ইফতারিতে বাড়তি কদর বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী টক দইয়ের
_original_1741267419.jpg)
শাওন রহমান : দইয়ের জেলা বগুড়া। পবিত্র সিয়াম সাধনার মাসে ইফতারিতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের তৃষ্ণা মেটাতে বিশেষ চাহিদা তৈরি করেছে বগুড়ার বিখ্যাত টক বা সাদা দই। সারাদিন সিয়াম সাধনার পর ইফতারে শরীর শীতল করা টক দই দিয়ে বানানো শরবত বা ঘোল বেশ জনপ্রিয়। ২০২৩ সালের ২৬ জুন ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি পাওয়া শতবর্ষের ঐতিহ্য আর খাঁটি দুধের মিশেল তৈরি বগুড়ার দই শুধু এ জেলায় সীমাবদ্ধ নেই।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন ইফতারি বাজারে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই টক দই। নানাবিধ পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ টক দই রোজাদারের শরীরের ক্লান্তি দূর করে। দুধের চেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনসমৃদ্ধ টক দইয়ে রয়েছে বিভিন্ন উপকারী ব্যাকটেরিয়া, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল ও ফসফরাসের মতো উপাদান। নিয়মিত টক দই খেলে হজমশক্তির পাশাপাশি রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।
প্রকৃতি থেকে শীতকাল চলে গেলেও শীতের আমেজ এখনও কাটেনি। ফলে রমজানে এখনও সেভাবে টক দই বিক্রি জমে ওঠেনি। তারপরেও টক দই তৈরি ও বিক্রি থেমে নেই। তবে বিক্রেতারা অপেক্ষায় আছেন তাপমাত্রা বাড়ার, কারণ তাপমাত্রা বাড়লেও বাড়বে তাদের বিক্রি। রমজানে বগুড়া শহরের দইয়ের দোকান এবং ফুটপাতে বসা দোকানগুলোতে এখন মিষ্টি দইয়ের তুলনায় টক দই বেশি থাকছে। এছাড়াও ভারে করে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারাও টক বা সাদা দই নিয়ে ঘুরে ফেরেন শহরজুড়ে। রমজানে টক দইয়ের বিক্রি বাড়ে অন্যান্য সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ। তাইতো ইফতারি বিক্রির অস্থায়ী দোকানগুলোতেও থাকে টক দইয়ের পসরা।
টক দই কিনতে আসা মালতিনগরের শাহ আলম সরকার জানান, সারাদিন রোজা রাখার পর ক্লান্তি দূর করতে সাদা দইয়ের ঘোল বেশ উপকারী। পরিবারের সবাই এটা পছন্দ করে। তার পরিবারের ইফতারিতে টক দইয়ের ঘোল নিয়মিতই রাখতে হয়। আরেক টক দই ক্রেতা নাজনিন সুলতানা বলেন, রোজার ইফতারে তৃষ্ণা মেটাতে টক দইয়ের বিকল্প নেই। টক দই স্বাদে ও মানে ভালো। রমজান মাসের প্রত্যেকটা দিনই টক দই দিয়ে তৈরি শরবত থাকে আমাদের ইফতারিরর মেন্যুতে।
আরও পড়ুনবছরজুড়ে বগুড়া শহরে ফেরি করে দই বিক্রি করেন গাবতলী উপজেলার দুর্গাহাটার ঘোষপাড়ার সুজন ঘোষ। রমজান মাসে মালতিনগরের বকশিবাজরের সামনে নিয়মিত ভারে করে নিজের তৈরি দই বিক্রি করবেন তিনি। সুজন ঘোষ বলেন, রমজানের মিষ্টি দইয়ের চেয়ে টক দইয়ের চাহিদা বেশি থাকে। রমজানে ইফতারিতে টক দই দিয়ে তৈরি শরবতের জন্য রোজাদাররা তার নিয়মিত ক্রেতা। তাই টক দইয়ের বিক্রি এসময় বেশি হয়, তবে গত বছরের তুলনায় গরম কম থাকায় বিক্রি কিছুটা কম, তারপরেও বিকেলের আগেই সব দই বিক্রি হয়ে যায়।
পার্ক রোডে বসা একই উপজেলার হাতিবান্ধা গ্রামের সজীব ঘোষ বলেন, সারা বছর মিষ্টি দই বেশি তৈরি করি। তবে রোজা আসলে মিষ্টি দই কমিয়ে দিয়ে সাদা দই বেশি তৈরি করি। কারণ এ মাসে মিষ্টি দইয়ের তুলনায় সাদা দই বেশি চলে। বিকেল হতে না হতেই ভারে থাকা সব দই দই শেষ হয়ে যায়।
শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথাস্থ মহরম আলী দই ঘরের ব্যবস্থাপক প্রবীণ ব্যক্তি মমিনুল ইসলাম বলেন, বগুড়ার দইয়ের কদর দেশের গন্ডি ছেড়ে বিদেশেও। মিষ্টি ছাড়াও টক দইয়ের খ্যাতিও কোন অংশ কম নয়। তবে রমজানে মিষ্টি দইয়ের তুলনায় টক দইয়ের উৎপাদন ও বিক্রি বেশি হয়। ইফতারিতে বহুকাল ধরেই টক দইয়ের ঘোল বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত শীতের আমেজ না কাটায় সেভাবে বিক্রি জমে ওঠেনি।
বগুড়ায় বিভিন্ন মানের ও আকারের টক দই ৭০ থেকে থেকে ৪শ’ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বগুড়া শহর এবং এর আশপাশে রয়েছে দইয়ের তিন শতাধিক দোকান। এসব দোকানে প্রতিদিন প্রচুর দই বিক্রি হয়। তবে বগুড়ার দইয়ের স্বাদ, গুণগত মান, ঘনত্ব ও সঠিক ওজন আগের মতো নেই বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। তারা বলছেন, রমজান বা ঈদে বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে অতিলাভের আশায় বগুড়ার দইয়ে সুনাম নষ্ট করছেন। এসব অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গাভীর তরল খাঁটি দুধের পরিবর্তে গুঁড়া দুধ, স্টার্চ ও অন্যান্য রাসায়নিক উপাদানে দই তৈরি করছেন। ক্রেতারা আসল ও নকল দইয়ের পার্থক্য করতে না পাড়ায় ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী বগুড়ার দইয়ের সুনাম ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে।
মন্তব্য করুন