ভিডিও শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পুরনো প্লাস্টিক বোতলে পানি পান, চরম ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য

পুরনো প্লাস্টিক বোতলে পানি পান, চরম ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য

শাওন রহমান : পানি পান করতে প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করেন অনেকেই। বিশেষ করে পুরনো প্লাস্টিক বোতলে পানি সংরক্ষণ ও পান করার প্রবণতা আছে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই। অনেকেই দিনের পর দিন একবার ব্যবহারের বোতল বার বার ব্যবহার করছেন, জেনে-বুঝে বা না জেনেই। এমন অসচেতনতায় মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে মানবদেহের। তাৎক্ষণিক কোন ক্ষতি না হওয়ায় উপেক্ষিত থাকছে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি।

ঘরে কিংবা ঘরের বাইরে, পথে-ঘাটে, হাট-বাজার সর্বত্রই ব্যবহার হচ্ছে পুরনো প্লাস্টিকের বোতল। প্রতিদিন বোতলে পানি ভরে অফিসে ব্যবহার, সন্তানের স্কুলব্যাগেও প্লাস্টিকের বোতলে তুলে দেওয়া হচ্ছে পানি। তাৎক্ষণিক কিছু না বোঝা গেলেও দিনের পর দিন এমন কাজে বড় ক্ষতি হচ্ছে মানবদেহের। এতে দেখা দিতে পারে দুরারোগ্য ব্যাধি। এমনিভাবে পানি সংরক্ষণ ও পান করায় দ্বিধাহীনভাবেই ব্যবহার হচ্ছে কোমল পানীয়র এক ব্যবহারের এসব বোতল।

এসব বোতলের বেশিরভাগই টাইপ-১ প্লাস্টিকের, যা মাত্র একবার ব্যবহারের জন্য তৈরি। কিন্তু সচেতনতার অভাবে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে একই বোতল বারবার ব্যবহার করছেন। এতে বোতলের ভেতরে শেওলা জমছে, আয়রণ জমছে এবং জন্ম নিচ্ছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার, যা শরীরের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। এসব বোতলের বেশি ব্যবহার হয় রাস্তা-ঘাটের দোকানে। শহরের অনেক মুদি দোকানী, কর্মচারী কিংবা নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষের পাশাপাশি শিক্ষিত অসচেতন মানুষ নির্দ্বিধায় ব্যবহার করছেন এসব প্লাস্টিকের বোতল।

বগুড়া শহরের বুজরুগবাড়িয়ার মুদি দোকানী আব্দুল বারী বলেন, অনেকদিন ধরে একই বোতলে পানি পান করছি, কই কোনো সমস্যাইতো হয়নি। আবার নতুন কোন বোতল পেলে এটা ফেলে দিয়ে ওটা ব্যবহার করবো। ক্ষতি হয় জানালে এই দোকানী বলেন, এতো হিসেব করে কে চলে?

সদরের ঘুনিয়াতলা বন্দরের নরসুন্দর বিধান চন্দ্র। তার দোকানে কোমল পানীয়র একটি পুরনো বোতলে পানি পান করছেন। বোতলটিতে আয়রন জমে কালো হয়ে গেছে। জিজ্ঞাসা করলে বিধান চন্দ্র বলেন, ছ’মাসের বেশি হলো এই বোতলে পানি খাচ্ছি। চুল কাটতে যারা আসেন, পানি চাইলে তাদের এই বোতলেই পানি খেতে দেই। কেউ কোন দিন আপত্তি করেনি। তাছাড়াও দোকানে পানি খাওয়ানোর এটাই সহজ উপায়।

বগুড়া শহরের রাস্তার পাশের ফুটপাতে বেশিরভাগ চায়ের দোকানে প্লাস্টিকের কাপে চা বিক্রি হয়। এসব প্লাস্টিকেরও কোন অনুমোদন নেই। এসব প্লাস্টিকের কাপে গরম চা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশি ক্ষতিকর। চা দোকানী রফিকুল ইসলাম বলেন, অনেক মানুষ কাঁচের গ্লাসে বা কাপে চা খেতে চান না, তখন তাদের ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের কাপে চা দেই। এগুলো স্বাস্থ্যসম্মত কিনা জানি না। তবে এসব প্লাস্টিকের কাপের চলন আগের চেয়ে বেড়েছে।

আরও পড়ুন

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারে যে পানির বোতলে পানীয় বিক্রি করা হয়, তার বেশিরভাগই একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকে তৈরি। এই ধরনের বোতলে দিনের পর-দিন পানি পান করলে তাতে শরীরে ক্যানসারের শঙ্কা বাড়ে। প্লাস্টিক বোতল তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ‘বিসফেনল এ’ বা ‘বিপিএ’-সহ একাধিক উপাদান, যা মানবদেহের জন্য চরম ক্ষতিকর।

এই ধরনের বোতলে দিনের পর দিন পানি পান করলে বোতল থেকে ক্রমাগত এই উপাদানগুলো শরীরে প্রবেশ করে। এই উপাদানগুলো রক্তে মিশে কিডনির সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও পুরনো বোতলে আয়রন জমলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে, যা ডায়রিয়া, টাইফয়েডসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের কারণ হতে পারে। পাশাপাশি প্লাস্টিকের বোতলে যদি গরম পানি ভরা হয়, তাহলে এই ঝুঁকি আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

এ ব্যাপারে বগুড়া জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা রাসেল মিয়া বলেন, এক ব্যবহারের প্লাস্টিকের বোতল বারবার ব্যবহার মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই ক্ষতিকর দিক থেকে মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। টেলিভিশনসহ নানা মাধ্যমে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এসব নিয়ে মানুষ আগে ভাবতো না, তবে মানুষ আস্তে আস্তে সচেতন হচ্ছেন। মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করা গেলে এসব দীর্ঘমেয়দি ঝুঁকি থেকে বাঁচা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমসহ সচেতন সবাইকে যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

স্পেসএক্স স্টারলিংকের ২৩টি স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে

কুয়েটে শিক্ষার্থীদের সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান

‘বাংলাদেশ ও ভারতকে হারিয়ে সেমিতে যাবে পাকিস্তান’

গোপনে বিয়ে সারলেন নারগিস ফাখরি

শেষ হলো চরমোনাই দরবারের মাহফিল

সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে বিএসএফের প্রতি বিজিবির আহ্বান