ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক ওমরি মসজিদের আদ্যোপান্ত
ধর্মডেস্ক: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অবস্থিত বিখ্যাত একটি মসজিদ হলো খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব মসজিদ। এটি ফিলিস্তিনের গ্র্যান্ড মসজিদ হিসেবেও পরিচিত। মসজিদটি মুসলিম বিজেতাদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।খলিফা ওমর বিন আল-খাত্তাবের শাসনামলে ৬৩৬ খ্রিস্টাব্দে ফিলিস্তিন বিজিত হয়। ফিলিস্তিন বিজয়কালে খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাবের সম্মানে মসজিদের নাম দেওয়া হয় ‘আল-ওমরি’। আর এটি গাজার অন্যতম বৃহত্তম মসজিদ হওয়ায় ‘বড় মসজিদ’ হিসেবে পরিচিত।
এটি আল-আকসা ও আহমেদ পাশা আল-জাজার মসজিদের পর ফিলিস্তিনের তৃতীয় বৃহত্তম ও প্রাচীন মসজিদ হিসেবে বিবেচিত। ওমর মুখতার স্ট্রিটের পূর্বে, ফিলিস্তিন স্কয়ারের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে, গাজার প্রাচীন শহরের কেন্দ্রস্থলে দারাজ কোয়ার্টারে এটি অবস্থিত। কেউ কেউ মসজিদে আকসার সঙ্গে সাদৃশ্য থাকার কারণে এটিকে ‘ছোট আল-আকসা মসজিদ’ বলে ডাকে।
মসজিদটি প্রথমে মন্দির ছিল। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে বাইজেন্টাইনরা ফিলিস্তিন দখল করে তা গির্জায় রূপান্তর করে। সপ্তম শতাব্দীতে মুসলিমরা ফিলিস্তিন বিজয়ের পর এটি মসজিদ হিসেবে পুনর্র্নিমাণ করা হয়। দশম শতাব্দীতে মুসলিম পর্যটক ও ভূগোলবিদ ইবনে বাতুতা ফিলিস্তিনে ঐতিহাসিক এই স্থাপনাকে ‘সুন্দর মসজিদ’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
বিভিন্ন সময়ে মসজিদটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দখলের মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। ১০৩৩ সালে ভূমিকম্পে এর মিনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১১৪৯ সালে ক্রুসেডাররা মসজিদটিকে গির্জা বানায়। আইয়ুবিরা এটি উদ্ধার করে। ১৩ শতকের শুরুর দিকে মামলুক শাসকরা মসজিদটির পুনর্র্নিমাণ করে। ১২৬০ সালে মঙ্গোলরা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত করে। ১৩ শতকের শেষের দিকে আরেকবার ভূমিকম্প আঘাত হানে এই মসজিদে।ভূমিকম্পের প্রায় ৩০০ বছর পর ১৬ শতকে উসমানীয় শাসকেরা মসজিদের পুনর্র্নিমাণ করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের বোমা হামলায় মসজিদটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ১৯২৫ সালে সুপ্রিম ইসলামিক কাউন্সিল মসজিদটি পুনরুদ্ধার করে।
আরও পড়ুন
মসজিদ কমপ্লেক্সে একটি ধর্মীয় স্কুল, অভ্যর্থনা স্থান এবং একটি জাদুঘর রয়েছে এবং এটি ২০২২ সালে ডিজিটালাইজড একটি বৃহৎ মধ্যযুগীয় গ্রন্থাগারের আবাসস্থল ছিল।
স্থাপত্যটি ইতালীয় গথিক এবং ইসলামিক শৈলীর সমন্বয়ে তৈরি, যার মধ্যে মামলুক আমলের একটি অষ্টভুজাকার মিনার রয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের সময় ইসরায়েলি বিমান হামলায় মসজিদটি মূলত ধ্বংস হয়ে যায়। সূত্র : আল জাজিরা অ্যারাবিক, উইকিপিডিয়া ।
মন্তব্য করুন