ঈদযাত্রায় লঞ্চ চলাচলে কঠোর বার্তা নৌ-পরিবহন উপদেষ্টার

নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ঈদযাত্রায় লঞ্চে নির্ধারিত ভাড়ার বেশি নেয়া যাবে না। যাত্রীদের নির্ধারিত ভাড়া তালিকাভুক্ত করে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হলে শুধু জরিমানা নয়, সেই লঞ্চের রুট পারমিটও বাতিল করা হবে।
আজ বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সচিবালয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর-২০২৫ উপলক্ষ্যে নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে প্রস্তুতিমূলক সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান। উপদেষ্টা জানান, ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে নৌচলাচলের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সিদ্ধান্তগুলো ১৫ রমজান থেকে বাস্তবায়ন শুরু হবে। জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত রাস্তাটি উন্মুক্ত রাখতে হবে। বাস যাত্রাপথে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে রাস্তা বন্ধ করতে পারবে না। আমি পুলিশকে অনুরোধ করেছি, তারা তিনটি জায়গায় র্যাকার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন। প্রয়োজন হলে বাস উঠিয়ে নিয়ে যাবেন। গোলাপ শাহ মাজার থেকে সদরঘাট পর্যন্ত এমন একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা হয়, কেউ ৩টার সময় রওনা হলেও ৭টার লঞ্চ ধরতে পারে না। একটা সভ্য দেশ, সভ্য শহরে এটা হয় না। তিনি বলেন, রাতে স্পিডবোট ও বাল্কহেড চলবে না, একটি লঞ্চ আরেকটি লঞ্চের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে না। লঞ্চের ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকতে হবে। ফিটনেস ইন্সপেকশন কালকে থেকেই শুরু হবে। মালিকদের বলব তারা যাতে ফিটনেস সার্টিফিকেটটা নিয়ে নেন। তা না হলে রাস্তায় যদি তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে সরকার দায়ী থাকবে না। যাত্রী নামিয়ে বাস ফেরিতে উঠানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
লঞ্চের কোনো সিরিয়াল ব্রেক করা যাবে না উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, আমি শুধু মুখে মুখে বলছি না, এখানে মালিক সমিতির লোকজন আছেন, তাদের সামনে বলা হয়েছে-সিরিয়াল ভাঙলে ওই লঞ্চের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া হবে। দরকার হলে তার লাইসেন্স সাসপেন্ড করব। সে যেই হোক, তার যতই ক্ষমতা থাকুক। সরকারের আইনের চেয়ে বড় ক্ষমতাধর আর কিছু নেই দুনিয়াতে। তিনি বলেন, লঞ্চ মালিকরা নির্ধারিত ভাড়ার বেশি ভাড়া নেবেন না। এখন যাত্রী কম হওয়ায় তারা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া নিচ্ছেন। আগামী ১৫ রমজান থেকে নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হবে। আজকে-কালকের মধ্যে ওনারা ভাড়া টানিয়ে দেবেন, যাতে যাত্রীরা দেখতে পারেন নির্ধারিত ভাড়াটা কি, আর উনারা কি ভাড়া নিচ্ছেন।
উপদেষ্টা বলেন, লঞ্চে যাত্রীদের নিরাপত্তায় একজন কমান্ডার ও তিনজন আনসার থাকবে। আনসারদের আচরণের বিষয়ে ইতোমধ্যে বলা হয়েছে। আনসারদের যাত্রীদের সুরক্ষা দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো কাজ নেই। কোনো লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে পারবে না। এ বিষয়ে আমাদের ইন্সপেক্টররা থাকবেন। শুধু সদরঘাটে না রাস্তায় কোন জায়গা থেকে যদি অতিরিক্ত যাত্রী নেন কোনো লঞ্চ মালিক, সেজন্য কোস্টগার্ডকে বলা হয়েছে। নৌবাহিনীকেও বলা হয়েছে। কারণ নৌবাহিনীকে গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া আছে। নৌপুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড অহেতুক কোন লঞ্চে উঠে তল্লাশি করবে না জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, যদি সেটা করা হয়, আমি লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে বলবো, তারা একটা অভিযোগ দেবেন, আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব। তিনি আরও বলেন, ঘাটগুলোতে কুলিদের ইউনিফর্ম ও নেইম প্লেট থাকতে হবে। যদি না থাকে সেই ইজারাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুনআমরা সবসময় দেখি অতিরিক্ত ভাড়া ও যাত্রী না নেওয়া সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ঈদের সময় যখন যাত্রীর চাপ হয় তখন এ নির্দেশনা কেউ মানে না-এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, এবার কি হবে আমি জানি না। বলা হয়েছে, শুধু জরিমানা নয়, ওই লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হবে। এবার সবকিছু আমি নিজে দেখব। আমি নিজেই সদরঘাটে যাব।
মন্তব্য করুন