বগুড়ার ধুনটে যমুনা পাড়ের ঐতিহ্যবাহী বারুনী মেলায় মুগ্ধ দর্শনাথীরা

ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি : ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর তীরঘেষা ভান্ডারবাড়ি গ্রামে জমজমাট ভাবে অনুষ্ঠিত হলো দুইদিন ব্যাপি শত বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বারুনী মেলা। লোকজ এই মেলাকে ঘিরে পুরো এলাকা জুড়েই ছিলো উৎসবের আমেজ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর চৈত্র মাসে স্থানীয়দের আয়োজনে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে মেলাটি শুরু হয়েছে। মেলার ঐতিহ্য অনুযায়ী এ এলাকার পরিবারগুলোর যার যেখানে আত্মীয়স্বজন রয়েছেন, সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হয়। বিবাহিত মেয়েরা স্বামী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে বেড়াতে আসেন বাবার বাড়ি। যারা ঢাকাসহ দূরদূরান্তে চাকরি করেন, তারাও ছুটি নিয়ে এ সময় চলে আসেন নিজ গ্রামে। ঘরে ঘরে ভাজা হয় মুড়ি, মুড়কি, খই। ফলে ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকার প্রতিটি বাড়ি এখন আত্মীয় স্বজনে ভরপুর।
আজ শুক্রবার (৪ এপ্রিল) শেষ দিন বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেছে, মেলায় বিভিন্ন স্থান থেকে নারী-পুরুষ ও শিশুরা মেলায় আসে। ঐতিহ্যবাহী নানা সামগ্রী নিয়ে হাজির হয়েছেন বিক্রেতারা। শখের হাঁড়ি, মাটির সরা, শোলার ফুল, মাটির পুতুল, কাঠের একতারা, বাঁশের বাঁশি, বাঁশের সামগ্রী, মোয়া, মুড়কি, মণ্ডা, মিঠাই, বাতাসা, লাল গুড়ের জিলাপিসহ সবই পাওয়া যায় মেলায়।
মাটির তৈরি খেলনা ছাড়াও গৃহস্থালি অনেক জিনিস উঠেছে। শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য রয়েছে নাগরদোলাসহ নানা খেলনা। প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে মেলায় আনন্দ উপভোগ করেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
আরও পড়ুনসানজিদা আক্তার পলি করতোয়া’কে বলেন, প্রতি বছর এ দিনটির জন্য অপেক্ষা করি। গ্রামীন মেলায় সবার সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়। মেলায় গ্রামীন ঐতিহ্যের জিনিসপত্র, খাবার দাবার পাওয়া যায়। সত্যি বলতে মেলায় আসলে গ্রামের সত্যিকারের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে। খাবার বিক্রেতা আব্দুল করিম বলেন, নিমকি, জিলাপি, মন্ডা, মিঠাই, ও খইসহ হরেক রকম গ্রামীন খাবার বিক্রি করতে মেলায় এসেছি। প্রতি বছর আসি। আমার বাপ-দাদারাও এ মেলায় আসতেন।
উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বাবু জানান, প্রায় শত বছর ধরে এ মেলার আয়োজন হয়। শুরুতে খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে হতো। প্রথমে শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই মেলার আয়োজন করতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলাটি এখন সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। বারুনী মেলাটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক। মেলায় বেচাকেনা যাই হোক, এ মেলা আমাদের ঐতিহ্য আর কৃষ্টি-কালচার বহন করছে, এটাই সবচেয়ে বড় কথা।
মন্তব্য করুন