ভিডিও শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

দুর্নীতিকে ‘না’ বলুন

দুর্নীতিকে ‘না’ বলুন। প্রতীকী ছবি

ঘুস মানেই যে অপরাধ-দুর্নীতি সে কথা নতুন কিছু নয়। তারপরও তা আমাদের মাঝে মাঝে মনে করিয়ে দিতে হয়। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে ঘুস-ব্যাংক লুটপাট-দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন পর্যন্ত হতে হয়। লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা সে সময় বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছিল পতিত আওয়ামী সরকার।

একটি দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে যদি প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দুর্নীতি বড় ধরনের কারণ হয়, তবে তা কতটা উদ্বেগের বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন খাতেই দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার দুর্নীতি রোধে সামগ্রিক পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির মাত্রা নিয়ে জার্মানির বার্লিন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) প্রতিবছর দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গত মঙ্গলবার তারা এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করেছে ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০২৪’। ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের তথ্যের ভিত্তিতে এই সূচক তৈরি করা হয়েছে।

সেই সূচক থেকে জানা গেছে, দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলির মধ্যে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪তম। এর আগের বছর ছিল দশম। ২০২৪ সালের ধারণাসূচক অনুসারে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫১তম। এর আগের বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৯তম। অবস্থানগত দিক থেকে দশম থেকে চতুর্দশ অবস্থানে নেমে এলেও বাংলাদেশে দুর্নীতি কমেনি। বরং দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার দিক থেকে বাংলাদেশের অবনতি হয়েছে। ১৪৯ থেকে নেমে এসেছে ১৫১তম অবস্থানে।

প্রসঙ্গত, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সূচকে দুর্নীতির ধারণার মাত্রাকে ০ থেকে ১০০-এর স্কেলে নির্ধারণ করা হয়। ‘০’ স্কোরকে দুর্নীতির কারণে সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ‘১০০’ স্কোরকে দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত বা সর্বাধিক সুশাসিত বলে ধারণা করা হয়।

তথ্য মতে, ২০২৩ সালে ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৪, গত বছর পেয়েছে ২৩। এর অর্থ হলো, দুর্নীতি বাড়ায় বাংলাদেশের স্কোর ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে এক কমেছে। কিন্তু অন্য দেশ আরও খারাপ করায় সূচকে চার ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে ডেনমার্কে সবচেয়ে কম দুর্নীতি হয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির মাত্রা ছিল দক্ষিণ সুদানে।

আরও পড়ুন

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে (টিআইবি) সিপিআই-২০২৪ তুলে ধরার সময়ও এসব বিষয়ে আলোকপাত করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী কর্তৃত্ববাদী সরকার মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেও বাস্তবে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে এবং দুর্নীতি সংঘটনে সহায়তা ও অংশগ্রহণ করেছে।

যে কারণে লুটপাট, দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রীয়ভাবে তোষণ, আইনের সঠিক প্রয়োগ না করা এবং সার্বিক কাঠামোগত দুর্বলতায় বাংলাদেশের অবস্থানের ক্রমাবনতি হয়েছে। এসব চিত্র একটি বিষয়কেই স্পষ্ট করে যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া দুর্নীতিযুক্ত দেশ গঠন সম্ভব নয়।

রাজনীতিবিদদের সততা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জরুরি। যাদের হাতে রাষ্ট্রকাঠামো গঠনের ক্ষমতা থাকে, তাদের স্বচ্ছ ও জবাবদিহিপূর্ণ হতে হবে। একই সঙ্গে জরুরি দুর্নীতি নির্মূলে গঠিত প্রতিষ্ঠানের শক্তিশালী হওয়া, যাতে সে দুর্নীতি রুখতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

আমরা অবগত আছি, সরকার এবং প্রশাসনে অনেকেই আদেশ যারা সৎ জীবনযাপন করছেন। যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তারাই পরিবেশ নষ্ট করছে। দুর্নীতি বন্ধ না করা গেলে ভবিষ্যতে যত উন্নয়নই হোক তা সাধারণের কোনো উপকারে আসবে না। দুর্নীতিদমন কমিশন, সরকার এবং প্রশাসন উদ্যোগী হলেই কেবল দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে মানুষ দেখেছে এর উল্টোটা।

পতিত আওয়ামী সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা দেশের অর্থনৈতিক খাতকে দুমড়ে-মুচড়ে খেয়ে দেশটাকে কঙ্কালসার বানিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। আমরা মনে করি, দুর্নীতি কমিয়ে আনা নয়, দুর্নীতির সম্পূর্ণ মূলোৎপাটন প্রয়োজন। দুর্নীতি যাতে না হয়, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে সেটা হবে সবচেয়ে ভালো দৃষ্টান্ত। সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন অপেক্ষায় আছে, দুর্নীতিমুক্ত হবে দেশ।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিলো জবি রিপোর্টার্স ইউনিটি

ইন্ডিয়ার কাছে হার দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু বাংলাদেশের

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে সহায়তা করতে গিয়ে অভিযোগের মুখে জবি ছাত্রদল আহবায়ক

একুশে ফেব্রুয়ারি চলবে মেট্রোরেল, কর্মবিরতি স্থগিত

সাতক্ষীরায় সন্তানকে পুড়িয়ে হত্যার পর মাকে কুপিয়ে হত্যা