সমুদ্র ভিত্তিক অর্থনীতি
সমুদ্র ভিত্তিক ব্লু-ইকোনমির বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য এখন অপেক্ষা দক্ষ জনবলের জন্য। ব্লু-ইকোনমি বা সমুদ্র অর্থনীতি হলো অর্থনীতির এমন একটি বিষয়, যেখানে সুনীল অর্থনীতির মূল উদ্দেশ্য হলো একটি দেশের সামুদ্রিক পরিবেশ কিংবা সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করা, দেশের সম্পদ বৃদ্ধি করা, সামাজিক পুঁজি সৃষ্টি করা, আয় বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি পরিবেশে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি করা। বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতির উপকরণগুলোর টেকসই উন্নয়নকে সমুন্নত করা এবং সামুদ্রিক সম্পদকে যথাযোগ্য ব্যবহার ও সরবরাহ করার মাধ্যমে দেশকে সমৃদ্ধের পথে এগিয়ে নেয়া সম্ভব।
পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ, মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রে বিরোধপূর্ণ ১৭ ব্লকের ১২টি এবং ভারতের কাছ থেকে দাবিকৃত ১০ ব্লকের সব কটিই এখন বাংলাদেশের। এসব ব্লক থেকে প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুনীল অর্থনীতির চার ক্ষেত্র যেমন তেল ও গ্যাস উত্তোলন, মৎস্য আহরণ, বন্দর সম্প্রসারণ ও পর্যটন খাতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করলে বাংলাদেশের পক্ষে ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২৯২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে মেরিটাইম শিক্ষা ও সুনীল অর্থনীতির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। মৎস্য সম্পদ ছাড়াও সামুদ্রিক প্রাণী, সামুদ্রিক আগাছা, লতা-গুল্মতেও ভরপুর বঙ্গোপসাগর। এসব আগাছা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বিভিন্ন রোগের ওষুধ তৈরি করা যায়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে সামুদ্রিক খাদ্য পণ্য রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
বঙ্গোপসাগরের তলদেশে ১৩টি স্থানে ইউরেনিয়াম ও থোরিয়াম সমৃদ্ধ বালুর সন্ধান পাওয়া গেছে যা সোনার চেয়েও দামি। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরে ইলমেনাইট, টাইটেনিয়াম অক্সাইড, রুটাইল, জিরকন, ম্যাগনেটাইট, কোবাল্টসহ অত্যন্ত মূল্যবান খনিজের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব সম্পদ সঠিক উপায়ে উত্তোলন করতে পারলে হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।
এটা বিবেচনায় রাখা দরকার, যেহেতু ব্লু-ইকোনমি হচ্ছে সমুদ্র সম্পদ নির্ভর অর্থনীতি অন্যদিকে, সামুদ্রিক সম্পদের এক বিশাল আধার হচ্ছে বঙ্গোপসাগর। সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে এই বিষয়টি সামনে এসেছে যে, সামুদ্রিক সম্পদ হতে পারে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম অর্থনীতি। ফলে এটি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে এটাও আমলে নেওয়া জরুরি।
আরও পড়ুনসমুদ্র বিজ্ঞানীরা বলছেন, মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমার মামলা আন্তর্জাতিক আদালতে নিষ্পত্তির পর এক দশক আগে বঙ্গোপসাগরে জলরাশির সুবিশাল এলাকায় বাংলাদেশের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে ২শ নটিক্যাল মাইলের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল ও মহীসোপান অঞ্চলে বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ ও সার্বভৌম অধিকার সুনিশ্চিত করেছেন আদালতের রায়।
যার আয়তন প্রায় আরেকটি বাংলাদেশের সমান। ফলে এর গুরুত্ব কতটা তা বলার দরকার পড়ে না। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো, এমনটি জানা যাচ্ছে যে, বিশাল সমুদ্র সীমা জয়ের পরও, ব্লু-ইকোনমির সুফল পাচ্ছে না বাংলাদেশ। বিগত দশ বছরে কিছুই করেনি বিগত আওয়ামী সরকার। অথচ এই বিস্তীর্ণ সমুদ্রের নীল জলরাশির তলদেশে যে বিশাল সম্পদ লুকিয়ে আছে, তা হতে পারে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ বা সঞ্চয়। ফলে এমন পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে উদ্যোগ নিতে হবে।
আমলে নেওয়া দরকার, সমুদ্র বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাব এবং তথ্যের অপ্রতুলতার অভাবে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার ৮০ ভাগ এলাকার সম্পদের হিসাব এখনো অজানা। আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে আমরা কিভাবে লাভবান হতে পারি এসব সম্পদ কাজে লাগিয়ে। ব্লু-ইকোনমির গুরুত্ব অনুধাবন করা সহ এই অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।
মন্তব্য করুন