কৃষিতে সম্ভাবনাময় ‘টমালু’ চাষ
একই গাছের ওপরে টমেটো এবং মাটির নিচে আলুর সফল চাষ

স্টাফ রিপোর্টার : একই গাছে মাটির নিচে ফলেছে আলু আর মাটির ওপরে ডালে ঝুলছে কাঁচাপাকা অনেক টমেটো। মনে হচ্ছে এটা কেমন করে সম্ভব! একটু যেন চিন্তার বিষয়। তবে এখন এটাই সত্যি। আলুর গাছে ধরেছে টমেটো। গ্রাফটিং পদ্ধতি অনুসরণ করে আলু এবং টমেটো চাষাবাদে এমন সফলতা এনেছে বগুড়ার মোকামতলা এলাকার বেসরকারি একটি এগ্রো ফার্ম। হাজারখানেক গাছে ট্রায়াল এই চাষ করে তারা সফল হয়েছেন। গ্রাফটিং পদ্ধতিতে একই গাছে দুই সবজি টমেটো আর আলু চাষের নাম ‘টমালু’।
টমালু চাষের সফল কারিগর মো. রুবেল মিয়া। তিনি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার সহকারী কৃষি কর্মকর্তা। অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি কৃষি এবং কৃষির সব বিষয় নিয়ে কাজ করেন। যখন তিনি আইইউবিএটিতে কৃষি বিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করেন। তখন এই বিষয়ে তাদের প্রাকটিক্যাল করিয়েছিলেন টিচাররা। এরপর থেকে তিনি কৃষির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করেন।
নিজ বাড়ি মোকামতলার চৌকিরঘাট এলাকায় হাইওয়ের পূর্বপাশে পাঁচ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলেন কৃষিবন্ধু এগ্রো ফার্ম নামের একটি নার্সারি। এরপর তার চাকরি হয় কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি নার্সারিতে নতুন নতুন বিষয় নিয়ে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেন। এরমধ্যে ‘টমালু’ চাষ অন্যতম। আরও আছে বর্ষা মৌসুমে তিনি বেগুন গাছেও গ্রাফটিং করে টমেটো চাষ করেন।
কৃষি কর্মকর্তা রুবেল মিয়া জানান, মূলত আলু ও টমেটো একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এই চাষে সফলতা এসেছে। ‘টমালু’ গাছে রুট স্টক হিসেবে আলুর চারা আর সায়ন হিসেবে টমেটোর চারা ব্যবহার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দুটি চারার বয়সই সমান হতে হবে। গ্রাফটিং পদ্ধতিতে ডায়মন্ড, কার্ডিনাল ও এস্টোরিক জাতের আলুর সঙ্গে বাহুবলী জাতের টমেটোর চারাগাছ জোড়া দিয়ে এ পরীক্ষামূলক চাষে তিনি সাফল্য পেয়েছেন। তিনি বলেন, দিন দিন দেশে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমছে।
আরও পড়ুনপরিচর্যাতেও কোনো বাড়তি ঝামেলা নেই। অনেকটা স্বাভাবিক সবজি পরিচর্যার মতোই। একই জমিতে কাপ করে একই খরচে, একই ধরণের জৈবসার ব্যবহার করে একই খরচে এই চাষ পদ্ধতি কৃষকের জন্য অবশ্যই লাভজনক হবে। আলুর গাছে কলম করাও বেশ সহজ। যারা গ্রাফটিং করে তাদের কাছ থেকে কিংবা নিজেরাও এই কাজটি করতে পারবেন। গ্রাফটিং করার ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই গাছ দু’টি জোড়া লেগে যায়। এবার সফল চাষের পর তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষকের মাঠে এই উদ্যোগ ছড়িয়ে দেবেন বলে জানান তিনি।
চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি জানান, প্রথমে আলাদা জায়গায় টমেটো ও আলুর চারা তৈরি করে নিতে হবে। চারা গাছের বয়স ২৫-৩০ দিন এবং উচ্চতা ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার হওয়ার পর আলুগাছের চারার সঙ্গে টমেটোর চারা গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে জোড়া লাগিয়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আলুগাছের চারার মাথা ও টমেটো চারার গোড়ার অংশ কেটে নিতে হবে।
গাছ জোড়া লাগলে পলিথিন খুলে ফেলতে হবে। বর্তমানে তার এই কৃষিবন্ধু এগ্রো ফার্ম দেখার দায়িত্ব পালন করেন নারী উদ্যোক্তা জান্নাতি খাতুন। তিনি জানান, ‘টমালু’র প্রতিটি গাছে প্রায় সাড়ে ৪ কেজি করে টমেটোর ফলন হয়েছে। অন্যদিকে একই গাছের গোড়ায় মাটির নিচে আলুর ফলন হয়েছে এক কেজি ১শ’ থেকে ৩শ’ গ্রাম পর্যন্ত। অনেকেই এই পদ্ধতি দেখতে আসছেন এবং অনেকেই তাদের ছাদ বাগানে এই চাষ করবেন বলে ধারনা নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, তারা এখানে বর্ষা মৌসুমে বেগুন গাছে গ্রাফটিং করে অসময়ে টমেটো ফলান। কারণ বর্ষার সময় টমেটো গাছ পড়ে যায় এবং ভেঙে যায়। বেগুন গাছে তা হয় না, কারণ বেগুন গাছ অনেক শক্ত।
শিবগঞ্জ থেকে এই পদ্ধতি দেখতে এসেছেন সবজি চাষি একরামুল। তিনি বলেন, অল্প জমিতে এই চাষ বেশ ভালো হবে। নিচে আলু আর ওপরে টমেটো চাষ এরসাথে দুটো সবজি চাষ করে লাভবান হতে পারবো। এই জন্য নিজে এর ভাল-মন্দ দেখতে এসেছেন এবং অর্থনৈতিক দিকটাও কী হবে ‘টমালু’ চাষ পদ্ধতিতে।
মন্তব্য করুন