খাদ্যে ভেজাল নাকি ভেজালে খাদ্য
![](https://dailykaratoa.com/public/images/2025-02/17_original_1738602940.jpg)
আমরা কী খাচ্ছি- এ প্রশ্ন আজ এক ধরনের আতঙ্কে পর্যবসিত হয়েছে। অবস্থাটা এমন- খাদ্যে ভেজাল নাকি ভেজালে খাদ্য, তা নিয়েও চলে উপহাস। মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অনেক অভিযান চলে। প্রতিটি অভিযানেই প্রচুর ভেজাল খাদ্যপণ্য বা অন্যান্য নকল-ভেজাল পণ্য ধরা পড়ে। জেল-জরিমানা হয়। কিন্তু জেল থেকে বের হয়ে এসেই আবার সেই ভেজাল নকলের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়া।
পত্র-পত্রিকায় দেখা যায় ভেজালকারীরা মহা উৎসাহে নেমে পড়ে ভেজাল খাদ্য তৈরিতে। খাদ্যে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত সব রাসায়নিক দ্রব্য, যেগুলো খেয়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ক্যান্সার, কিডনি ও লিভারের নানা দুরারোগ্য ব্যাধিতে।
সম্প্রতি জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা সর্বাধুনিক খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণাগারের পরীক্ষায়ও ভয়াবহ চিত্রের প্রতিফলন ঘটেছে। বাজারে প্রাপ্ত ৪০ শতাংশ খাদ্যেই রয়েছে বিপজ্জনক মাত্রায় ভেজাল ও বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য। ফলমূল, শাক সবজি, মাছ-মাংস, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, চাল, হলুদের গুঁড়া, লবণ- নিত্যদিনের প্রায় প্রতিটি খাবারেই রয়েছে ভেজাল। খাদ্যে যেসব বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়, এর মধ্যে রয়েছে বহু আগেই নিষিদ্ধ করা ডিডিটি থেকে শুরু করে ক্রোমিয়াম, আর্সেনিক, সিসা, ফরমালিন, অ্যালড্রিন, বেনজয়িক এসিড ইত্যাদি। এ অবস্থায় মানুষ কী খাবে কিভাবে বেঁচে থাকবে-তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে। অথচ ভেজাল নিরোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই বললেই চলে।
রসনাযুক্ত খাবারের প্রতি বাঙালি জনগোষ্ঠীর এক ধরনের পক্ষপাত রয়েছে। শুধু বাঙালি নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের রান্নায় মসলা ব্যবহারে আধিখ্যেতা থাকে। বিগত চারশ বছরে উপমহাদেশের মানুষ মসলার সঙ্গে তাদের খাদ্যভাসকে মিলিয়ে যা খেয়ে থাকে তা কিন্তু স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তারপরও দীর্ঘদিন ধরে অভ্যাসগত কারণে আমরা মসলাযুক্ত খাদ্যে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাতে এই জনগোষ্ঠীকে খুব যে একটি বিপাকে ফেলেছে তা কিন্তু নয়। বরং আমাদের খাদ্যকেত রসনাময় করে তোলা হয় সেই মসলা নিয়ে সম্প্রতি ভয়ঙ্কর সব প্রতিবেদন উঠে আসছে গণমাধ্যমে।
আরও পড়ুনআমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যে ভেজাল নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় হলে এর প্রতিকারের জন্য কর্তৃপক্ষ যদি কোনো কঠোর কার্যক্রম গ্রহণ না করে তাহলে দেশের মানুষ ভয়াবহ এক অস্তিত্ব সংকটে পতিত হবে। তাহলে আমাদের বর্তমান কি আগামী প্রজন্মের জন্য একটি ভঙ্গুর সমাজ রেখে যাবে। তারা যে নানাবিধ রোগ নিয়ে বেড়ে উঠবে তার দিব্য লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি। ইতোমধ্যে এ বিষয় নিয়ে গণমাধ্যম সোচ্চার হলেও যারা এই ভেজাল পণ্যের নির্মাতা, তারা বহাল তবিয়তে অবৈধ কর্মটি চালিয়ে যাচ্ছে।
আমরা বলতে চাই, একটি সুস্থ-সবল প্রজন্ম গঠনের ক্ষেত্রে ভেজালমুক্ত বাজার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। ফলে নিয়মিত মনিটরিং থেকে শুরু করে বাজার তদারকি ব্যবস্থা এগিয়ে নিতে হবে। খাদ্যে ভেজাল মেশানোর ভয়াবহতা অনুধাবন করে, সংশ্লিষ্টরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ইতিবাচক ফল আসবে বলেই আমরা মনে করি।
খাদ্যপণ্যে ভেজালের দৌরাত্ম্যকে একটি মানবিক বিপর্যয় ধরে শিগগিরই এর বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া জোরদার করা উচিত বলে মনে করছি। তা ছাড়াও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সরকারি সংস্থার জরিপেই জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টির যে চিত্র, তাতে তাদের করণীয় পদক্ষেপ মাদক নির্মূলের মতো সাঁড়াশি অভিযান হওয়া প্রয়োজন। না হলে খাদ্যে ভেজালের এই আগ্রাসন থেকে আমরা কেউ রক্ষা পাব না।
যেহেতু একটি রাষ্ট্রের জনগণের মৌলিক চাহিদার মধ্যে একটি হলো খাদ্য, সেহেতু খাদ্য নিরাপত্তার ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমরা চাই, মসলাসহ খাদ্যে ভেজাল প্রয়োগকারীদের কঠোর হাতে দমন করা হোক, যা আমাদের আগামীতে সুস্থ প্রজন্ম নির্মাণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
মন্তব্য করুন