ভিডিও সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করুন

ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করুন। প্রতীকী ছবি

দেশে ভয়াবহ হারে বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা। প্রতিদিনই পত্রিকায় আসছে ন্যক্কারজনক এই ঘটনার একাধিক খবর। আড়াই বছরের কন্যাশিশু থেকে বৃদ্ধা কেউ নিরাপদ নয়। একজন মেয়ের সারাজীবনের অপূরণীয় শারীরিক মানসিক ক্ষতি এবং সম্মানহানীর এই ঘৃণ্য অপকর্ম আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো বিচারকাজ দ্রুত নিষ্পত্তি না হওয়া এবং আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তির কথা থাকলেও কার্যকর না হওয়া।

আইনে নারী নির্যাতন মামলার বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও তা পাঁচ বছরেও শেষ হয় না। ফলে মানুষ ঘটনার কথা ভুলে যায়, রেশ কেটে যায়। যেখানে শাস্তির প্রধান উদ্দেশ্যই অপরাধীকে সতর্ক করা সেটিই হচ্ছে না মামলা ঝুলিয়ে রাখার কারণে। শুধু তাই নয় আইনের এই হয়রানির কারণে ভুক্তভোগীর পরিবারও আইনের দ্বারস্থ হয় না।

২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিমকোর্টে জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, ট্রাইব্যুনাল যদি ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হয় তাহলে কারণ সংবলিত প্রতিবেদন ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিমকোর্টে দাখিল করতে হবে, তবে সেই নজির খুব একটা নেই। বেশিরভাগ মামলা এই সময়ের মধ্যে শেষ হয় না। ফলে নারী নির্যাতনের লাগাম কোনোভাবেই টানা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বাড়ির বাইরে বা ভেতরে এমনকি নিকটাত্মীয়দের দ্বারাও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে কন্যাশিশুরা। ২০২৪ সালে ২২৪ টি কন্যাশিশু ধর্ষণের ঘটনা শুধু পত্রিকাতেই এসেছে।

তবে এই সংখ্যা বাস্তবে দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যাবে এটা অসম্ভব কিছু নয় কারণ অর্ধেকের বেশি ঘটনা প্রকাশ্যে আসে না, অথবা ধামাচাপা দেওয়া হয়। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৮১ জন শিশুকে এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে ১৩৩ জন শিশু। শুধু এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট যে বাংলাদেশে নারীদের নিরাপত্তা কোন পর্যায়ে রয়েছে। এম এস এফের রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছর (২০২৫) শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই ২৯৫টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। যা গতমাসের তুলনায় ২৪টি বেশি। ধর্ষণ করা হয়েছে ৫৭ জনকে। গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৭ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২ জনকে।

শুধুমাত্র বিচারে বিলম্ব এবং আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তির কথা থাকলেও প্রয়োগের অভাবে ধর্ষণের মতো ভয়াবহ অপরাধ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে গিয়েছে। আড়াই মাসের শিশু থেকে শুরু করে কবরে যাবার আগ পর্যন্ত এমনকি মর্গেও নারীদের এই পৈশাচিকতার মুখোমুখি হবার নজির রয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও কতগুলো শাস্তির খবর পাওয়া যায় সেটাই ভাবনার বিষয়। দায়িত্বশীলরা নারী দিবস ঘিরে শুভেচ্ছাবার্তা আর হাঁকডাকেই সীমাবদ্ধ থাকেন।

বাস্তবে দ্রুত বিচার এবং নিশ্চিত বিচার খুব একটা চোখে পড়ে না। অথচ প্রতিটি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। একজন নারী তার স্বামী অথবা ভাইয়ের সাথে ঘুরতে বেরিয়েও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে যা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে। তাহলে একজন নারীর নিরাপত্তা দিতে রাষ্ট্র কতটা ব্যর্থ এটি বলার অপেক্ষা রাখে না।

আরও পড়ুন

বাবা মা সব সময় তাদের মেয়ে সন্তান নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। যা নারীদের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান বিশেষ করে শিশু ধর্ষণ এবং গণধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ধর্ষণের মতো ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া, ধর্ষককে সহায়তাকারী, ভুক্তভোগীর পরিবারকে উল্টো হয়রানি ও হেনস্তাকারী তথাকথিত প্রভাবশালী মাতব্বরদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় একটি ধর্ষণের ঘটনা একজন শিশু বা নারীকে সহ তার পরিবারকে সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। আর ধর্ষণের পর হত্যা কিংবা ধর্ষণে অসুস্থ হয়ে হত্যার ঘটনা তো আছেই। সুতরাং এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতেই হবে। দয়া করে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। বর্তমানে একজন গর্ভবতী মাও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন যে তার যদি কন্যা সন্তান হয়। সেই শিশু একটি নিরাপদ পরিবেশ তথা সমাজ পাবে কি না। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি করুন। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করুন।

 


সুরাইয়া আফরিন হিয়া
লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া।

suraiyaa458@gmail.com

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পহেলা বৈশাখ শুধু বাঙালির নয়, এটা বাংলাদেশের প্রাণের উৎসব-ফারুকী

গাজায় বর্বর ইসরায়েলি হামলা, ৬ ভাইসহ নিহত আরও ৩৭ ফিলিস্তিনি

পিএসএল অভিষেকেই যে ৩ রেকর্ডে নাম লেখালেন রিশাদ

শেষ হলো ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ 

চট্টগ্রামে বর্ষবরণের মঞ্চ ভাঙচুর, বাতিল অনুষ্ঠান 

আজ পহেলা বৈশাখ, বাংলা ১৪৩২