দিনাজপুরে সুগন্ধিযুক্ত চিকন ধান আবাদ করে লোকসান গুণতে হচ্ছে কৃষকদের

দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি : পর পর দু’বার ভালো দাম পেলেও এবার সুগন্ধিযুক্ত চিকন ধান আবাদ করে আশানুরূপ দাম না পেয়ে হতাশ দিনাজপুরের কৃষকরা। লাভের আশায় দীর্ঘ অপেক্ষার পর মৌসুমের শেষে এসেও দাম না পেয়ে এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। লাভের আশায় আবাদ করে গুড়েবালি (আশায় নৈরাশ্য) অবস্থা হয়েছে ধানের এই জেলার কৃষকদের।
দিনাজপুর সদর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক দিলিপ কুমার রায়। গতবছর আমন মৌসুমে সুগন্ধিযুক্ত জিরা ধান প্রতিবস্তা (৭৫ কেজি) বিক্রি করেছিলেন ৫ হাজার ৫শ’ টাকা। তার আগের বছর বিক্রি করেন ৬ হাজার টাকায়। পর পর দু’বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবার আবাদ মোটা ধান বাদ দিয়ে চিকন জাতের এই ধান আবাদ করেন ৫ বিঘা জমিতে।
কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই সুগন্ধিযুক্ত চিকন জিরা ধানের বস্তা ছিলো ৪ হাজার ৫শ’ টাকা। দাম বাড়বে-এমন আশায় ধান বিক্রি করেননি তিনি। ধার দেনা করে আবাদের খরচ মিটিয়েছেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে দাম বৃদ্ধির পরিবর্তে আরও কমেছে। এখন প্রতিবস্তা ধান বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ১শ’ টাকায়। এর আগের হাটে গত সোমবার গোপালগঞ্জ হাটে ধান বিক্রি করতে আসেন কৃষক হযরত আলী।
এবার আমন মৌসুমে এক বিঘা (৪৮শতক) জমিতে সুগন্ধি জিরা-৩৪ জাতের ধান আবাদ করেছিলেন হযরত আলী। ধান পেয়েছেন ২০মণ। লাভের আশায় নিজের উৎপাদিত ধানের সাথে একইজাতের ২২মণ (১১ বস্তা) ধান ২ হাজার ২শ’ টাকা মণ দরে কিনে মজুদ করেছিলেন। গত সোমবার সেই ধান প্রতি মণ ২ হাজার ৭৫টাকা দরে হাটে বিক্রি করে মণ প্রতি লোকসান গুনেছেন ১২৫ টাকা।
অপরদিকে ওই হাটে প্রতিবস্তা (২ মণ) গুটি স্বর্ণ জাতের ধান ২ হাজার ৬শ’ থেকে ২ হাজার ৬৫০ টাকা এবং সুমন স্বর্ণ-৫১ জাতের ধান বিক্রি হয়েছে প্রতিবস্তা ২ হাজার ৭শ’ টাকা দরে। যা মৌসুম শুরুর দিকের দামের চাইতে ১৫০ থেকে ২শ’ টাকা বেশি দাম পেয়েছেন কৃষক।
আরও পড়ুনজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ জেলায় সুগন্ধি ধানের জাত হিসেবে ব্রি-ধান ৩৪, চিনিগুড়া, ফিলিপাইন কাটারি, কালাজিরা, কাঠারিভোগ, জটাকাঠারি, জিরাকাঠারি, চল্লিশ জিরার আবাদ হয়। তবে ব্রি-ধান ৩৪ ও কাঠারিভোগ আবাদ হয় উল্লেখযোগ্য হারে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে এ জেলায় সুগন্ধি ৯৩ হাজার ৭৬২ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৯০ মেট্টিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। সবশেষ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে তা বেড়ে ৯৫ হাজার ৬৫২হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৫৯ হাজার ২৮৬ মেট্টিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে।
এদিকে গত সোমবার দিনাজপুর শহরের বাহাদুর বাজারে (পাইকারী বাজার) খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সুগন্ধি জাতের চাল মান ও রকমভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯৪-৯৮ টাকা দরে। মেসার্স এরশাদ ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী এরশাদ হোসেন বলেন, ‘প্রায় বছরখানেক আগে এইসব পাইকারি বাজারে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন বাজারে সরবরাহ বেশি, চাহিদা কমেছে সেইসাথে কমেছে দামও।’
তবে সুগন্ধি জাতের ধানের দামের বিষয়ে বাংলাদেশ মেজর ও অটো মেজর হাসকিং মিল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারি বলেন, ‘এই ধরণের ধান সাধারণত আমন মৌসুমে আবাদ হয়। মৌসুমটা শেষ হবার এখনও দুই মাস অতিবাহিত হয়নি। তাছাড়া কয়েক বছর থেকে এই চালের রপ্তানী কার্যক্রম বন্ধ আছে। সক্ষমতা অনুযায়ী মিলাররা চাল প্রস্তুত করেছে কিন্তু বিক্রি করতে পারেননি বলে নতুন করে ধান কিনা বন্ধ রেখেছেন। মৌসুমের শুরুতে কৃষক এই ধানের ন্যায্যমূল্য পেয়েছেন।
মন্তব্য করুন