বাঁশের ডোলে বেড়ার শেখপাড়া মহল্লার নারীরা স্বাবলম্বী
আবুল কালাম আজাদ, বেড়া (পাবনা) ঃ ধান রাখার পুরনো ও আদি উপকরণগুলোর একটি হচ্ছে ডোল। আর এই ডোল বুনে (তৈরি করে) সচ্ছল হয়েছেন বেড়া পৌরসভার শেখপাড়া মহল্ল¬ার প্রায় ৮০ ভাগ নারী। আমন মৌসুমে ডোলের চাহিদা বেশি থাকে বলে শেখপাড়ার নারীরা এখন কৃষকদের জন্য দেদারসে ডোল তৈরি করছেন।
শেখপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়সের নারীরা মিলে ডোল বুনছেন। কেউ বাঁশ কাটছেন, কেউ বেতি বা শলা চাঁছছেন আবার কেউবা ব্যস্ত ডোল বুনা ও বাঁধার কাজে। ঘরের বারান্দা, উঠান, গাছের ছায়ায় যে যেখানে পারেন সেখানে বসেই এই কাজ করছেন। শেখপাড়ার ২শ’ পরিবারের মধ্যে দেড় শতাধিক পরিবারের নারীরা জড়িত এই কাজে। ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে চলছে এই ডোল বুনার কাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জমির ধান শুকিয়ে কৃষকেরা ডোলে রাখতেই বেশি পছন্দ করেন। বেড়া উপজেলার ডোলের বেশিরভাগ চাহিদা পূরণ করে থাকেন শেখপাড়া মহল্লার নারীরা। সারা বছর তারা বাঁশের চাটাইসহ অন্যান্য বাঁশজাত সামগ্রী তৈরি করলেও বোরো ও আমন মৌসুমে তারা ব্যস্ত থাকেন ডোল তৈরির কাজে। ধানকাটা শুরু হওয়ার অন্তত মাস দুয়েক আগে থেকেই তারা ডোল তৈরির কাজ শুরু করে দেন। ধানকাটা শুরু হলে তো কথাই নেই। নাওয়া-খাওয়া ভুলে তারা সেটি তৈরিতে লেগে পড়েন।
শেখপাড়ার নারীরা জানান, ডোলসহ বাঁশজাত সামগ্রীগুলো তৈরির কাজ মূলত নারীরাই করে থাকেন। পুরুষেরা বাঁশ কেনা ও বানানো সামগ্রীগুলো বিক্রিতে সহায়তা করেন। সারা বছর বাঁশজাত অন্যান্য সামগ্রী বানিয়ে শেখপাড়ার নারীরা যা আয় করে থাকেন বোরো ও আমন মৌসুমে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি তারা আয় করেন। ডোল তৈরি করে শেখপাড়ার অনেক নারীই এখন স্বাবলম্বী।
কাজের ফাঁকে শেখপাড়া মহল্লার রোকেয়া খাতুন, ফুলমতি, সুমী খাতুন, কুলসুম বেগমসহ কয়েকজন জানান, এবার ধানের ফলন ভালো হওয়ায় ডোলের চাহিদা অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি। সংসারের সব কাজ করেও প্রত্যেকের প্রতিদিন গড়ে দুই-তিন শ টাকা আয় হয়।
আরও পড়ুনগ্রামের শিরিন খাতুন বলেন, ‘দূর-দূরান্তর থ্যাকে ডোলের ব্যাপারিরা আমাগরে মহল্লায় আইস্যা ডোল নিয়্যা যায়। ধানের মৌসুমে ডোলের কাম কইর্যা আমরা (নারীরা) যে টাকা জমাই তা দিয়্যা সারা বছর আমাগরে সুখেই কাটে।’ শেখপাড়ার নারীদের নিয়ে গড়া মৈত্রবাঁধা মহিলা সমবায় সমিতির সভাপতি শিখা রাহা বলেন, ‘শেখপাড়ার নারীরা অত্যন্ত পরিশ্রমী। এই পরিশ্রম দিয়ে তারা দরিদ্রতাকে জয় করতে শুরু করেছেন।
এখানকার বেশিরভাগ নারীই বাঁশজাত হস্তশিল্পের কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। বিশেষ করে ধানের মৌসুমে ডোল বানানোর কাজটি তাদের জন্য নিয়ে এসেছে সুখের স্বপ্ন। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার হাটগুলোতে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে ডোল। বেড়া পৌর এলাকার করমজা চতুরহাটের ডোল বিক্রেতা আলমাস শেখ বলেন, ‘এসব ডোল শেখপাড়া গিরামের মহিলাগরে হাতে তৈরি। আমরা (ব্যাপারিরা) ওহানে গিয়্যা বিভিন্ন সাইজের ডোল কিইন্যা আইন্যা বাজারে বেচি।
মন্তব্য করুন