ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ কী, কমানোর উপায় জানুন

স্বাস্থ্য ডেস্ক: ক্রিয়েটিনিন শরীরের এক প্রকার বর্জ্য পদার্থ যা পেশির ব্যবহারে উৎপন্ন হয়। এটি পেশি এনার্জির উৎস হিসাবে ব্যবহার করে।
রক্ত থেকে ক্রিয়েটিনিন ছেঁকে মূত্র দিয়ে বের করে দেয় কিডনি। কিন্তু কিডনি সুস্থ না থাকলে এই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে হয় না। তখন রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বাড়তে থাকে। আর কিডনি বিকল হওয়ার অন্যতম কারণ ক্রিয়েটিনিনের বাড়তি মাত্রা।
অতিরিক্ত পরিমাণে প্রোটিন খেলেও ক্রিয়েটিনিন তৈরি হয়। রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেশি থাকা মানেই কিডনি ঠিকমতো কাজ করছে না। তাই সতর্ক হতেই হবে।
ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল-এর তথ্য অনুযায়ী, সিরাম ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা হলো- পুরুষদের ক্ষেত্রে ৬০-১১০ মাইক্রোমোল প্রতি লিটার রক্তে, নারীদের ক্ষেত্রে ৪৫-৯০ মাইক্রোমোল প্রতি লিটার রক্তে।
কিডনি স্বাভাবিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দিলে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। কিডনিতে সংক্রমণ হলেও বাড়তে পারে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা। পাশাপাশি, ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এমন কিছু ওষুধ রয়েছে, যেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় অনেক সময়ে ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যায়।
রক্তে ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়া মানে কিডনি ঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। পেশি থেকে যেসব দূষিত পদার্থ বের হয়, তা কিডনি ছাঁকতে না পারলে রক্তের মধ্যে মিশতে শুরু করে। তখনই শরীরে বেশ কিছু লক্ষণ ফুটে ওঠে।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে বুঝবেন রক্তে ক্রিয়েটিনিন বেড়েছে? চলুন জেনে নেওয়া যাক-
শ্বাসকষ্ট
কিডনি বিকল হলে শরীরে হঠাৎ তরলের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে ‘ডিসনিয়া’ বলা হয়।
অতিরিক্ত ক্লান্তি
রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে গেলে অতিরিক্ত ক্লান্ত লাগে। রক্তে ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেলে বারবার প্রস্রাবের বেগ আসে।
পা ফোলা
কিডনি ঠিকমত কাজ না করলে শরীরে তরল জমতে শুরু করে। এতে পায়ের পাতা, পায়ের গোছ ফুলে উঠতে পারে।
এছাড়াও রক্তে ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেলে অনেকেরই গা গুলোয়, বমি পায়।
আরও পড়ুনক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কমাতে করণীয়
গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত প্রোটিন খেলে ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যায়। বিশেষ করে রান্না করা রেড মিট ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। রান্নায় ব্যবহৃত তাপ মাংসে থাকা ক্রিয়েটিনকে ক্রিয়েটিনিনে পরিণত করে। তাই এর মাত্রা কমাতে অত্যধিক মাংস না খেয়ে ডায়েটে রাখুন সবজির স্যুপ বা স্ট্যু, ডালের স্যুপ।
ফাইবারযুক্ত খাবার খান
গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইবার বেশি খেলে রক্তে ক্রিয়েটিনের মাত্রা কমে। বেশি করে ফল, সবজি, দানাশস্য খান।
এসব খাবার খাবেন না
ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেশি থাকলে কিছু খাবার খাবেন না। এই তালিকায় রয়েছে আলু, টমেটো, ক্যানড খাবার, দুগ্ধজাত খাবার, কলা, কমলালেবু, আচার, প্রক্রিয়াজাত মাংস, ব্রাউন রাইস। ক্রিয়েটিনিন কমাতে অবশ্যই রেড মিট খাওয়া ছাড়তেই হবে। খাদ্যতালিকায় রাখুন ফল-শাক-সবজি। এমন খাবার খান যাতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার।
ধূমপান ছাড়ুন
কিডনির অসুখের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে ধূমপানের অভ্যাস। অন্যদিকে গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি মদ্যপানে কিডনির অসুখের ঝুঁকি বাড়ে।
পর্যাপ্ত পানি পান
ডিহাইড্রেশনের ফলে ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যায়। কিন্তু যাদের কিডনির অসুখ রয়েছে, তাদের পানি পান করতে হবে মেপে মেপে। তাই কতটুকু পান পান করবেন, দিনের কোন সময় খাবেন তা চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে নিন।
সোডিয়াম কম খান
যেসব খাবারে অতিরিক্ত লবণ রয়েছে, সেগুলো রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। প্রক্রিয়াজাত খাবারে উচ্চ পরিমাণে ফসফরাস ও সোডিয়াম থাকে যা কিডনির সমস্যা করে। কাজেই প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
মন্তব্য করুন