বগুড়ায় প্রথমবার অনুষ্ঠিত শিল্পকর্ম প্রদর্শনী
রঙের ওপর রঙ চাপিয়ে আঁকানো প্রতিটি ছবিতে উঠে এসেছে নিসর্গের বৈচিত্রতা
_original_1740664249.jpg)
হাফিজা বিনা : একটি চিত্রকর্মের কাছে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ দেখছিলেন বগুড়া আজিজুল হক কলেজের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী সামিউল। বিখ্যাত শিল্পী ও ভাস্কর হামিদুজ্জামানের কয়েকটি কালার দিয়ে ছোট-বড় বৃত্ত নিয়ে আঁকা নিয়ে বড় একটি চিত্র কর্মের পাশে দাঁড়িয়ে বেশ দ্বিধায় পড়েছেন। পরে সাহায্য নেন আর্ট কলেজের একজন শিক্ষকের। তিনি তাকে বুঝিয়ে দেন সাধারণ চোখে আমরা যা দেখি তা শিল্পীরা দেখে না। এখানে শিল্পী শূন্য থেকে মানব সভ্যতা সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত শূন্যতেই মিশে যায়। এই প্রদর্শনীতে প্রদর্শন হচ্ছে দেশবরেণ্য শিল্পী আব্দুস শাকুর শাহর আঁকা শিল্পকর্ম। আরও আছে আইভি জামান খানের শিল্পকর্ম। তাদের শিল্পকর্মের সাথে সাথে প্রতিটি শিল্পকর্ম খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিলেন দর্শনার্থীরা।
বগুড়া আর্ট কলেজের নতুন ও সাবেক ২৩০ জন শিল্পীর আঁকা প্রায় আড়াইশ’ চিত্রকর্ম নিয়ে বগুড়া শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তনে গত সোমবার থেকে পাঁচ দিনব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ওয়েল কালার, এক্রেলিক কালার, ওয়াটার কালার, পেন্সিল ও পেন স্কেচ এবং ক্লে মাধ্যম দিয়ে করা শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে ২৫০টির বেশি ছবি ও ভাস্কর্য ছয়টি। বৃহস্পতিবার ছিল প্রদর্শনীর চতুর্থ দিন। এ উপলক্ষ্য শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়্
এ ব্যাপারে বগুড়ার আর্ট কলেজের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের প্রভাষক রবিউল ইসলাম বলেন, বগুড়ায় প্রথমবারের মতো এত বড় আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শিল্পকর্ম প্রদর্শনীটি। এখানে প্রদর্শিত প্রতিটি শিল্পকর্মে দেশ, সমাজ ও প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রদর্শনীতে কেউ এলেই এক পলকে ফ্রেমে বাঁধা চিত্রকর্মের নিপুণতার সঙ্গে দেশ, সমাজ ও প্রকৃতির মেলবন্ধনের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাবেন।
আরও পড়ুননতুন শিক্ষার্থী ঋদ্ধি মোহন্ত, নওরিন, প্রভা, মিনহাজ এবং সাবেক শিক্ষার্থী জয় প্রামানিক জানান, প্রথমবারের মতো এবার বগুড়ায় বিশাল শিল্পজগতের বিস্তার ঘটাতেই এ আয়োজনের উদ্যোগ। এখানে তাদের আঁকা পোর্টেট, আঁকা ছবি ও ক্লে দিয়ে করা শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। তারা জানান, শিল্পকর্মগুলো বিক্রি করা হবে। দর্শনার্থীদের কাছে দাম ধরা আছে দুই হাজার থেকে এক লাখ টাকা।
বগুড়া আর্ট কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী জাকিয়া সুলতান জুঁই বলেন, আমার চিত্রও এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। প্রতিটি শিল্প চিত্র সব বয়সের মানুষকে আগ্রহী করে তুলবে। গ্রামীণ অনেক চিত্র আছে যা শহরে বসবাস করা একটা শিশু বুঝতে পারে না। তাই অনেকে শিল্পীর চোখে এই চিত্রগুলো দেখে গ্রাম বাংলার ধারণা পাবে। এখানে প্রদর্শীত সবার আঁকা শিল্পকর্মগুলো বিশেষ বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। তিনি জানান, তার হাতে তৈরি করা ক্রাফটের কাজের প্রদর্শনী চলছে এবং বিক্রি করা হচ্ছে।
বগুড়ায় এই প্রথমবারের অনুষ্ঠিত শিল্পকর্ম প্রদর্শনে মা হুমায়রা ইসলাম তার ছেলে আহনাফ ও মেয়ে অনন্যাকে নিয়ে এসেছেন। শুরু থেকে প্রতিটি শিল্পকর্ম দেখছিলেন তারা। বললেন, তার ছেলে-মেয়ের আঁকার হাত বেশ ভালো। এই মাধ্যমেও এখন ভবিষ্যতে অনেক কিছু করা যায় তাই বোঝাচ্ছিলেন। নতুন-পুরাতন শিল্পীদের প্রতিটি শিল্পকর্ম ভালো লেগেছে তার। এমন প্রদর্শনী আরও করতে হবে, তাতে সাধারণ শিক্ষার মতো এসবের প্রতি আগ্রহ বাড়বে নতুনদের।
মন্তব্য করুন