ভিডিও বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫

প্রমত্ত যমুনার বুকে ধূ ধূ বালুচর পায়ে হেঁটেই এপার ওপার

প্রমত্ত যমুনার বুকে ধূ ধূ বালুচর পায়ে হেঁটেই এপার ওপার। ছবি : দৈনিক করতোয়া

হেলাল আহমেদ, সিরাজগঞ্জ : এক সময়ের খরস্রোতা যমুনা নদী এখন আর সে অবস্থায় নেই। শুকিয়ে  পরিণত হয়েছে খালে। কোথাও কোথাও হেঁটেই পার হওয়া যাচ্ছে। যমুনার অভ্যন্তরীণ অনেক রুটেই খেয়াপারের জন্য এখন আর নৌকার প্রয়োজন পড়ে না। যতদূর চোখ যায় শুধুই বালুচর। কোথাও উঁচু নিচু কোথাও পুরো কোথাও বা পাতলা।

নদীর গতিপথে কচ্ছপের পিঠের মতো হাজারো চর ডুবোচরে পরিণত হয়েছে যমুনা। যমুনা সেতুর পাশে রেলসেতু তৈরিতে নদী শাসনের ফলে এখন উভয় সেতুর পাশে বিশাল আকার চর জেগে উঠেছে। যতদূর চোখে দেখা যায় শুধুই বালুরচর এটা কি পূর্বের সেই উত্তাল ঢেউয়ের যমুনা নদী,  দেখে সেটা মনে হয় না। এখন সেগুলো শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।

এক সময় যে নদীর প্রশস্ততা ছিল দীর্ঘ। যমুনা ভরা যৌবনের তর্জন গর্জনের মানুষের বুকে কাঁপন সৃষ্টি করতো নদীপাড়ের মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নিত সেই যমুনা শুষ্ক মৌসুমে ক্রমেই তার যৌবন হারিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে।

অপরদিকে চরাঞ্চলের গরু ও মহিষের বাথান এলাকাগুলোর শ্রমিক ও গবাদি পশুর জীবনে দুঃখের সীমা নেই। মাঠ ঘাট জমি জিরাত ফেটে চৌচির। ইতোমধ্যেই বয়ে চলেছে লু-হাওয়া। ফলে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের অশনি সঙ্কেত লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা বড় বড় হাটবাজার সমূহ ব্যবসার জন্য বাদাম, সবজি, পাট, আলু, গম, সরিষা, বেগুন, কালাইসহ বিভিন্ন নানাবিধ পণ্য নিয়ে সওদাগররা নৌকায় পাল তুলে মাঝি মোল্লা নিয়ে সর্বপ্রকার পণ্য সরবরাহ করতো। শুধু কৃষিপণ্যই নয় হাটবাজারগুলোতে বিক্রির জন্য তারা নিয়ে যেত গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, ভেড়া, মহিষসহ নানা পশু-পাখি।

আরও পড়ুন

ওই সময় প্রমত্ত যমুনসহ শাখা নদীগুলো ছিল যৌবনপ্রাপ্ত। এখন সেগুলো শুকিয়ে গেছে। যমুনা নদীর পানি কমে যাওয়ায় নদীবক্ষে যত্রতত্র জেগে উঠেছে চর ও ডুবোচর। ফলে নদীর  প্রায় প্রতিটি  রুটেই নৌকা চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। মেঘাইঘাট থেকে প্রতিদিন নাটুয়ারপাড়া, তেকানি, নিশ্চিন্তপুর, খাসরাজবাড়ী, চরগিরিশ, মনসুরনগর, তারাকান্দি,  সিরাজগঞ্জের  রূপসার চর, কাউয়াখোলা চর, মেছড়াচর  এনায়েতপুর হতে চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন চরে  ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

নদীর নাব্যতা কমে চর জেগে ওঠায় অনেক দূর দিয়ে ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। এতে তেল ও সময় দুটোই বেশি খরচ হচ্ছে। ফলে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এসব রুটে অন্য কোন যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীরা বিপাকে পড়ছে। নদীর পানি কমে  নৌ-ঘাট দূরে সরে যাওয়ায় তপ্ত বালুচর ভেঙে যাত্রীদের যাতায়াত করতে হচ্ছে।

এক্ষেত্রে মালামাল পরিবহনসহ শিশু ও নারী, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। নৌ-রুট বন্ধ থাকায় অনেক মাঝি যেমন বেকার হয়ে পড়েছে তেমনি মৎস্যজীবীরা পড়েছে বিপাকে। যমুনা নদীর পানি হ্রাস পেলে তিন কিলোমিটার পথ বেড়ে ১২ কিলোমিটারে পৌঁছে। এতে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিকে নাটুয়ারপাড়া, তেকানী, চরগিরিশ ও খাসরাজবাড়ীর অনেক নদী ঘাটে খেয়ার পরিবর্তে ঘোড়ারগাড়ি ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এব্যাপারে তাই অভিজ্ঞমহল সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। এছাড়া খরস্রোতা যমুনায় পানি না থাকায় চরবাসী কাজ করে বাড়ি ফিরতে পারছে না। অনেক সময় শহরে আত্মীয় বাড়ি বা হোটেলে রাতযাপন করতে হয়।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ার গাবতলীর রামেশ্বরপুরে নিম্নমানের সামগ্রী গিয়ে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে ফেনসিডিলসহ দুই ভাই গ্রেফতার

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে চুরি যাওয়া শাড়িসহ গ্রেফতার ৪

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের হত্যা মামলার আসামি সুনামগঞ্জে গ্রেফতার

সাবেক এমপি মোরশেদ আলম গ্রেফতার

নওগাঁর মান্দায় মাদক ব্যবসায়ীদের মারধরে দুই নারীসহ আহত ৩