৯ বছরেও চালু হয়নি, ভোগান্তিতে নিম্ন আয়ের মানুষ
বগুড়ার সান্তাহার-লালমনিরহাট এবং পঞ্চগড়গামী বন্ধ ২টি ট্রেন
_original_1739720452.jpg)
নাসিমা সুলতানা ছুটু: বগুড়ার ওপর দিয়ে চলাচলকারী ৭ আপ/৮ ডাউন (উত্তরবঙ্গ মেইল) এবং ৪৮১ আপ ও ৪৮২ ডাউন নামে বন্ধ দু’টি ট্রেন নয় বছরেও চালু না হওয়ায় জেলার অভ্যন্তরে যাতায়াতকারী নিম্ন আয়ের লোকজনের ভোগান্তি বেড়েছে। ট্রেন দু’টি ‘গরীবের ট্রেন’ নামেই পরিচিত ছিল। এভাবে ট্রেনের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ায় সাধারণ মানুষকে সড়ক পথে তিনগুণ বেশি ভাড়ায় অনেক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
তবে প্রায় ১১ বছর বন্ধ থাকার পর গাইবান্ধার বোনারপাড়া থেকে পঞ্চগড়গামী ‘রামসাগর এক্সপ্রেস’ ট্রেন চালু করা হলেও সান্তাহার থেকে পঞ্চগড়গামী মেইল (উত্তরবঙ্গ মেইল) এবং সান্তাহার থেকে লালমনিরহাটগামী লোকাল (৪৮১ আপ ও ৪৮২ ডাউন) ট্রেন দু’টি চালু না করায় নিয়মিত যাত্রীদের অনেকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, দেড় দশকেরও বেশি আগে বগুড়ার উপর দিয়ে রাজধানী ঢাকামাগী শুধুমাত্র ‘করতোয়া এক্সপ্রেস’ নামে একটি মাত্র আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করতো। তখন বগুড়ার সান্তাহার থেকে ঢাকা, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, পঞ্চগড় এবং গাইবান্ধার বোনারপাড়া রুটে লোকাল ও মেইল ট্রেনের সংখ্যা ছিল ৯ জোড়া (আসা-যাওয়া মিলে)। এর মধ্যে ‘পদ্মরাগ কমিউটার’ (২১ আপ ও ২২ ডাউন), ‘বগুড়া কমিউটার’ (১৯ আপ ও ২০ ডাউন), এবং ‘লোকাল’ (৪৮১ আপ ও ৪৮২ ডাউন) নামে ৩ জোড়া ট্রেন বগুড়ার সান্তাহার-লালমনিরহাট-সান্তাহার রুটে চলাচল করতো। অন্য দুই জোড়া ট্রেনের মধ্যে ‘উত্তরবঙ্গ মেইল’ (৭ আপ ও ৮ ডাউন) সান্তাহার-পঞ্চগড়-সান্তাহার এবং ‘কলেজ ট্রেন’ নামে পরিচিত লোকাল (৪৯১ আপ ও ৪৯২ ডাউন) ট্রেন সান্তাহার- বোনারপাড়া-সান্তাহার রুটে চলাচল করতো।
পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আন্তঃনগর ট্রেনের সংখ্যা একে একে আরও ৩ জোড়া বাড়ানো হয়। এগুলো হলো-লালমনিরহাট-ঢাকা-লালমনিরহাট রুটের ‘লালমনি এক্সপ্রেস’, সান্তাহার-দিনাজপুর-সান্তাহার রুটে ‘দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস’ এবং রংপুর-ঢাকা-রংপুর রুটে ‘রংপুর এক্সপ্রেস’। নতুন ৩ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চালু করার কারণে বগুড়ার ওপর দিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী ট্রেনের সংখ্যা ৯ জোড়া বা ১৮টিতে উন্নীত হয়।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আগে থেকে চলাচল করা রাজধানীগামী আন্তঃনগর ‘করতোয়া এক্সপ্রেস’ ট্রেনের গন্তব্য পরিবর্তন করে সান্তাহার থেকে লালমনিরহাটের বুড়িমারি পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। আন্তঃনগর ট্রেনগুলো বগুড়ায় বিদ্যমান ১৩টি স্টেশনের মধ্যে মাত্র ৪টিতে যাত্রা বিরতি করে। তবে লোকাল ও মেইল ট্রেনগুলো জেলা সীমানায় ৭০ কিলোমিটার রেলপথে সবগুলো স্টেশনেই যাত্রা বিরতি করে। এতে জেলার অভ্যন্তরে যাতায়াতকারী যাত্রীদের সুবিধা হয়।
কিন্তু প্রায় ৯ বছর আগে ২০১৬ সালে হঠাৎ করেই সান্তাহার-লালমনিরহাট-সান্তাহারগামী ‘লোকাল’ ট্রেনটি (৪৮১ আপ ও ৪৮২ ডাউন) বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ২০২০ সালে ‘উত্তরবঙ্গ মেইল’ নামে সান্তাহার-পঞ্চগড়-সান্তাহার রুটে ট্রেনটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ট্রেন দু’টি ১০টি বগি নিয়ে চলাচল করতো। প্রতিটি বগিতে ৬৮ জন করে ১০টি বগিতে ৬৮০জন করে বসার ব্যবস্থা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে দ্বিগুণের বেশি যাত্রী যাতায়াত করতেন। সেই হিসাবে ট্রেন দু’টি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্তত ৩ হাজার যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছেন।
আরও পড়ুনবগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের মৌকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা আনিছুর রহমান জানান, ট্রেন যাত্রা নিরাপদ এবং খরচও অনেক কম। সে কারণে তারা সব সময় ট্রেনেই কর্মস্থলে যাতায়াত করতেন। তিনি বলেন, বগুড়া থেকে ৪১ কিলোমিটার দূরে সান্তাহারে যেতে বাসে ভাড়া গুণতে হয় ৮০ টাকা। আর ট্রেনের ভাড়া মেইলে ২০ টাকা এবং লোকালে মাত্র ১৫ টাকা। তিনি বলেন, ফসল ঘরে তোলার মৌসুমগুলো বিশেষত ধান কাটার সময় উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা কাজের সন্ধানে এসব ট্রেনে বগুড়া আসেন। এছাড়াও বাংলা নববর্ষ, ঈদ এবং দূর্গা পূজাসহ নানা উৎসবে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে যাতায়াতের জন্য ট্রেনকেই বেছে নেন। কিন্তু ট্রেন দু’টি বন্ধ থাকার কারণে তাদেরকে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সাজেদুর রহমান জানান, ট্রেন দু’টি সহসা চালু হবে কি’না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মনে হয় না সহজে চালু হবে। ট্রেনদুটো অনেক আগে ২০১৬ সালে বন্ধ হয়ে যায়, এরপর আর চালু হয়নি। যেহেতু বগুড়ার উপর দিয়ে অনেকগুলো আন্তঃনগর ট্রেন যায়, এছাড়া সকালে একটি লোকাল ট্রেন (কলেজ ট্রেন) যায়, সেটিই আবার রাতে ফিরে। নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষরা সাধারণতঃ ওই ট্রেনেই যাতয়াত করে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের উত্তরবঙ্গের মানুষের একটি বড় সমস্যা এদের অনেকেই বিনা টিকিটে ট্রেনে যাতযাত করতে চান। এর আগে আমরা তল্লাশি করে দেখেছি, লোকাল ট্রেনের অধিকাংশ যাত্রীই বিনা টিকিটে যাতয়াত করে। কড়াকড়িভাবে যখন বিষয়টি আমরা নজরদারিতে আনি তখন পরিমাণ কমে অধিকাংশ টিকিট কাটা শুরু করেন। এখন আবার সেই অবস্থায় ফিরে এসেছে। ওই দুটো ট্রেন চালু হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল।
সাজেদুর রহমান জানান, বর্তমানে বগুড়ার উপর দিযে মোট ৮ জোড়া (১৬টি) ট্রেন চলাচল করছে। এরমধ্যে ৪৯১ আপ ও ৪৯২ ডাউন (কলেজ ট্রেন) একজোড়া লোকাল ট্রেন। সকাল সাড়ে ৮টায় বোনারপাড়া থেকে বগুড়ায় আসে এবং রাত ৮টা ২০ মিনিটে সান্তাহার থেকে বগুড়া স্টেশনে আসে। এছাড়া বাকি ৭ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে ২ জোড়া বেসরকারি এবং অবশিষ্ট ৫টি সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাতয়াত করে।
মন্তব্য করুন