নাটোরের সিংড়ায় প্রাইভেটকারে তল্লাশি
নাটোরের সিংড়ায় প্রাইভেটকারে তল্লাশি, গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে পাওয়া গেল ৩৭ লাখ টাকা

নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের সিংড়ায় একটি প্রাইভেটকারে তল্লাশি চালিয়ে গাইবান্ধার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী পরিচয়দানকারী মো. সাবিউল ইসলামের কাছ থেকে ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা জব্দ করেছে পুলিশ। একই সাথে গাড়িটি জব্দ করে ওই প্রকৌশলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের চলনবিল গেট এলাকায় পুলিশের নিয়মিত চেকপোস্টে তল্লাশির সময় এ টাকা ও গাড়ি জব্দ করা হয়।
আজ শুক্রবার (১৪ মার্চ) দুপুরে জব্দকৃত একটি প্রাইভেটকার ও নগদ ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকাসহ থানা হেফাজতে রেখে শর্ত সাপেক্ষে মুচলেকা নিয়ে ওই নির্বাহী প্রকৌশলীকে জামিন দিয়ে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, দুদক বা আদালতে তলব করা মাত্র, তাকে যথাসময়ে হাজির হতে হবে এমন মুচলেকা দেন তিনি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণর জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকে আবেদনসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পাঠানো হচ্ছে। তারাই তদন্ত সাপেক্ষে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আসমাউল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, জব্দকৃত একটি প্রাইভেটকার ও নগদ ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা থানা হেফাজতে রাখা আছে। দুদক অথবা সংশ্লিষ্ট আইন শৃংখলা বাহিনী চাওয়া মাত্র আইনি প্রক্রিয়ায় তা প্রদান করা হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের চলনবিল গেট এলাকায় পুলিশের নিয়মিত চেকপোস্টে তল্লাশির সময় একটি প্রাইভেটকারে তল্লাশি চালিয়ে গাইবান্ধার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী পরিচয়দানকারী মো. সাবিউল ইসলামের কাছ থেকে ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা জব্দ করে পুলিশ।
একই সাথে গাড়িটি জব্দ করে ওই প্রকৌশলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। এর আগে রাত ১২টার দিকে মহাসড়কের চলনবিল গেট এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছিল পুলিশ। এসময় গাইবান্ধা থেকে রাজশাহীগামী একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকার থামানোর সিগন্যাল দেওয়া হয়। ওই প্রাইভেটকারে টাকাগুলো পাওয়া যায়।
পরে খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. একরামুল হক, সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাজাহারুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (সিংড়া) সার্কেল সনজয় কুমার সরকার, নাটোর সদর থানার ওসি মাহাবুর রহমান, সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসমাউল হক এবং সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ টিম ঘটনাস্থলে যায়। গাড়িতে ছিলেন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাবিউল ইসলাম। তিনি রাজশাহী মহানগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি বর্তমানে গাইবান্ধায় এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। তার আদি বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায় বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুনওসি আরাও বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের চলনবিল গেট এলাকায় পুলিশের নিয়মিত চেকপোস্ট বসানো হয়। এসময় সন্দেহভাজন একটি প্রাইভেটকারে তল্লাশি চালিয়ে কালোব্যাগ ভর্তি টাকা দেখতে পায় পুলিশ। গাড়ির আরোহীর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে গাইবান্ধার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বলে পরিচয় দেন। এতে সন্দেহ হলে প্রাইভেটকার, টাকাসহ আরোহী সাবিউল ও চালককে আটক রেখে বিষয়টি পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়।
পরে উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে গাড়িতে থাকা ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা পান। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় টাকা ও প্রাইভেটকারটি জব্দ করে ওই প্রকৌশলীকে থানা হেফাজতে নেওয়া হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। জিজ্ঞাসাবাদে তার টাকার উৎসের সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি। তবে তিনি গাইবান্ধার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। পরে তাকে শর্ত সাপেক্ষে মুচলেকা নিয়ে জামিন দেয়া হয়েছে। তবে যখনই আইন শৃঙাখলা বাহিনী, দুদক কিংবা আদালত তাকে তলব করবে, তখনই তাকে যথা সময়ে হাজির হতে হবে এমন শর্ত দেয়া হয়েছে।
ওসি বলেন, এলজিইডির প্রকৌশলী পরিচয়দানকারী সাবিউল ইসলাম পুলিশকে প্রথম দিকে জানিয়েছিলেন যে তার কাছে জমি বিক্রির ৩০ লাখ আছে। পরে গুনে আরও ছয় লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা বেশি পাওয়া যায়। এসব টাকা আদৌ জমি কেনা বেচার বৈধ টাকা নাকি ঘুষের টাকা তা খতিয়ে দেখবে দুদক। তাই তার বিরুদ্ধে তদন্ত করাসহ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকে আবেদনসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পাঠানো হচ্ছে। তারাই তদন্ত সাপেক্ষে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। তাছাড়া এখনও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, বিষয়টি তদন্তের পর্যায়ে রয়েছে।
এব্যাপারে এলজিইডির প্রকৌশলী পরিচয়দানকারী সাবিউল ইসলাম জানান, জমি বিক্রির বৈধ টাকা নিয়ে গাইবান্ধা থেকে রাজশাহী যাচ্ছিলেন তিনি। এটা তার বৈধ টাকা। তার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে দুদকে মামলা হয়েছে কিনা এবং দীর্ঘদিন একই এলাকায় কর্মরত থাকায় চাকরির বিধি লংঘন করেছেন কিনা তা জানতে চাইলে তিনি এসব বিষয়ে আর কোন কথা বলতে রাজি হননি। বরং এ নিয়ে সংবাদ না করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
মন্তব্য করুন