ভিডিও সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলন ও ১৯ দফা দাবী

জবি প্রতিনিধি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ক্যাম্পাস সংস্কারের সুনির্দিষ্ট ১৯ টি দাবী নিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ দুপুর ১:৩০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে রফিক ভবনের নিচে তারা এটই সংবাদ সম্মেলন করে।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা শহরের মধ্যে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও এটি দীর্ঘদিন ধরে নানা সংকটে জর্জরিত। প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে আছে ছাত্রীদের একটি মাত্র আবাসিক হল। সেটিও সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। এর ফলে, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে পুরান ঢাকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত ক্যান্টিন সুবিধার অভাবে শিক্ষার্থীরা বাইরের খাবার খেয়ে প্রতিনিয়ত ভুগছে গ্যাস্ট্রিক, আলসারসহ নানাবিধ রোগ-ব্যাধিতে। মানসিকভাবেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভালো নেই। গত এক মাসে তিনটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে তারা তাদের শঙ্কার কথা প্রকাশ করে।

তারা আরো জানান, "সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট দীর্ঘকাল যাবৎ বিশ্ববিঠালয়ের এসব সংকট সমাধানের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করে আসছে। বিশ্বদ্যিালয় আইনে ২৭/৪ ধারা বাতিলের আন্দোলনসহ ২০১৬'র হল আন্দোলন, বর্ধিত ফি বাতিলের দাবিতে সফলভাবে আন্দোলন সংগঠিত করে আসছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। এছাড়াও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিনা বিচারে আটক ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন, ফাইরুজ অবন্তিকা হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে ছাত্র ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ আন্দোলন সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও আমাদের সংগঠন তার সর্বোচ্চ ভুমিকা পালন করেছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বিশ্বাস করে, বিশ্ববিদ্যালয় হলো অপার সম্ভাবনার একটি জায়গা। জ্ঞান উৎপাদনের কারখানা হিসেবে এটি সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।"

শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সুস্থ পরিবেশে জ্ঞানচর্চায়, গবেষণায় মগ্ন হবে এটাই কাম্য। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ তার সম্পূর্ণ বিপরীত। শিক্ষা রক্ষার লড়াইয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ ছাত্র সংগঠন হিসেবে আমরা বরাবরের মতো এসকল বিষয়ে সোচ্চার। তারা বলেন," বিগত জুলাই-আগস্টে আমরা একটি গণ-অভ্যুত্থানের স্বাক্ষী হয়েছি। দল-মত নির্বিশেষে সকল মানুষ এই অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। আমরাও একইভাবে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি। দীর্ঘ সময়ের ভয়, দখলদারিত্বের সংস্কৃতি কাটিয়ে ক্যাম্পাসগুলোতে গণতান্ত্রিক পরিবেশের আকাঙ্ক্ষা ফিরে এসেছে। দেশব্যাপী সংস্কারের আওয়াজ উঠেছে। একই আওয়াজ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতেও।"

এমন পরিস্থিতিতে নিম্নোক্ত ক্যাম্পাস সংস্কারের লক্ষ্যে তাদের অতীব প্রাসঙ্গিক দাবিসমূহ:

১. ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বমুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করে দ্রুততম সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে জকসু নীতিমালা সংযোজন করে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ, হল সংসদ ও বিভাগভিত্তিক শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।

২. ক্যাফেটেরিয়ার পরিধি বৃদ্ধিসহ উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ভর্তুকি প্রদান সাপেক্ষে ক্যাফেটেরিয়া ও ছাত্রী হলে ২০ টাকায় দুপুরের খাবার নিশ্চিত করতে হবে এবং রাতের খাবারের ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

৩. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন করে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে হবে।

৪. ২০২৬ সালের মধ্যে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে আবাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং আবাসন নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আবাসন ভাতা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. শিক্ষা ও গবেষণায় পর্যাপ্ত বাজেট নিশ্চিত করতে হবে। সকল শিক্ষার্থীর জন্যে গবেষণায় অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। আগ্রহী সকল শিক্ষার্থীদের গবেষণা তহবিলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আন্তর্জাতিক জার্নালে মানসম্মত গবেষণা প্রকাশনার জন্য শিক্ষার্থীদের আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে।

৬. শিক্ষক নিয়োগে গবেষণা ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা, শিক্ষার্থীদের সামনে ডেমো ক্লাস নেওয়ার প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। শিক্ষকদের পাঠদান দক্ষতা, গবেষণা ও নিরপেক্ষতা মূল্যায়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৭. মেডিকেল সেন্টারে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করে, পর্যাপ্ত ডাক্তার-নার্স, টেকনিশিয়ান নিয়োগসহ অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা বৃদ্ধি ও উন্নত চিকিৎসা সামগ্রী, পর্যাপ্ত ঔষুধ এবং স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা করতে হবে। কার্যকরী কাউন্সিলিং সেন্টার গঠন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

৮. উচ্চশিক্ষা ধ্বংসের হাতিয়ার 'ইউজিসির কৌশলপত্র' বাতিল করে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করতে হবে। অভ্যন্তরীণ আয়ের নামে শিক্ষার্থীদের বেতন বৃদ্ধি করা যাবে না এবং সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিল করতে হবে।

আরও পড়ুন

৯. প্রতিটি বিভাগে বৈশিষ্ট্যভিত্তিক একাডেমিক ল্যাব, ক্লাসরুমে প্রজেক্টর, পর্যাপ্ত বই, কম্পিউটার ও ফটোকপি মেশিনসহ আধুনিক শিক্ষাসুবিধা সহ উন্নত ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করতে হবে।

১০. যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে। ক্যাম্পাসে সংঘটিত যৌন নিপীড়ন, র‌্যাগিং ও নির্যাতনের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে নিপীড়নের ইন্ধনদাতা ও সমর্থনকারীদের যথাযথ বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

১১. বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আর্থিক লেনদেন জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে এবং বিগত সময়ের উন্নয়ন প্রকল্পের দুর্নীতিসহ সকল প্রশাসনিক দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।

১২. রেজিস্ট্রার ভবন, আইটি সেল, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরসহ প্রশাসনিক বিভাগে সকল অনিয়ম ও হয়রানি বন্ধে ডিজিটালাইজড সিস্টেম চালু করতে হবে। ওয়ান-স্টপ-সার্ভিস চালু করতে হবে।

১৩. শহীদ সাজিদ ভবনে পর্যাপ্ত লিফট স্থাপন করতে হবে। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত ওয়াশরুম এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিশেষায়িত ওয়াশরুম নিশ্চিত করতে হবে।

১৪. কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখতে হবে। লাইব্রেরির ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণ করতে হবে।

১৫. ক্যাম্পাসে বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। শাটল বাসের রুট বৃদ্ধি করতে হবে। সকল রুটে বাসের নিয়মিত চলাচল নিশ্চিত করতে হবে।

১৬. সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কার্যক্রমের জন্য বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি ও নিয়মিত সমাবর্তন করতে হবে।

১৭. ক্যাম্পাসের সামগ্রিক পরিবেশের মান উন্নত করতে হবে।

১৮. জুলাই গনঅভ্যুত্থানে গনহত্যার ইন্ধনদাতা ও সমর্থনকারীদের যথাযথ তদন্তপূর্বক প্রসাশনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১৯. শিক্ষার্থীদের পার্টটাইম কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের থেকে সহায়তাকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

 ছাত্র জীবনেই উন্নত জীবন গড়ার প্রস্তুতি নিতে হবে : আলী আজগর হেনা

৯ বছরে ‘ধ্রুব’র ‘ধ্রুব মিউজিক স্টেশন’

বগুড়ায় মজনু-রিপুসহ ৪৮৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নোবেল

বগুড়ার শাজাহানপুরে জিম্মি করে নার্সের পর্ণো ভিডিও ধারণ ও ধর্ষণের চেষ্টা, ১ জন গ্রেফতার

বিয়ে করলেন শাকিলা পারভীন