সকল নেতা জড়িত তাদের দৌড়াত্ব থামাতে হবে। প্রেসিডেন্ট জিয়ার অসমাপ্ত কর্মসূচি বাস্তবায়নে আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বদ্বপরিকর। দেশনায়ক তারেক রহমানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় জাতি এগিয়ে যাবে এক নব উদ্দীপনায়।
মাহ্ফুজুর রহমান রাজ্
লেখক : সাংবাদিক-প্রাবন্ধিক
mahfuzurbogra@yahoo.com
01711-890495
মন্তব্য করুন