বগুড়া সারিয়াকান্দিতে ২৬ মাস ধরে বেতন ভাতা পাচ্ছেন না গ্রাম পুলিশ সদস্যরা
সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি : গত ২৬ মাস ধরে হাজিরা ভাতা, ১২ মাস ধরে ইউনিয়ন পরিষদের বেতন এবং উৎসব ভাতা পাচ্ছেন না সারিয়াকান্দির গ্রাম পুলিশের সদস্যরা। বেতনের দাবিতে দলবেঁধে তারা ঘুরছেন প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে স্ত্রী-সন্তান এবং স্বজনদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
আজ মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলা চত্বরে দেখা হয় অর্ধশত গ্রাম পুলিশের সাথে। তারা জানান, বেতনের দাবিতে বগুড়া জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলতে এসেছেন। উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল কাজলা ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ অরুন কুমারের স্ত্রী বুলবুলি রাণি জানান, স্বামীর স্বল্প আয়ের জন্য তার সংসার না চলায় তিনি গ্রাম পুলিশে যোগ দিয়েছেন। প্রতিদিন তিনি ইউনিয়ন পরিষদের তার দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু গত ২৬ মাস ধরে তিনি প্রতি মাসের হাজিরা ভাতা পাচ্ছেন না।
অথচ তিনি দুর্গম চরাঞ্চল থেকে এসে অনেক টাকা নৌকা ভাড়া দিয়ে থানায় নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের বেতনও তিনি গত ১২ মাস ধরে পাচ্ছেন না। ফলে অনাহারে অর্ধাহারে তার পরিবারের সদস্যদের জীবন কোনমতে টিকে আছে। টাকার অভাবে তার ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারছেন না। কথাগুলো বলতে বলতে কাদতে থাকেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার যমুনা নদী পাড়ের ১২ ইউনিয়ন পরিষদের ১১৮ জন গ্রাম পুলিশ সদস্য আছে। তারা সবাই এখন বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ইউনিয়ন পরিষদ ও গ্রাম পুলিশদের সূত্রে জানা যায়, গ্রাম পুলিশরা প্রতি মাসের জন্য ৬৫০০ টাকা করে বেতন-ভাতা পান। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে ৩২৫০ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৩২৫০ টাকা পান।
এ ছাড়া প্রতি মঙ্গলবারে সারিয়াকান্দি থানায় তাদের হাজিরা দিয়ে নিজ ইউনিয়নের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রতিবেদন দিতে হয়। এর জন্য প্রতি মাসে ১২০০ টাকা করে হাজিরা ভাতা পেয়ে থাকেন গ্রাম পুলিশ সদস্যরা। তারা এখন শুধু সরকারি অংশের ৩২৫০ টাকা পাচ্ছেন।
আরও পড়ুনকর্নিবাড়ী ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ আফজাল হোসেন জানান, পরিষদের দলিল খরচের ১ শতাংশ টাকা থেকে তাদের বেতন ভাতা দেয়ার কথা। কিছু তারা পেয়েছেন। বাকিগুলো কবে পাবেন তা তারা জানেন না। তাছাড়া হাজিরা ভাতার বিষয়টি তাদের জন্য বেশি কষ্টকর। কারণ সপ্তাহে একদিন থানায় আসা-যাওয়া করতে ১০০-১৫০ টাকা খরচ হয়।
চালুয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জানান, গ্রাম পুলিশদের পরিষদের অংশের বেতন কিছু পরিশোধ করা হয়েছে। পরিষদের আয় থেকে তাদের এই বেতন দেয়া হয়। কিন্তু ৪০ বছর ধরে এই ইউনিয়নের কেউ ট্যাক্স দেন না। আয় না হওয়ায় তাদের বেতন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তারপরেও কিছু কিছু করে বেতন দেয়া হচ্ছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহারিয়ার রহমান বলেন, গ্রাম পুলিশদের সরকারি অংশের বেতন চালু রয়েছে। বাকি বেতন পরিষদের আয় থেকে দেয়া হয়। কিছু টাকা জমা হয়েছে সেখান থেকে তারা ৩ মাসের বেতন পাবে। আমরা ইউনিয়ন পরিষদকে চাপ দিচ্ছি, বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য। এ ছাড়া সরকারের কাছে আমরা চিঠি দিচ্ছি বেতন-ভাতার বিষয়ে। আর হাজিরা ভাতা সরকারি বরাদ্দ পেলে তাদেরকে দিয়ে দিব।
মন্তব্য করুন