হজ মৌসুমে কেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয় সৌদি

সৌদি আরব হজ মৌসুমের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশটি হজ নির্বিঘ্ন করতে বদ্ধপরিকর। বিশেষ করে হাজিদের যাতায়াত, বাসস্থান, ধর্মীয় পবিত্র স্থানগুলোতে গমন এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কঠোর। ফলে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় হজের মৌসুমে সৌদি নাগরিক এবং বিদেশিদের জন্য নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার।
সম্প্রতি বাংলাদেশসহ ১৩ দেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সৌদি আরব। এই নিষেধাজ্ঞা স্থায়ীভাবে প্রযোজ্য নয়; বরং জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত বহাল থাকতে পারে। ব্যস্ত হজ মৌসুমে হজযাত্রীদের আগমন নিয়ন্ত্রণ এবং ধর্মীয় কর্তব্য পালনের সুষ্ঠু সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সৌদি আরবের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তালিকাভুক্ত দেশগুলোর ভ্রমণকারীদের জন্য ভিসা প্রদান সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে। এই স্থগিতাদেশ ওমরাহ, ব্যবসায়িক এবং পারিবারিক ভিসাসহ বিভিন্ন ভিসা অন্তর্ভুক্ত। তবে যাদের ওমরাহ ভিসা আছে তারা ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত সৌদি আরবে প্রবেশ করতে পারবেন। এই তারিখের পরে কোনো ওমরাহ ভিসাধারী সৌদি আরবে প্রবেশ করতে পারবেন না।
ভিসা নিষেধাজ্ঞার পেছনে আসন্ন হজ মৌসুম ছাড়া অন্য কূটনৈতিক কারণও থাকতে পারে। কূটনৈতিক হিসাব-নিকাশ বাদ দিলে মূলত দুটি বড় কারণ সামনে আসে। আগের বছরগুলোতে বহু মানুষ প্রবেশযোগ্য ভিসা নিয়ে হজ মৌসুমে সৌদি আরবে এসে অবৈধভাবে হজে অংশ নেন। এতে অতিরিক্ত ভিড় এবং নিরাপত্তাজনিত সমস্যা দেখা দেয়।
সৌদি কর্তৃপক্ষ প্রতি বছরই এ ধরনের ঝামেলা এড়াতে চায়। তাই হজ মৌসুমে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। যেমন, গত বছর সৌদি আরব সরকার ভিজিট ভিসাধারী ও পর্যটকদের হজ পালন এবং মক্কায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। তেমনি অস্থায়ী ভিসা যেমন- স্টুডেন্ট ভিসা বা শেনজেন ভিসাধারীদেরও হজ পালন থেকে বিরত থাকার নির্দেশ জারি করে। স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, হজ পালনের অনুমতি পেতে হলে একজন ব্যক্তিকে সৌদি হজ ভিসাধারী হতে হবে অথবা হজ পারমিট নিতে হবে। এর ব্যতয় ঘটালে কঠোর শাস্তির ঘোষণা দিয়ে পরিপত্র জারি করে সরকার।
আরও পড়ুনওই বছর ভিজিট ভিসাধারী এবং পর্যটকদের ২৩ মে থেকে ২১ জুন পর্যন্ত মক্কায় প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। তেমনি সৌদি নাগরিক যাদের হজ পারমিট নেই তাদেরও মক্কায় প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। হজ মৌসুমে বিদেশি নাগরিক নিয়ন্ত্রণের আরেকটি কারণ হলো- ব্যবসা ও পারিবারিক ভিসা ব্যবহার করে অনেকেই সৌদিতে অননুমোদিতভাবে কাজ করতে থাকেন। যা দেশটির শ্রমনীতি ও বাজারে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে।
ভিসা নিষেধাজ্ঞা পাওয়া পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সূত্র বলছে, এবারের সাময়িক ভিসা প্রদান স্থগিতকরণও হজ মৌসুমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই নেওয়া হয়েছে। হজের সময় সৌদিতে বিপুল সমাগম সুষ্ঠু করতে এর বিকল্প নেই। ধারণা করা হচ্ছে, ১৩ দেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও অন্যান্য বছরের মতো আরও কিছু নির্দেশনা জারি করবে সৌদি। সেসব না মানলে শাস্তির ব্যবস্থাও রাখা হবে।
প্রসঙ্গত, মার্চের মাঝমাঝিতে সৌদি ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বাংলাদেশে গুঞ্জন উঠে। তখন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছিলেন, ভিসার ক্ষেত্রে সৌদি দূতাবাস কোনো অনিয়ম করছে না। এবার ওমরার জন্য যত সংখ্যক ওমরা যাত্রী সৌদিতে গেছে তা অনেক বেশি, এ জন্য তারা ভিসা নিয়ন্ত্রণ করছে।
তিনি আরও বলেছিলেন, ওমরা যাওয়ার জন্য যারা বিমানের টিকিট কাটার পরও যেতে চান না, নিয়ম অনুযায়ী তাদের টাকা ফেরত দেবে বাংলাদেশ বিমান। আর সৌদি এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, যারা রমজান মাসে যেতে ইচ্ছুক ভিসা পাননি, তারা আগামী জুলাইতে যেতে পারবেন।
মন্তব্য করুন