মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে
সড়কে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। নানা ধরনের উদ্যোগেও সড়ক নিরাপদ করা সম্ভব হচ্ছে না। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সড়ক নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দেশের সর্বত্রই অপরিপক্ক লোকের হাতে মোটরসাইকেল চলে গেছে। ফলে ৪০ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছেন।
দেশে ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১১ হাজার ৮৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০২০ সালে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪৬৩। পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০২৪ সালে মৃত্যু বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৬০৯ জন। অর্থাৎ পাঁচ বছরে সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেড়েছে প্রায় ৭৮ শতাংশ। আর মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়েছে ১৭ লাখ ৬৬ হাজার ৩১৩টি।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে গণমাধ্যম এ খবর দিয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) মোটরযানের নিবন্ধন সংক্রান্ত নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২০ সালে সারা দেশে ২৮ লাখ ১৪ হাজার ৬৩৭টি নিবন্ধিত মোটরসাইকেল ছিল। ২০২৪ সালের শেষে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ৯৫০টিতে। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে নিবন্ধিত মোটরসাইকেল বেড়েছে প্রায় ৬৩ শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সড়কে মোটরসাইকেলের চলাচল সুপরিকল্পিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দুর্ঘটনা কমানো কঠিন হবে। আর যে হারে মোটরসাইকেল বাড়ছে, সেটিও নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত মোট যানের অর্ধেকের বেশি মোটরসাইকেল এমন পরিসংখ্যান কখনই ভালো বার্তা দিতে পারে না। দেশে মোটর মোটরযানের ৭১ শতাংশ মোটরসাইকেল।
মোটরসাইকেল চালকদের বিরাট অংশ কিশোর ও যুবক। এদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা প্রবল। এরা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেরা দুর্ঘটনায় পড়ছে এবং অন্যদের আক্রান্ত করছে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার একটি ব্যাপক অংশ ঘটছে বাস ও পণ্যবাহী ভারী যানবাহনের ধাক্কা বা চাপায়। এসব দ্রুতগতির যানবাহন চালকদের বেশির ভাগই অসুস্থ ও অদক্ষ।
আরও পড়ুনএদের বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানোর কারণে দক্ষ মোটরসাইকেল চালকরাও দুর্ঘটনার শিকার হন। মোটরসাইকেল চার চাকার যানবাহনের তুলনায় ৩০ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু দেশে গণপরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত ও সহজলভ্য না হওয়া এবং যানজটের কারণে মানুষ মোটরসাইকেল ব্যবহারে উৎসাহিত হচ্ছে এবং দুর্ঘটনা বাড়ছে। মোটরসাইকেলের চালকদের মান সম্পন্ন হেলমেট ব্যবহারের আগ্রহ কম। অথচ মান সম্পন্ন হেলমেট ৪৮ শতাংশ মৃত্যু ঝুঁকি কমায়।
এটা সত্য, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারণ কিশোর-যুবকদের বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানোর অতি উচ্চগতির মোটরসাইকেল ক্রয়ে সহজলভ্যতা ও চালনায় বাধাহীন সংস্কৃতি; মোটরযান চালকদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির শিথিলতা, বাস-ট্রাক-পিকআপ-প্রাইভেটকার মাইক্রোবাসসহ দ্রুতগতির যানবাহনের বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা ও অস্থিরতা, ইজিবাইক-সিএনজি-নসিমন-ভটভটি ইত্যাদি স্বল্পগতির যানবাহন অদক্ষ হাতে চালানো, সড়ক-মহাসড়কে ডিভাইডার না থাকা, কিশোর-যুবকদের গতির প্রতি আকৃষ্ট করতে মোটরসাইকেলের বিজ্ঞাপনের উত্তেজনাকর ভাষা-ভঙ্গি, সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা না থাকা, পারিবারিকভাবে সন্তানদের বেপরোয়া আচরণকে প্রশ্রয় দেওয়া এবং দেশে কলুষিত রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতায় কিশোর-যুবকদের মধ্যে বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর সংস্কৃতি গড়ে ওঠা ইত্যাদি।
তারা এতটাই বেপরোয়া যে, রাস্তায় যানজট থাকলে ফুটপাতে মোটরসাইকেল উঠিয়ে দেয়। ফলে মানুষ চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। অনেক সময় তারা ট্রাফিক সিগন্যালও মানে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে যাতায়াতজনিত দুর্ঘটনা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনাগুলো কেন হচ্ছে, কারা এর জন্য দায়ী তা শনাক্ত করে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনোযোগ ও তৎপরতা চোখে পড়ছে না।
দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণেই এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণেই এ দেশের মানুষ আপনজন হারিয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছে আর নি:স্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। আমরা মনে করি, সড়কে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগই কেবল পারে সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা কমাতে।
মন্তব্য করুন