অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ
বগুড়া ইয়াকুবিয়া স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে সড়ক অবরোধ

স্টাফ রিপোর্টার : বেতন-সেশন ফিসহ অন্যান্য আনুসঙ্গিক খরচ বৃদ্ধির প্রতিবাদে বগুড়া ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদৎ হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ এবং অধ্যক্ষসহ শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখে।
সন্ধ্যায় যৌথ বাহিনীর হস্তক্ষেপে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শান্ত হয়। এছাড়া অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত ও অপসারণের আশ্বাস দিয়ে তাকে উদ্ধার করাসহ তাদের দাবির মুখে তাকে আপাতত বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত আগামীকাল সোমবার থেকে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
জানা গেছে, আজ রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) প্রথম ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন এবং সেশন ফি সরকারি প্রজ্ঞাপনে যা আছে তার চেয়ে বেশি ধরে বেতনের রশিদ দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা স্কুলের বাইরে শেরপুর রোড ও জলেশ্বরীতলা শহিদ আব্দুল জব্বার সড়ক অবরোধ করে রাখে। খবর পেয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আরাফাত হোসেন এসে শিক্ষার্থীদের দাবি শুনে তা পূরণ করার আশ্বাস দিয়ে তাদেরকে ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহবান জানান।
এরপর শিক্ষার্থীরা শেরপুর রোড থেকে সরে এলেও বিকেল ৪টা পর্যন্ত শহীদ আব্দুল জব্বার সড়ক অবরোধ করে রাখে। এর মাঝে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একটি দল জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে গিয়ে স্কুল ক্যাম্পাস থেকে কলেজ শাখা অপসারণ, অতিরিক্ত ফি কমানো, আনুসঙ্গিক ফি’র নামে অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন বন্ধ, অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি জানায়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন সপ্তম শ্রেণির আদ্রিনা ফেরদৌস আনুস্কা করতোয়া’কে জানায়, সরকারি প্রজ্ঞাপনে তাদের মাসিক বেতন ২৫০ টাকা এবং সেশন ফি যা আছে তার চেয়ে অনেক বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া আনুসঙ্গিক ফি’র নামে বিভিন্ন খাতে টাকা নেওয়া হচ্ছে। যেমন ইন্টারনেট, ডিজিটাল হাজিরা, পৌরকরসহ নানা খাতে আমাদের কাছে থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। এসব অতিরিক্ত টাকা নেওয়া বন্ধ এবং অধ্যক্ষসহ আরও দু’জন শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে আমরা এই আন্দোলন করছি।
আরও পড়ুননাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী করতোয়া’কে জানায়, গত বছর আমরা সেশন ফি’সহ অন্যান্য খাতে জানুয়ারি মাসে মোট টাকা দিয়েছি অনেক কম। এবার আমাদের বেতন ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫শ’ করা হয়েছে। যা আমাদের জন্য বহন করা খুব কষ্টসাধ্য। এদিকে ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ শাহাদৎ হোসেন জানান, আমরা শিক্ষার্থীদের বলেছি, যেসব খাতে বেশি টাকা নিচ্ছি বলে দাবি করা হয়েছে আমরা আলোচনার মাধ্যমে সেগুলো সমাধান করবো। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কোন কথাই মানতে রাজি নয়।
ওই প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আলম বলেন, বেতনের রশিদ পাওয়ার পরপরই শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। কোনভাবেই আমরা তাদের শান্ত করতে পারছিলাম না। সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসন ও যৌথ বাহিনী এসে তাদের শান্ত করে এবং অধ্যক্ষকে বাধ্যতামূলক ছুটি এবং আমরা কোথায় বেশি নিচ্ছি সেটার তদন্ত করার আশ্বাস দেন।
এছাড়া স্কুল ছুটি ঘোষণা করেন। জেলা শিক্ষা অফিসার রমজান আলী আকন্দ করতোয়া’কে জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক। সরকারি প্রজ্ঞাপনে মাসিক বেতন ও সেশন ফি’র যে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই তারচেয়ে বেশি অর্থ আদায় করে। ইয়াকুবিয়া স্কুল ও কলেজের ঘটনায় আপাততঃ ছুটি ঘোষণা করা হেয়েছে। পরে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আরাফাত হোসেন জানান, ওই প্রতিষ্ঠানের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটি তদন্ত করে যদি দেখে তারা বেশি অর্থ আদায় করছে তবে অবশ্যই প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন