ফ্রান্সে চিকিৎসকের যৌন নির্যাতনের শিকার ২৫৬ শিশু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফ্রান্সে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। চিকিৎসা নিতে আসা অন্তত ২৯৯ রোগীকে ধর্ষণ অথবা যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। যেসব রোগীকে যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগ উঠেছে, তাদের অনেকেই শিশু এবং বেশির ভাগ রোগীকে তিনি অচেতন অবস্থায় যৌন নিপীড়ন করতেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগ ওঠা ওই চিকিৎসকের নাম জো লু স্কোয়ারেনক। তার বয়স এখন ৭৪ বছর। তিনি ২৫ বছরের বেশি সময় শল্যচিকিৎসক (সার্জন) হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি একজন অভিজ্ঞ ও খ্যাতনামা শল্য চিকিৎসক। কিন্তু এই সুনাম আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক ভয়ংকর রূপ! ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি তার রোগীদের ভয়াবহ যৌনহয়রানি করে আসছিলেন।
৭৪ বছরের এই বৃদ্ধ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ১১১টি ধর্ষণ এবং ১৮৯টি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। শিশুরাই মূলত তার বিকৃত কামের শিকার হতো। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগীদের মধ্যে ২৫৬ জনই শিশু, যাদের বয়স ১৫ বছরের কম।
২০১৭ সালে ৬ বছর বয়সী এক প্রতিবেশীকে ধর্ষণের পর এই চিকিৎসকের আসল রুপ প্রকাশ পায়। ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো এক কিশোরী অভিযোগ করলে তার বিরুদ্ধে শুরু হয় তদন্ত। এরপর একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকে, যা গোটা ফ্রান্সকে নাড়িয়ে দেয়!
তদন্ত চলাকালীন পুলিশ তার বাড়ি থেকে শিশুদের যৌন নির্যাতনের বহু ছবি ও ভিডিও উদ্ধার করেছে! ডায়েরিতে লেখা ছিল, কীভাবে তিনি অপারেশনের সময় বা চিকিৎসার অজুহাতে রোগীদের ওপর নিপীড়ন চালাতেন। তার ঘর থেকে উদ্ধার হয় সঙ্গমের জন্য ব্যবহৃত পুতুল, পরচুলা এবং শিশু পর্নোগ্রাফির সিডি উদ্ধার করা
ফরাসি পুলিশ জানান, তার বাড়িতে অভিযানে তারা একটি ইলেকট্রনিক ডায়েরি উদ্ধার করা হয়। এই ডায়েরিতে প্রায় তিন দশক ধরে এই অঞ্চলের হাসপাতালগুলোয় শত শত রোগীর ওপর তার ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনের বিবরণ লিখে রাখেন তিনি।
২৪ ফেব্রুয়ারি একটি আদালতে তার বিচার শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। জোয়েলের বিচার হবে উন্মুক্ত আদালতে। তবে তার বিরুদ্ধে সাক্ষীদের (যারা শিশু বয়সে জোয়েলের নিপীড়নের শিকার হয়েছেন) সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে বন্ধ দরজার ভেতর।
আরও পড়ুনআঞ্চলিক প্রসিকিউটর বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময়ই জো বেশ কয়েকটি ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন, সবার চোখের আড়ালে নিপীড়ন করতে তিনি যেসব কৌশল নিতেন, সে সম্পর্কেও মুখ খুলেছেন।
নির্যাতনের শিকার হওয়া রোগীদের গড় বয়স ১১ বছর। তার বিরুদ্ধে এক বছর বয়সী একটি শিশুকে ধর্ষণ এবং ৭০ বছর বয়সী একজনকে যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগও রয়েছে। ২০০৫ সালে শিশু পর্নোগ্রাফির জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও স্কুয়ার্নেক ২০১৭ সালে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত তিনি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন।
২০০৫ সালের শেষ দিকে শিশুদের যৌন নিপীড়নের ছবি অনলাইন থেকে নামানোর (ডাউনলোড) অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন জো। সেবার আদালত তাকে চার মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। ২০১৭ সালে অবসরে যাওয়ার আগপর্যন্ত জো বেশ কয়েকটি হাসপাতালে কাজ করেছেন।
জো বিবাহিত ছিলেন এবং ১৯৮০ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে তার তিন ছেলের জন্ম হয়। ২০০০ সালের শুরুর দিকে তারা আলাদা হয়ে যান। যদিও ২০২৩ সালের আগপর্যন্ত বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে তারা আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেননি।
২০১৯ সালে জোয়ের স্ত্রী (বর্তমানে সাবেক) এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, স্বামীকে কখনো তিনি সন্দেহ করেননি। যদিও তিনি জোয়েলকে প্রতিবেশী শিশুদের দিকে অস্বাভাবিকভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখেছেন। তিনি আরও বলেন, জো শয়তানের কবলে পড়েছে...আমি কখনো তাকে সন্দেহ করিনি।
মন্তব্য করুন