রপ্তানিও সীমিত
বেশি উৎপাদন, বাম্পার ফলন এবং অতিরিক্ত যোগানেই আলুর দাম কম

শাওন রহমান : লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি উৎপাদন, অনুকূল আবহাওয়া বেশি ফলন, চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত যোগান ও বিদেশে রপ্তানি সীমিত হওয়ায় বগুড়ার বাজারে আলুর দাম কমের কারণ। কৃষি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকের সাথে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
জানা গেছে, বগুড়ার বাজারে গত বছর এই সময় প্রতি কেজি আলু খুচরা পর্যায়ে মানভেদে ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৮-২২ টাকা। ব্যবসায়ী ও কৃষক সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার মাঠ থেকে মানভেদে প্রতি মণ আলু ৩শ’ টাকা থেকে ৪শ’ টাকা এবং বগুড়ার মহাস্থান বাজারে প্রতি মণ আলু ৫শ’ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর বগুড়ার বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৭ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়া সূত্র বলছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৫ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৯১০ মেট্রিকটন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এবার আলু চাষ হয়েছে ৬০ হাজার ৪৩৫ মেট্রিকটন, যা গত বছরের তুলনায় ৫ হাজার ১৭৫ হেক্টর বেশি। গত বছর আলু চাষের জন্য আবহাওয়া ছিল বৈরী। ছিল ঘন কুয়াশা ও কয়েক দফা বৃষ্টির প্রভাব।
সেই তুলনায় এবার ঘন কুয়াশা ও বৃষ্টি কোন প্রাকৃতি বিপর্যয় না থাকায় ফলন হয়েছে বাম্পার। গত বছর হেক্টর প্রতি ২১ দশমিক ৬ মেট্রিকটন আলু উৎপাদন হলেও এবার ২৩ মেট্রিকটন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
সদরের রবিবাড়িয়া এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত বছর ভরা মৌসুমেও আলুর দাম ছিল অনেক বেশি। তাছাড়া প্রায় সারা বছরই আলু চড়া দামেই বেচাকেনা হয়। অন্যান্য সবজির তুলনায় দাম বেশি লাভের আশায় বেশিরভাগ কৃষক অন্য সবজি আবাদ না করে আলুর আবাদ করেছেন। আর সব আলু একসাথে বাজারে আসতে শুরু করায় দাম কমে অর্ধেকে নেমেছে।
আরও পড়ুনবগুড়ার রাজা বাজারের ব্যবসায়ী রতন মিয়া বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার আলুর দাম অর্ধেকেরও কম। কারণ হিসেবে এই ব্যবসায়ী বলছেন, বগুড়ার এবার প্রচুর পরিমাণ জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। ফলে স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে চাহিদার তুলনায় ব্যাপক আলুর যোগান লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আর এতে করেই সবজিটির দাম কম।
বগুড়ার শিবগঞ্জের সবজি রপ্তানিকারক মো. সাগর বলেন, বিগত বছরগুলোতে এসময় প্রচুর পরিমাণ আলু রপ্তানি করা হলেও এবার চিত্র ভিন্ন। এবার অন্যান্য সবিজ রপ্তানি করা হলেও আলুর রপ্তানি নেই বললেই চলে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গত বছর রপ্তানিতে সরকারের পক্ষ থেকে ২০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হলেও এবার তা কমে ১০ শতাংশ করা হয়েছে, ফলে রপ্তানি কম হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপ-পরিচালক মতলুবর রহমান বলেন, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বগুড়ার ব্যাপক পরিমাণ জমিতে আলুর উৎপাদন হয়েছে। জেলাতে এবার লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫ হাজার ১৭৫ হেক্টর বেশি জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছে। এছাড়াও অনুকূল আবহাওয়া ফলনও হয়েছে বাম্পার। ফলে বাজারে যোগান বাড়ায় সবজিটির দাম অপ্রত্যাশিতভাবে কমে গেছে। তবে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই বাজার ঠিক হয়ে যাবে।
মন্তব্য করুন