ভিডিও শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রোহিঙ্গা সমস্যা

রোহিঙ্গা সমস্যা

রোহিঙ্গা সংকটের যৌক্তিক সমাধানের ব্যাপারে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কেবল আশার বাণী শোনানো হলেও কাজের কাজ কিছ্ইু হয়নি-এমন বিষয় বারবার আলোচনায় এসেছে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করা হবে-এ ধরনের আশ্বাস বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৭ সালের ২০ আগষ্ট ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণসহ বর্বর নির্যাতনের মুখে দলে দলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে।

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত না পাঠিয়ে তৃতীয় কোন নিরাপদ অঞ্চলে স্থানান্তরের পক্ষে মত দিয়েছে জাতিসংঘ ও ইউএনওএইচসিআর। তবে এ সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধানের প্রতি জোর দিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। এ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশকে সে মোতাবেক পরিকল্পনা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

এমনকি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) এর সভায় একই রকম পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সংকট সমাধানের আগ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও গত বছর দ্ইু দফায় সহায়তার হার কমানো হয়েছে। বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের আগেই রোহিঙ্গা ইস্যুর একটি স্থায়ী ও টেকসই সমাধান খোঁজার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। খবরে প্রকাশ, বর্তমানে রোহিঙ্গাদের যে আন্তর্জাতিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, গত বছর দুই ধাপে কমানো হয়েছে।

যা এখন প্রতি মাসে মাথাপিছু ৮ ডলারে নেমে এসেছে। সহায়তার এ হার আরও কমার আশংকা করা হচ্ছে। খাদ্য বরাদ্দ কমানোর ফলে রোহিঙ্গাদের সার্বিক দুর্গতি ও অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এ খাতে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব ব্যয়ও বেড়েছে। যার একটা বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে স্থানীয়দের ওপরও।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, মিয়ানমারে দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসা চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে রয়েছে। ২০১৭ সালে তার সঙ্গে যোগ হয় আরও ৭ লাখ রোহিঙ্গা। কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে ১১ লাখ রোহিঙ্গার সহায়তায় জাতিসংঘ কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতার রদবদল হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে সারা বিশ্বে মার্কিন সহায়তা বন্ধ বা সীমিত করার ঘোষণা দেওয়ায় জাতিসংঘের উদ্যোগে চলমান মানবিক কার্যক্রমগুলোতে অর্থ সংকট দেখা দেওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন

বিশ্ব সম্প্রদায়কে মনে রাখা উচিত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিধন অভিযানের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু এত বছর পার হলেও নিজভূমে ফিরতে পারেনি রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও শুরু হয়নি প্রত্যাবাসন। উল্টো রোহিঙ্গাদের না নেওয়ার জন্য নানা টালবাহানা করছে তারা। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের আশ্বাস দিলেও বিশ্ব সম্প্রদায় এ বিষয়ে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র সহযোগিতার বদলে চীন-ভারত পর্যন্ত মিয়ানমারের পক্ষ নেয়। এমনকি তাদের ভোটের কারণে খোদ জাতিসংঘও মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।

এমন দৃশ্যপট নতুন করে সংকট দেখা দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন। তিনি তো ক্ষমতায় বসেই একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করে সারা বিশ্বে সকল মার্কিন অর্থ সহায়তা সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করেছেন। এমনকি তার নিজ দেশের অভ্যন্তরেও ফেডারেল আর্থিক সহায়তা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। জাতিসংঘকেও অর্থ সহায়তা কমিয়ে দেবেন বলে ট্রাম্প ইতিপূর্বে ঘোষণা দিয়েছিলেন- এখন জাতিসংঘেরও বিশ্বব্যাপী মানবিক কর্মকান্ডগুলো কতদূর এগিয়ে নেওয়া সম্ভব- তা নিয়ে আশংকা দেখা দিয়েছে।

ট্রাম্পের এই উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তায় জাতিসংঘ পরিচালিত ত্রাণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে বলে আশংকা করছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চেষ্টার কমতি নেই। কিন্তু মায়ানমারের রাজনৈতিক অনাগ্রহের কারণে এখনো পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই বললে এই সংকট মিয়ানমারের, মিয়ানমারকেই তা শেষ করতে হবে।

নিজস্ব নাগরিকদের ওপর জাতিগত নিধন চাপিয়ে প্রতিবেশী দেশের ওপর বোঝা চাপিয়ে দেয়া আধুনিক ও সভ্য বিশ্বের কারও কাজ হতে পারে না। রোহিঙ্গা নাগরিকদের সসম্মানে নিজ ভূমিতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতের মাধ্যমে সংকট সমাধানে বিশ্ব নেতাদের এগিয়ে আসা উচিত।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নিজ ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও চর্চা একটি জাতির পরিচয় ও সংস্কৃতির ভিত্তি গড়ে তোলে-পুলিশ সুপার, বগুড়া

নওগাঁর মান্দায় সালিসে মারধরে আহত ৩, আটক ২

বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে মহান শহিদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন

৫২ এবং ৭১ এর অর্জন ম্লান করে দিয়েছিলো আওয়ামীলীগ : রেজাউল করিম বাদশা

বগুড়ার শিবগঞ্জে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে ফেরার পথে নাগরিক ঐক্য’র আহবায়ক ছুরিকাহত

দীর্ঘ আট মাসেও শেষ হয়নি জয়পুরহাট স্টেডিয়ামের সংস্কারের কাজ