ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন স্বস্তির হোক
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে গতকাল সোমবার শপথ গ্রহণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয় মার্কিন পার্লামেন্টের অভ্যন্তরে ক্যাপিটল বোটান্ডা হলে। গতকাল সোমবার শপথ গ্রহণের পর দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন ট্রাম্প। কারণ মার্কিন রাজনীতিতে একবার হোয়াইট হাউস ছেড়ে গেলে চার বছর পর ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করা হয়। তবে এই ধারণা পাল্টে তিনি আবারও প্রেসিডেন্ট হলেন।
এর আগে ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন ট্রাম্প। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএনের তথ্য অনুযায়ী স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ট্রাম্পকে শপথ বাক্য পাঠ করান মার্কিন প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। এরপর দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবার ভাষণ দেন ট্রাম্প। এবারের শপথ অনুষ্ঠান নানা দিক থেকে তাৎপর্যময় বলে বিবেচিত।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান এবার ইনডোরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তীব্র ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ৪০ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের স্থান পরিবর্তন করা হয়। মার্কিন আবহাওয়া অফিসের মতে, সোমবার শৈত্য প্রবাহের কবলে পড়ে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি। তাপমাত্রা নেমে আসে মাইনাস ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অনুষ্ঠানে বিশ্বের অনেক সরকার প্রধান ও রাজনীতিবিদ উপস্থিত ছিলেন।
এদের মধ্যে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ার মাইলি, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিয়া ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের প্রতিনিধি হিসেবে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেং-এর। টেসলার ইলন মাস্ক, মেটার মার্ক জাকারবার্গ, অ্যামাজনের জেফ বেজোস, অ্যাপলের টিম কুক, টিকটকের শু চিউ এবং গুগলের সুন্দর পিচাইয়ের মতো শিল্পপতিরা ছিলেন ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে। ২০২১ সালে জো বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে নজির বিহীনভাবে উপস্থিত ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু সেই বাইডেনই শুধু নন, ট্রাম্পের শপথ প্রত্যক্ষ করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং বারাক ওবামাও।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন, পেনসিভ্যানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক। তিনি মূলত ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক। এক সময় টেলিভিশনে রিয়ালিটি শো উপস্থাপনা করেছেন। রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি জয়ী হয়েছেন। তার কাছে পরাস্ত হয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
যুক্তরাষ্ট্রে এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন বিভিন্ন কারণে বিশ্ব অস্থির। বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন। দুটি ক্ষেত্রেই পক্ষ-প্রতিপক্ষ অনেক দেশ এবং নানা গোষ্ঠী জড়িত, সুতরাং এর প্রভাব পড়েছে বিশ্ব জুড়ে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশগত সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রান্তে।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধের অঙ্গীকার করে ভোট চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, তিনি যুদ্ধ করতে যাচ্ছেন না, যুদ্ধ বন্ধ করতে যাচ্ছেন। এতে অনেকেই আশাবাদী হয়েছিলেন যে, ইউক্রেন ও গাজায় যুদ্ধ বন্ধ হবে।
আরও পড়ুনতিনি হোয়াইট হাউসে বসার আগে অবশ্য গাজা নিয়ে একটি যুদ্ধ বিরতি চুক্তি হয়েছে এবং তা কার্যকরও হয়েছে। যদিও সেটার ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ সংশয় রয়েছে। আর ইউক্রেন যুদ্ধ আদৌ বন্ধ করতে পারবেন কিনা, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন।
তবে দিন যত যাচ্ছে, নতুন রূপে আবির্ভূত হচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি কানাডা, গ্রিনল্যান্ড ও পানামা খাল নিয়ে ট্রাম্প যে সব মন্তব্য করছেন, তাতে অনেকের মনে সংশয় দেখা দিচ্ছে, বিশ্বে নতুন করে উত্তেজনা ছড়াবে। গ্রিনল্যান্ডকে কেন্দ্র করে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা বাড়ছে। সংঘাতের ঝুঁকি আছে পানামা খাল দখল নিয়েও।
এসব বিষয়ে এরই মধ্যে তাকে কেন্দ্র করে বিশ্ব জুড়ে উত্তেজনার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কানাডা নিয়ে তার মন্তব্য দেশটির স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি স্বরূপ বলে অনেকে অভিহিত করেছেন। নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, আগামী চার বছর যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা কেমন হতে যাচ্ছে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কর্মকান্ড তারই ইঙ্গিত রয়েছে। ট্রাম্প ফিরছেন, সেই সঙ্গে বিশৃঙ্খলাও ফিরছে বলে অনেক আমেরিকান বিশ্বাস করেন।
অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়নে তার প্রশাসন প্রথম দিন থেকেই তৎপরতা শুরু করবে বলে সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে। ট্রাম্প একজন চরম রক্ষণশীল বা ডানপন্থী হিসেবে যেমন পরিচিত তেমনি একজন পাকা ব্যবসায়ীও শপথ গ্রহণের আগেই আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত চীনা টিকটক কোম্পানিকে তার ব্যক্তি উদ্যোগে আবারও চালু করে দিয়েছেন।
আগামী দিনগুলো বলে দেবে- ট্রাম্প ব্যবসা নিয়ে রাজনীতি করবেন না রাজনীতি দিয়ে ব্যবসা করবেন। তবে ভারসাম্যের মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি আমেরিকা বা বিশ্ব রাজনীতির জন্য স্বস্তি এনে দেবে বলেই আমরা মনে করি।
মন্তব্য করুন