জয়পুরহাটের কালাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের দুর্ভোগ দুই লাখ মানুষের চিকিৎসা দিচ্ছেন ৬ জন চিকিৎসক

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি : কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক, নার্স ও আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। প্রয়োজনীয় ডাক্তার, নার্স, কর্মচারী এবং আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকায় সাধারণ মানুষ কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে রোগীর চাপ এতটাই বেশি যে চিকিৎসকরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
জানা যায়, প্রায় দুই লাখ মানুষের জন্য একমাত্র সরকারি এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৬ জন। গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। সার্জারি, শিশু স্বাস্থ্য, চক্ষু, কার্ডিওলজি, (নাক-কান-গলা), অর্থোপেডিকস এমনকি ডেন্টাল সার্জনের দুইটি পদের মধ্যে একটি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির মোট ১৯৪টি পদের মধ্যে ৯৩টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এসব পদ পূরণে কোনো কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় চিকিৎসাসেবা থমকে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ২৫০-৩০০ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। অথচ হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা মাত্র ৫০। বাস্তবে ৮০-১০০ জন রোগী নিয়মিত ভর্তি থাকেন, ফলে অনেক রোগীকে বারান্দা, সিঁড়ি এবং মেঝেতে অবস্থান করতে হয়। চিকিৎসক সংকটের কারণে রোগীদের সময়মত সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। সার্জারি বিভাগেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই।
বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর থাকার পরও চলে না। ফলে হাসপাতালে রাতের বেলায় অন্ধকারেই থাকতে হয় রোগীদের। ওয়ার্ডগুলোতে পানির সংকট ও টয়লেটের নোংরা অবস্থা রোগীদের জন্য আরও দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। জরুরি বিভাগের বেশিরভাগ পরীক্ষাও বেসরকারি ক্লিনিক থেকে করাতে হচ্ছে। চিকিৎসক সংকটের সুযোগ নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কিছু মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট নিজেদের ‘ডাক্তার’ পরিচয়ে রোগী দেখছেন। এর ফলে অনেক রোগী ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুনপৌরশহরের সড়াইল মহল্লার বাসিন্দা আবু বক্কর বলেন, আমার শিশু সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি ডাক্তার দেখাতে। এখানে এসে দেখি শিশু ডাক্তার নেই। কর্তব্যরত এক ডাক্তার বললেন জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে যেতে। এখানে ডাক্তার থাকলে আমার অর্থ ও সময় দুটোই সাশ্রয় হতো।
কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাহবুব উল আলম বলেন, সীমিত জনবল এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দিয়েই যতটুকু সম্ভব সেবা দিয়ে যাচ্ছি। শূন্য পদের বিপরীতে জনবল এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ ছাড়া মানসম্মত সেবা দেওয়া সম্ভব নয়।
মন্তব্য করুন