নওগাঁর পোরশায় কৃষকদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে আম

পোরশা (নওগাঁ) প্রতিনিধি : আম বদলে দিয়েছে নওগাঁর পোরশা উপজেলার কৃষকদের ভাগ্য। আগে ধান ছিল এ উপজেলার প্রধান অর্থকরী ফসল। আর এখন আম হচ্ছে এখানকার প্রধান অর্থকারী ফসল। এখানে ধানের তুলনায় আমে প্রচুর টাকা আয় হচ্ছে। তাই এ উপজেলার কৃষকরা আবাদি জমিতে এখন আম গাছ রোপনে ঝুঁকে পড়েছেন। তবে আম গাছের নিচে সাথি ফসল হিসাবে বিভিন্ন জাতীয় ফসল চাষ করতে পারছেন কৃষকরা। ফলে এখানকার কৃষকদের আয়ের উৎস বেড়ে গেছে। বর্তমান সময়ে পোরশার সকল আম বাগানে মুকুলে ভোরে গেছে। এ বছর আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা।
জানা যায়, পোরশা উপজেলায় বানিজ্যিকভাবে গত ২৫ বছর পূর্ব থেকে আমগাছ রোপণ শুরু করা হলেও, গত ২০০৫ সাল নাগাত থেকে এ উপজেলার কৃষকরা ব্যাপক ভাবে আম গাছ রোপণ করা শুরু করেন। এবং বর্তমান সময়ে কৃষকরা আমগাছ রোপন করতে ব্যাপক ভাবে ঝুঁকে পড়েছেন।
কৃষকদের দেয়া তথ্য মতে, এখন ১ বিঘা (৩৩শতক) আবাদি জমিতে ধান হয় ১৫-২০ মোন। যার মূল্য ২১-২৮ হাজার। ধান চাষ করতে প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় প্রায় ১৫-১৮ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে কৃষকদের হাতে থাকে প্রায় ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। আর অন্যান্য বছরের মতো এ বছর যদি ধানের দাম কম হতো তাহলে লোকসান অথবা লাভ না হয়ে সমান সমান অবস্থায় থাকতো বলে অভিমত কৃষকদের।
অপরদিকে আম চাষিদের দেয়া তথ্য মতে, ১ বিঘা (৩৩শতক) জমিতে বড় সাইজের আমগাছ রোপণ করা যায় প্রায় ২০ পিছ। আর আমরূপালী জাতীয় গাছ হলে বিঘাপ্রতি প্রায় দেড় শতাধিক আম গাছ রোপণ করা যায়। প্রতি বিঘা আমের বাগানে খরচ বাদে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় কর যায় বলে জানান আম চাষিরা। যে কারণে এ উপজেলার কৃষকরা ধানের চাষাবাদ ছেড়ে দিয়ে এখন আমের উপর ঝুঁকেছেন।
আরও পড়ুনউপজেলা কৃষি অফিস জানায়, পোরশা উপজেলায় মালিকানাধীন জমির পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার একর। এর মধ্যে আমের বাগান তৈরি হয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার একরেরও বেশি জমি। তবে আম চাষিদের হিসাব মতে, পোরশা উপজেলার মোট জমির পরিমাণের প্রায় অর্ধেকের বেশি জমিতে ছোট, বড়, মাঝারীসহ সকল ধরনের সাইজের আম গাছ রোপণ করা হয়েছে।
আম গাছ রোপণ করাকে ঘিরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে অনেক নার্সারী। যারা আম গাছ রোপণ করছেন তারা নার্সারী থেকে গাছ কিনে এনে জমিতে রোপণ করছেন। উপজেলার সহড়ন্দ গ্রামের আমচাষি রমজান আলী জানান, তিনি তার দেড় বিঘা জমিতে ধান পেতেন ২২-২৫ মণ, যার বর্তমান মূল্য সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকা। বেশ কয়েক বছর পূর্বে ঐ জমিতে লাগানো হয়েছে আম গাছ। বর্তমানে ঐ জমির আম গাছ থেকে প্রতি বছর আয় করেন তিনি প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মামুনূর রশিদ জানান, পোরশায় প্রতি বছর আম গাছ রোপণের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ জন্য প্রতি বছর আমের উৎপাদন লক্ষমাত্রাও বাড়ছে। আম উৎপাদনে চাঁপাইকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম নওগাঁ জেলা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের তুলনায় এ বছর ব্যাপক আম উৎপাদন হবে বলে তিনি জানান।
মন্তব্য করুন