ভিডিও বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

-বিচিত্র কুমার 

ছোট্ট রনির একুশে

ছোট্ট রনির একুশে

রনি মাত্র আট বছরের এক প্রাণোচ্ছল শিশু। সারাদিন খেলাধুলা, দৌড়ঝাঁপ আর দুষ্টুমিতেই তার সময় কেটে যায়। কিন্তু পড়াশোনায় তার মন বসে না, বিশেষ করে ইতিহাসের গল্প শুনলেই তার বিরক্ত লাগে। মা-বাবা বারবার বোঝান দেশের ইতিহাস জানা খুব জরুরি, বিশেষ করে একুশে ফেব্রুয়ারির মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোর কথা। কিন্তু রনি হেসে বলে, “এসব পুরনো দিনের কথা পড়ে আমার কী হবে? আমি তো আর যুদ্ধ করিনি!” তবে এবারের একুশে ফেব্রুয়ারির অভিজ্ঞতা রনির চিন্তা পুরোপুরি বদলে দিল। স্কুলে ঘোষণা দেওয়া হলো, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হবে।

শিক্ষকরা সবাইকে একুশের গুরুত্ব বোঝালেন। রনির বন্ধু শুভ উত্তেজিত হয়ে বলল, “একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের ভাষার জন্য লড়াই করার দিন!” কিন্তু রনি তখনো পুরোপুরি বিষয়টা বুঝতে পারছিল না। সে শুধু ভাবল, “আচ্ছা, ভাষার জন্যও কেউ লড়াই করতে পারে?” সেদিন সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে সে মাকে জিজ্ঞেস করল, “মা, ভাষার জন্য কেন লড়াই করতে হয়েছিল?” মা মৃদু হেসে তাকে পাশে বসালেন। তারপর বললেন, “১৯৫২ সালে, তখন আমাদের দেশ পাকিস্তানের অংশ ছিল। সরকার ঘোষণা করল, উর্দুই হবে রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ তো বাংলায় কথা বলে! তাহলে বাংলা বাদ দিয়ে কীভাবে চলবে? তাই ছাত্র-জনতা প্রতিবাদ করল। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে ঢাকার রাজপথে পুলিশের গুলিতে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ অনেকেই শহিদ হন।”

রনি বিস্মিত হয়ে বলল, “তারা কি শুধু বাংলায় কথা বলার জন্য মারা গিয়েছিল?” মা মাথা নাড়িয়ে বললেন, “হ্যাঁ, বাবা। তারা লড়াই করেছিল, যাতে আমরা বাংলায় কথা বলতে পারি।” রনির বুকটা কেমন যেন কেঁপে উঠল। এতদিন সে যেটাকে ‘পুরনো দিনের গল্প’ বলে উড়িয়ে দিত, সেটাই যে তার নিজের ভাষার জন্য সবচেয়ে বড় আত্মত্যাগের কাহিনি, সেটা সে বুঝতে পারল। ২১ ফেব্রুয়ারির ভোরবেলা রনি খুব আগ্রহ নিয়ে উঠে পড়ল। বাবা-মায়ের সঙ্গে সে স্কুলে গেল। সবাই সাদা-কালো পোশাক পরে এসেছে। শহিদ মিনারের দিকে যেতে যেতে সে দেখল, চারদিকে বাংলা বর্ণমালা লেখা ব্যানার, ফুল হাতে মানুষ আর বুকভরা শ্রদ্ধা। স্কুলের শিক্ষকরা বললেন, “এক মিনিট নীরবতা পালন করো, শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাও।”

আরও পড়ুন

তারপর তারা সবাই মিলে গাইল
"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারি,
আমি কি ভুলিতে পারি?"

রনির মনে হলো, আজ সে অন্যরকম এক অনুভূতির মধ্যে আছে। বুকের ভেতর কেমন যেন আবেগে ভরে উঠল। সে অনুভব করল, এই ভাষা শুধু কথা বলার মাধ্যম নয়, এটা তার পরিচয়, তার আত্মার অংশ। স্কুলে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রনি বাংলা ভাষার গুরুত্ব নিয়ে একটি কবিতা আবৃত্তি করল। মা-বাবা গর্বিত হয়ে তাকিয়ে দেখছিলেন তাদের ছেলেকে। সেদিন রাতে রনি মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “মা, আমি বাংলা ভাষাকে ভালোবাসি! আর কখনো বলব না যে ইতিহাস পড়তে ভালো লাগে না!” মা হাসলেন, চোখের কোণে জল চিকচিক করল। রনির ছোট্ট মনেও একুশের চেতনার আলো জ্বলে উঠল।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রূপপুর প্রকল্পের প্রথম ইউনিটে সফলভাবে স্থাপিত হলো টারবাইন

গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচিত সরকার ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়- সাবেক এমপি কাজী রফিক

জামায়াতের পক্ষ থেকে অর্থ সহযোগিতা পাচ্ছেন নৌকাডুবিতে বাবা-মা হারানো ছোট্ট দিপু

বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে গণহত্যা দিবস পালন

বগুড়ার ধুনটে ২ ফ্রিল্যান্সারকে অপহরণের পরিকল্পনাকারী পুলিশ গ্রেফতার

বগুড়ায় ঈদের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু : প্রথম দিন দীর্ঘ লাইন