ভিডিও বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫

নাটোরের গুরুদাসপুরে এক বছরে ৪৮ জনের আত্মহত্যা

পদ ছাড়ার কারণ জানালেন সারজিস

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি : নাটোরের গুরুদাসপুরে আত্মহত্যা বাড়ছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ৪৮ জন নারী-পুরুষ,কিশোর-কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। থানায় অপমৃত্যুর মামলার বাহিরেও বিভিন্ন স্থানে আরও আত্মহত্যায় ঘটনা ঘটেছে। আত্মহননকারী ৪৮ জনের মধ্যে ২৯ জন পুরুষ ও ১৯ জন নারী।

আত্মহননে মৃত্যু হওয়া পরিবারগুলোতে গিয়ে জানা যায়, দাম্পত্য কলহ, পরকীয়া, প্রেম, সংসারে অভাব-অনটন, অসুস্থতা, মানসিক চাপ, কীটনাশক জাতীয় বিষ সহজলভ্য হওয়া, যুবক-যুবতীদের পছন্দমতো বিয়ে না হওয়া ও আত্মধারণা বা আত্মবিশ্লেষণের ঘাটতিসহ মানষিক স্বাস্থ্যে নজর না থাকার কারণে বাড়ছে আত্মহত্যার ঘটনা।

গত ডিসেম্বর মাসে উপজেলার বিলশা গ্রামের কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী নুপুর খাতুন (২০) নিজ ঘরে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে। পরিবারের সদস্যরা জানান,‘নুপুর কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে এসে নিজ ঘরে শুয়ে ছিলো। পরিবারের কারো সাথে কোন বিবাদ ছিলোনা। রাতের বেলা গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে। হয়তো প্রেমের কোন সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটেছিলো।’

প্রেমের সম্পর্কে বিচ্ছেদ হওয়ায় অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাইম হোসেন গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে। স্ত্রীর ওপর অভিমান করে আত্মহত্যা করে ২৪ বছরের যুবক নিরব হোসেন। বাবা-মায়ের ওপর অভিমান করে কীটনাশক জাতীয় গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করে কিশোরী রুমি খাতুন। এভাবেই বিভিন্ন কারনে বাকিদেরও আত্মহত্যায় মৃত্যু হয়েছে।

সর্বশেষ গত ১৫ জানুয়ারি উপজেলার খুবজীপুর চরপিপলা ও পিপলা গ্রামে আত্মহত্যা করে প্রবাসীর স্ত্রী ও কলেজ শিক্ষার্থী। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পিপলা গ্রামের আব্দুল আজিজের মেয়ের সঙ্গে প্রায় ৮ বছর আগে পার্শ্ববর্তী গ্রাম চরপিপলার বকুল জানের ছেলে মালায়েশিয়াপ্রবাসী মোক্তার হোসেনের মোবাইল ফোনে বিয়ে হয়। এর পর মোক্তার বিভিন্ন সময় দেশে আসেন।

আরও পড়ুন

তবে তাদের কোনো সন্তান ছিলো না। পারিবারিক অশান্তি নিয়ে মানষিক চাপে থাকায় শ্বশুর বাড়িতে গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন আতিয়াকে তাকে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এদিকে আতিয়া খাতুন গ্যাস ট্যাবলেট খাওয়ার পর তার ছোট ভাইয়ের বন্ধু রাকিবুল তাদের বাড়িতে ছিল। সকাল ৮টার দিকে নিজ বাড়িতে ফিরে ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে রাকিবুলও আত্মহত্যা করেন।

আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে গুরুদাসপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা আফরোজ বলেন,‘ আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে ইতিমধ্যেই তিনি স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদরাসা’র প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক সেমিনারের আয়োজন করা হবে প্রতিষ্ঠানগুলোতে। সচেতনতার মাধ্যমেও আত্মহত্যার ঘটনা কমানো যেতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালমা বেগম বলেন,‘ গ্রামঞ্চলে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখাযায়। কারন অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নজর কম দেয়। প্রতিটি অভিভাবককে সন্তানদের মানষিক স্বাস্থ্যের ওপর নজর দিতে হবে।

সফলতা যেমন সকলে মিলে উদযাপন করে তেমনি ব্যর্থতাকেও সামাল দিতে হবে সকলে মিলেই। তাছাড়াও বাবা-মায়ের অতিরিক্ত শাসন বা অবহেলার কারনে এমনটি হতে পারে। তাই এসকল বিষয়ে অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই সচেতন হতে হবে।’

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জানুয়ারিতে বিদায় নিতে যাচ্ছে শীত

পাবনার সুজানগরে পদ্মার কোল শুকিয়ে যাওয়ায় মৎস্যজীবীরা বেকার

রংপুরের বদরগঞ্জে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও অর্জিত হয়নি

ট্রাম্পের সঙ্গে মোদীর বৈঠক আয়োজনে মরিয়া ভারত

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় র‌্যাবের অভিযানে ৯৮ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার ১

সর্বোচ্চ এবং  সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে