কে আন্তরিক বেশি উপলব্ধি করুন
জীবন যে কতটুকু মূল্যবান তা মৃত্যুর সময় একজন মানব জীবন হারানোর মূল্যটা বুঝতে পারে। আমরা মৃত্যু যাত্রীর যে সব স্বজন সেই মৃত্যু পথযাত্রীর পাশে থাকি মৃত্যুর সময় তখন তার পারিপার্শ্বিক আচরণ দেখে অনুমান করি যে, সে বাঁচার জন্য কতোই না চেষ্টা করে।
আসলে জীবনে আমি এটাও উপলব্ধি করলাম বাস্তবিক অর্থে পৃথিবীতে বাঁচতে গেলে আমার প্রতি সুবিচারের মাত্র দুজন ব্যক্তি পাবো। আর সুবিচার করার লোক মাত্রই হচ্ছেন বাবা ও মা। বাকি সবাই সুবিচার আমার প্রতি নাও করতে পারেন। আসলে এটাই চির সত্য, আজকে যে তোমাকে খুবই ভালোবাসে আগামীকাল সে নাও ভালোবাসতে পারে। আজকে যাকে আপন মনে হচ্ছে আগামীকাল তাকে পর মনে হতে পারে।
আজকে আমার পাশে যে ঘুরঘুর করছে আগামীকাল সে নাও করতে পারে। পৃথিবীতে সবার স্বার্থ থাকলেও একমাত্র নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে পারে, আমার প্রতি সুবিচার করতে পারে একমাত্র বাবা আর মা। আপনাদের মনে হতে পারে ব্যক্তিগত খুবই তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। আসলে কিন্তু তা নয়। সময়ের সাথে সাথে আপনাদেরও একই উপলব্ধি হবে। তাই বলে আমি কারোর ওপর অসন্তোষ পুষে রাখি না। কারণ আমার প্রতি সুবিচারের দায়িত্ব অন্য কারোর দায়িত্বের মধ্যে নাও পড়তে পারে। একমাত্র সুবিচারের দায়িত্ব মা-বাবার প্রতি প্রত্যাশা করা যেতে পারে। অন্য কারোর প্রতি করলে দুঃখ বাড়বে।
তবে যারা আমার প্রতি ভালো ব্যবহার করছেন তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। তন্মধ্যে জ্ঞানচক্ষুর দ্বারা উপলব্ধি করতে হবে যে তাদের ভালোবাসায় হয়তো কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কিন্তু মা ও বাবা উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে ভালোবাসতে পারে। প্রকৃত বন্ধু পাওয়া আজকের দিনে খুবই দুর্লভ। আজকে যাকে বন্ধু বলে মনে হচ্ছে, দুদিন পরে তাকে শত্রু বলে মনে হতে পারে। কিন্তু মা ও বাবা চিরদিনের বন্ধু। কখনো শত্রু মনে হয় না। আমার জীবনে কেউ অপরিহার্য নয়।
যখন এই সত্য উপলব্ধি করতে পারবে, সেই দিন আর কোনো দুঃখ থাকবে না। একমাত্র মা ও বাবা আমার জীবনে অপরিহার্য বলে দৃঢ়ভাবে হৃদয়ে প্রতিস্থাপিত হবে। একটু গভীরভাবে ভেবে দেখুন- যখন আপনি মহাবিপদে পড়বেন তখন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, কেউ আপনার পাশে থাকবে না। একমাত্র মা ও বাবা শত মহাবিপদের মাঝেও আপনাদেরকে ছেড়ে চলে যাবে না।
তাই জীবনকে মূল্যায়ন করতে শিখুন উপলব্ধির মাধ্যমে। কিসের উপলব্ধি? বিবেক। পৃথিবীতে ক্ষণস্থায়ী অনুভূতি হল প্রেম-ভালোবাসা। অথচ সেই প্রেম- ভালোবাসায় আমাদের জীবনটা শেষ করে ফেলি। উপলব্ধি করতে পারবেন প্রেম- ভালোবাসা বিবর্ণ।
অন্যকে আপনি ভালোবাসতে পারেন, মর্যাদা দিতে পারেন কিন্তু অন্যরা যে আপনাকে ভালোবাসবে, মর্যাদা দেবে সেই প্রত্যাশা করলে দুঃখ বেড়ে যাবে। একমাত্র বাবা-মাকে ছাড়া। দুনিয়াতে বিনামূল্যে বা ফ্রিতে কোনো কিছু পাওয়া যায় না। বিনামূল্যে পাওয়ার পিছনে না ছুটে কঠোর পরিশ্রম করলে হাতের নাগালে অনেক কিছু পাওয়া যায়। লটারিতে টিকিট কিনছি ভাগ্য বদলানোর জন্য। এইভাবে ভাগ্য বদলানো যাবে না। ফকির হয়ে যাবেন। কেননা, একটু উপলব্ধি করুন, পৃথিবীতে কোনো ব্যবসা নিজেকে ক্ষতি করে দেউলিয়া হয় না। আমরাই দেউলিয়া হয়ে যাই।
আরও পড়ুনমহামানব হতে গেলে পরিশ্রমের মাধ্যমে হন। ফাঁকি দিয়ে মহামানব হওয়ার চেষ্টা করলে ভবিষ্যতে এক একজন গরু, গাধা ছাড়া কিছুই হবেন না। এমন কি মহাদানব! তাই জীবন যুদ্ধে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে উপলব্ধি করুন সুন্দর ও অসুন্দরের মহিমা। ভালো ও মন্দের মহিমা। ভালোবাসার পাগলামি সবার মধ্যে আছে, যদিও ভালোবাসতে হয় আগে মা -বাবা, তারপর পরিবার, তারপর প্রতিবেশী, তারপর গুরুজন ও ছোটদের, তারপর সমাজ, তারপর দেশকে ভালোবাসতে শিখুন।
এখন ভালোবাসা ভন্ডামিতে রূপান্তরিত হয়েছে। যে নিজের বাবা- মাকে ভালোবাসতে পারে না, নিজের পরিবারকে ভালোবাসতে পারে না, তার মধ্যে দেশের প্রতি ভালোবাসা কী করে আসা সম্ভব? জন্মেই তো আর কেউ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয় না, ভালোবাসার ক্ষেত্রেও এই একই উপলব্ধি।
আরিফ আনজুম
লেখক : প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক
শিবগঞ্জ, বগুড়া।
০১৫৮১-৪৯৭২৭৬
মন্তব্য করুন