ভিডিও শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বগুড়ায় অনুমোদনহীন ও গেটম্যানবিহীন লেভেল ক্রসিংগুলো মরণ ফাঁদ হয়ে উঠেছে

বগুড়ায় অনুমোদনহীন ও গেটম্যানবিহীন লেভেল ক্রসিংগুলো মরণ ফাঁদ হয়ে উঠেছে

নাসিমা সুলতানা ছুটু : বগুড়ায় অনুমোদনহীন ও গেটম্যানবিহীন (প্রহরী ছাড়া) লেভেল ক্রসিংগুলো মরণ ফাঁদ হয়ে উঠেছে। জেলায় মিটার গেজ সেকশনের ৭০ কিলোমিটার রেলসড়কে ওই দুই ধরনের লেভেলক্রসিং রয়েছে ৩১টি। এর মধ্যে ২১টি অনুমোদনবিহীন এবং বাকি ১০টিতে কোন গেটম্যান নেই। বিপজ্জনক এসব লেভেল ক্রসিংয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে এবং তাতে প্রাণহানিও হচ্ছে।

রেলওয়ের হিসাব অনুযায়ী, সান্তাহার জংশন স্টেশন থেকে সোনাতল পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার মিটারগেজ রেলপথে মোট ৫১ টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি রেলওয়ের প্রকৌশল শাখার অধীনে। বাদবাকী ২১টি রেলওয়ে ট্রাফিক বিভাগের নিয়ন্ত্রণে। ঐসব ক্রসিংয়ের মধ্যে ‘স্পেশাল’ ক্যাটাগরির ৫টিসহ ‘এ’ এবং ‘বি’ ক্যাটাগরির মোট ১৮টি লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান রয়েছে। বাকি ৩৩টি লেভেলক্রসিংয়ের মধ্যে ১০টিতে বর্তমানে কোন গেটম্যান নেই।

এর পাশাপাশি শহর এবং গ্রাম এলাকায় পাকা সড়ক সম্প্রসারণের কারণে আরও অন্তত ২১টি স্থানে অনুমোদন ছাড়াই লেভেল ক্রসিং গড়ে উঠেছে। জেলার মিটার গেজ সেকশনে ৭০ কিলোমিটার রেলসড়ক দিয়ে ২৪ ঘন্টায় ১৪টি ট্রেন চলাচল করে। সেই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে দেড় ঘন্টা পর একটি করে ট্রেন চলে। অরক্ষিত এসব লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বগুড়ার সান্তাহার থেকে সোনাতলা স্টেশন এলাকায় ৫জন নিহত হন।

এর মধ্যে গত বছরের১৩ সেপ্টেম্বর বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের নতুন ভবনের শেষ সীমানায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সামনে অনুমোদনহীন লেভেল ক্রসিং পারাপারের সময় আশরাফুল ইসলাম নামে এক মোটর সাইকেল আরোহী নিহত হন। এর আগের বছরগুলোতে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ১নং ফটক সংলগ্ন অনুমোদনহীন লেভেল ক্রসিংসে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঐ দুই ধনের লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে অনুমোদন রয়েছে কিন্তু জনবল অর্থাৎ গেটম্যান নেই তেমন লেভেল ক্রসিংয়ের সামনে একটি ‘সতর্কবাণী সাইনবোর্ড’ টাঙিয়ে রেখে তাদের দায় সারছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কর্মকর্তাদের ভাষ্য হলো- প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কিছুই করার নেই। তবে অনুমোদনহীন লেভেল ক্রসিংগুলোতে দুর্ঘটনার কোন দায় নিতে নারাজ। কারণ হিসেবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী রেল লাইনের ওপর দিয়ে  যে সংস্থার (এলজিইডি, পৌরসভা কিংবা সওজ) সড়ক যাবে লেভেল ক্রসিং-এ বেরিয়ার (প্রতিবন্ধক) নির্মাণের যাবতীয় ব্যয়ভার সেই সংস্থাকেই বহন করতে হবে। তারা শুধু সড়কের মালিক বা তত্ত্বাবধানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে লেভেলক্রসিংগুলোতে বেরিয়ার নির্মাণের তাগাদ দিতে পারেন।

আরও পড়ুন

শহরের কামারগাড়ি এলাকায় সরকারি আজিজুল হক কলেজের ১নং ফটকের সামনে লেভেল ক্রসিংটি পুরোপুরি অরক্ষিত। অনুমোদন ছাড়াই লেভেল ক্রসিং গড়ে ওঠায় এখানে যাত্রী বিশেষত শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের নিরাপদ চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ঐ কলেজের শিক্ষার্থী পলাশ আহমেদ জানান, কলেজে ক্লাস চলাকালে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অন্তত ১০টি ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু ওই লেভেল ক্রসিংয়ে কোন গেট বা বেরিয়ার না থাকায় জীবন হাতে নিয়ে চলতে হয়। রোকসানা খাতুন নামে অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘একটু অন্য মনষ্ক হলেই মৃত্যু। বিগত বছরগুলো এধরনের অনেক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।’ ভ্রাম্যমাণ দোকানি জহুরুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচাতে ওখানে আপাতত বাঁশ দিয়ে একটি অস্থায়ী গেট নির্মাণ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, অনুমোদনহীন লেভেল ক্রসিংগুলোতে বেরিয়ার নির্মাণের জন্য সর্বশেষ ২০২২ সালের মাঝামাঝিতে রেলওয়ের প্রকৌশল শাখা এলজিইডি ও পৌরসভার সঙ্গে যৌথ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তবে তার পর আড়াই বছর কেটে গেলেও আজ পর্যন্ত ওইসব অনুমোদনহীন লেভেল ক্রসিংয়ে কোন বেরিয়ার বা প্রতিবন্ধক নির্মাণ করা হয়নি। কবে নাগাদ হবে সেটা কোন পক্ষই নিশ্চিত করে বলতে পারেনি। একই অবস্থা অনুমোদিত লেভেলক্রসিংয়ে গেটম্যান নিয়োগের ক্ষেত্রেও। কবে নাগাদ জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে সে ব্যাপারে রেলওয়ের কোন কর্মকর্তাই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেন নি।

অনুমোদনহীন লেভেলক্রসিংগুলোতে বেরিয়ার বা প্রতিবন্ধক নির্মাণে নতুন করে আর কোন পদক্ষেপ গ্রহণের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বগুড়ায় রেলওয়ের উর্ধ্বতন উপ-সহকারি প্রকৌশলী (পথ) আফজাল হোসেন বলেন, ২০২২ সালের ১৪ জুলাই যৌথ তদন্তের আলোকে আমরা এলজিইডিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে  প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়েছি। কিন্তু তার পর ঐসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আর কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, ‘এক দশক আগে বগুড়া শহরের সাবগ্রাম এলাকায় অন্তত ৫টি অনুমোদনহীন লেভেল ক্রসিংয়ে বেরিয়ার নির্মাণ করা হয়।

অনুমোদন থাকার পরেও ১০টি লেভেলক্রসিংয়ে জনবল নিয়োগের বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে বগুড়ায় রেলওয়ের সহকারি নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, ‘ অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রায় সবগুলো লেভেলক্রসিংয়ে জনবল রয়েছে, আর যেগুলোতে নেই এখন পর্যন্ত সেগুলোর কাঠামোই নির্মাণ হয়নি। তারপরও ওইগুলোর বিষয়ে আমরা জনবল চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার আবেদন করছি। সর্বশেষ ৪ মাস আগেও আমরা লিখেছি। আশাকরি খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘বাংলাদেশ ও ভারতকে হারিয়ে সেমিতে যাবে পাকিস্তান’

গোপনে বিয়ে সারলেন নারগিস ফাখরি

শেষ হলো চরমোনাই দরবারের মাহফিল

সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে বিএসএফের প্রতি বিজিবির আহ্বান

নিজ ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও চর্চা একটি জাতির পরিচয় ও সংস্কৃতির ভিত্তি গড়ে তোলে-পুলিশ সুপার, বগুড়া

নওগাঁর মান্দায় সালিসে মারধরে আহত ৩, আটক ২