ভিডিও বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারী মুক্তি আন্দোলন

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারী মুক্তি আন্দোলন

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ১৯১০ সালে ডেনমার্কে অনুষ্ঠিত নারীদের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই দিনটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তারপর থেকে দিনটি ঘটা করে পালন করা হতো সমাজতন্ত্রী শিবিরে। সোভিয়েত বিপ্লবের পর নারী দিবস সমাজতান্ত্রিক শিবিরে নারী মুক্তি আন্দোলনের অনুপ্রেরণাদায়ক দিন হয়ে দাঁড়ায়।

১৯৮৪ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। তারপর থেকে প্রায় সব দেশেই দিনটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় মানব সমাজ কতটা এগোলো সে বিশ্লেষণও করা হয় এই দিনে। বাংলাদেশে নারী উন্নযনকে টেকসই উন্নয়নের পথ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারীর উন্নয়ন ছাড়া যে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয় এটি অনুধাবন করে প্রতিটি সরকার এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করেছে। এর ফলে দেশের রাজনীতিতে নারীরা দ্রুত স্থান করে নিতে সক্ষম হচ্ছে।

বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় প্রতি বছর। দিবসটি নারীকে সচেতন করে তোলার কাজটি সুচারুভাবে করছে বলেই প্রতীয়মান হয়। একটি সমাজে নারীকে বাদ দিয়ে সুষম সমাজের কথা চিন্তা করা যায় না। নারী- পুরুষ নির্বিশেষে সম অধিকারের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সমাজই হচ্ছে একটি আদর্শ সমাজ ব্যবস্থা। যদি সমাজে নারীরা পিছিয়ে থাকে তাহলে গোটা সমাজ ব্যবস্থার ওপরই তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। নারীকে সমঅধিকার সম্পন্ন মানুষ হিসেবে বিবেচনা না করার প্রবণতা সমাজ ও দেশকে পেছন দিকেই টেনে নেয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানোই সভ্যতা ও সংস্কৃতির দায়। একই সঙ্গে রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সমাজেরও। কবি নজরুল ইসলাম তো আগেই বলেছেন, ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর, বাংলাদেশে কয়েক দশক ধরে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে-যা অস্বীকার করা যাচ্ছে না। আবার নাগরিক হিসেবে পুরুষের সমান অধিকার থাকা সত্ত্বেও নারীরা অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত। নারী সহিংস অপরাধের শিকার হলে তার যথাযথ প্রতিকার পাওয়ার আইনি বিধান ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ধর্ষণ থেকে শুরু করে অন্যান্য সহিংসতার শিকার নারীদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

বিশেষত, ধর্ষণের অপরাধ আদালতে প্রমাণ করার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সহ সমাজের ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালীদের পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি এখনো বাধা হিসেবে কাজ করে। মাঝে মধ্যে যেসব তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় তা থেকে জানা যায় ৮৭ শতাংশ নারী নিজের ঘরেই নিগ্রহের শিকার, গণপরিবহণে যৌন নিপীড়নের শিকার ৯৪ শতাংশ নারী। নারীর নিরাপত্তার অবস্থা যখন এমন হতাশাব্যঞ্জক, তখন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডসহ নানা ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে-এটা সার্বিক বিবেচনায় কতটা অগ্রগতি, তা ভেবে দেখার বিষয়।

আরও পড়ুন

ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক মনস্তাত্বিক বৈষম্য সত্ত্বেও গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড কিছুটা বেড়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ক্ষেত্রে নারীর অবস্থার উন্নতি হয়েছে এবং হচ্ছে। লিঙ্গসমতা সূচকে বাংলাদেশের নারীদের অবস্থান এখন পার্শ্ববর্তী ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের নারীদের তুলনায় উন্নত হয়েছে। কিন্তু অধিকারের সম্পূর্ণ সমতা আসেনি। চাকরি ক্ষেত্রে নারী সমান সুযোগ থেকে বঞ্চিত, নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীদের মধ্যে নারী পুরুষের চেয়ে কম মজুরি পান।

শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের সমান, কখনো বা তারও বেশি মেধার পরিচয় দিচ্ছেন। অধিকার প্রশ্নে নারীরা আজ অনেক বেশি সোচ্চার, তাদের অনেকেই মুখ বুজে অন্যায় মেনে না নিয়ে প্রতিবাদ করছেন। নারীরা এগিয়ে আসছেন, ব্যবধান ঘুচছে এ খবর অবশ্যই আমাদের আশা জাগায়। তবে এই অগ্রযাত্রাকে আরো বেগবান করতে হবে। নারীর অন্তহীন সংগ্রামের জয় হোক। নারী শক্তির উজ্জীবনে মহিমান্বিত হোক পৃথিবী। নারী-পুরুষের মিলিত প্রয়াসে আসবে সর্বজনীন প্রগতি - সে প্রত্যাশা কাম্য আমাদের।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ার শাজাহানপুর ভূমি অফিস পরিদর্শন করলেন জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা

প্রথম একসঙ্গে ‘ইত্যাদি’র মঞ্চে হাবিব-প্রীতম

আইপিএলের প্রথম পর্বে নেই ১১ কোটি রুপির গতিতারকা

সিনেমায় নয়, এখন নাটকেই বেশি ব্যস্ত সারা জেরিন

বগুড়ার শেরপুরে চোরচক্রের ২ সদস্য গ্রেফতার : ২৯টি  ব্যাটারি ও ১০৫টি গ্যাস সিলিন্ডার উদ্ধার

কাবাডিতে ব্রোঞ্জ জয়ি মেয়েদের জন্য ক্রীড়া উপদেষ্টার অনুদান