সুধী সমাজের প্রচেষ্টায় করতোয়া নদীকে দখল ও দূষণ মুক্ত করা সম্ভব : করতোয়া নদী রক্ষা সম্মেলনে বক্তারা

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ায় করতোয়া নদী রক্ষা সম্মেলন আজ সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শহরতলীর বনানীর কাছে এনজিও ফোরাম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন এএলআরডি এর নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মেজবাউল করিম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, সুধী সমাজের প্রচেষ্টা দ্বারা করতোয়া নদীকে দখল ও দূষণ মুক্ত করা সম্ভব।
এ নদী নিয়ে সামাজিক আন্দোলন দীর্ঘদিন যাবৎ আপনারা করে আসছেন। আপনাদের যৌক্তিক আন্দোলনে প্রশাসন পাশে থাকবে। কারণ আমরাও চাই এটি দখল ও দূষণ মুক্ত হোক। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয় বগুড়ার পরিচালক মোহা. আহসান হাবিব, পানি উন্নয়ন বোর্ড বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল হক, বগুড়া পৌরসভার শহর পরিকল্পনাবিদ মো.আল মেহেদী হাসান।
আলোচকদের মধ্যে অংশ নেন রুলফাও এর নির্বাহী পরিচালক আফজাল হোসেন, বাপা বগুড়ার সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল করিম দুলাল, নন্দন দাস, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ খানসহ প্রমুখ। আলোচনায় তারা বলেন, এক সময় বিশাল জলরাশির ঢেউ আছড়ে পড়ত নদীর দুইতীরে। নির্মল স্বচ্ছ পানিতে স্রোতেরগতি, কলকল শব্দ মানুষকে কাছে টানত। দুরন্ত কিশোরের দল ঝাঁপিয়ে পড়ত নদীর বুকে। আজ নদীটি কোথাও কোথাও শীর্ণকায় এক খাল।
কোনো কোনো জায়গায় সামান্য পানি চোখে পড়লেও তা দুষণে কালো হয়ে গেছে। এক সময়ের বিস্তৃত-স্রোতস্বিনী করতোয়া এখন অস্তিত্বের প্রবল সংকটে।‘আশির দশকে সুইস গেট নির্মাণের কারণে এ নদীভরাট, দখল ও দূষণের শিকারহয়। এ নদীতে এখন আর বড় বড় মাছ পাওয়া যায়না। কৃষি সেচে কোনো কাজে আসছেনা নদীর পানি। জলজ প্রাণীও এখন আর দেখা যায় না। এ অঞ্চলে মানুষের চর্মরোগ দেখাযাচ্ছে। এমন অনেক পরিবার আছে যাদের এ নদী ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।
নদীতে দূষণ বাড়ছে। পৌরসভার তরল বর্জ্যগুলো নদীতে পড়ছে। শহরের সব আবর্জনা এখানে এসে পড়ছে। নিকটবর্তী ছোট-বড় সব কলকারখানার বর্জ্যও এখানে পড়ছে। বদলে যাচ্ছে নদীকেন্দ্রিক প্রতিবেশও।’প্রশাসন ও জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টায় করতোয়া আবারও তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফিরে পাবে।
আরও পড়ুনএএলআরডি, সুইডেন সেভ্যারেজ, বাপা, পিইউপি, গাবতলী অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, পিএসইউএস, ওয়াটাররাইটস ফোরাম, পেসড, জাতীয় আদিবাসি পরিষদ, এমএমকেপি, মেরি সমাজকল্যাণ সংস্থা, স্বপ্ন, চাঁদপুর মানব উন্নয়ন সংস্থা, পরিবেশ প্রতিরক্ষা সংস্থা, রোপ, এমএমইউএস, শিলদহ বাড়ি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা, এসডাব্লিউও এভি ঐক্যবন্ধ হয়ে বগুড়ার প্রাণ করতোয়া নদী রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে নিরলস আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
জাতীয় ও স্থানীয় বেসরকারি সহযোগি সংস্থা সমূহ ইতিমধ্যেই নদী রক্ষায় বিভিন মানববন্ধন, সেমিনার ও জনসচেতনামূলক কর্মসূচি আয়োজন করে আসছে। এছাড়াও একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে এবং আদালতে রিট আবেদন করেছে। তাদের দাবি, অবিলম্বে করতোয়া নদী থেকে সব অবৈধ দখল সরিয়ে নেওয়া হোক। শিল্পবর্জ্য ফেলা বন্ধ করা হোক এবং নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা হোক।
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেলা রাজশাহী কার্যালয়ের সমন্বয়কারী তন্ময় কুমার স্যানাল, স্বাগত বক্তব্য দেন ফিল্ড এন্ড প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এএমএম মামুন এবং উদ্দেশ্য উপস্থাপন করেন স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালক জিয়াউর রহমান।
মন্তব্য করুন