আল্লাহর যে নবিগণের স্মৃতিধন্য ফিলিস্তিন

বাইতুল মুকাদ্দাস সংলগ্ন এলাকা বা ফিলিস্তিনকে কোরআনে ‘বরকতময়’ ও ‘পবিত্র ভূমি’ বলা হয়েছে। নবিজিকে (সা.) এক রাতের ভ্রমণে আল আকসায় নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সুরা ইসরা: ১)
হজরত মুসা (আ.) ও তার অনুসারী বনি ইসরাইলকে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছিলেন মূর্তিপূজক আমালেকাদের কাছ থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস সংলগ্ন এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে। কোরআনে এই ঘটনার বর্ণনায় আল্লাহ তাআলা এই ভূমিকে ‘পবিত্র ভূমি’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, স্মরণ কর, যখন মুসা তার জাতিকে বলেছিল, ‘হে আমার জাতি! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর, যখন তিনি তোমাদের মধ্য হতে নবি করেছিলেন ও তোমাদেরকে রাজ্যাধিপতি করেছিলেন এবং বিশ্বজগতে কাউকেও যা তিনি দেন নাই তা তোমাদেরকে দিয়েছিলেন। হে আমার জাতি, আল্লাহ তোমাদের জন্যে যে পবিত্র ভূমি নির্দিষ্ট করেছেন তাতে তোমরা প্রবেশ কর এবং পশ্চাদপসরণ করো না; করলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে। (সুরা মায়েদা: ২০, ২১)
বাইতুল মুকাদ্দাস সংলগ্ন এলাকা, ফিলিস্তিন অথবা পুরো শামকে কেন ‘বরকতময়’ ও ‘পবিত্র ভূমি’ বলা হয়েছে এ বিষয়ে কোরআনের ব্যাখ্যাকাররা বলেন, ‘বায়তুল মুকাদ্দাস, ফিলিস্তিন ও শাম আল্লাহর বহু নবি-রাসুলের স্মৃতিধন্য হওয়ায় এই অঞ্চলকে ‘পবিত্র ভূমি’ ও ‘বরকতময়’ বলা হয়েছে। এই অঞ্চলে যেহেতু আল্লাহ অনেক নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন, আল্লাহর বিশ্বাসী বান্দা বা মুমিনরা ব্যাপকভাবে বসবাস করেছেন, তাই এই অঞ্চল বিশেষ মর্যাদার অধিকারী।
এখানে আমরা আল্লাহ তাআলার সম্মানিত কয়েকজন নবির নাম উল্লেখ করছি যারা ফিলিস্তিন বা বাইতুল মুকাদ্দাস সংলগ্ন এলাকায় জন্মগ্রহণ করেছেন, বসবাস করেছেন বা যাদের স্মৃতিতে ধন্য হয়েছে এই পবিত্র ভূমি:
১. হযরত ইবরাহিম (আ.)
হজরত ইবরাহিমের জন্মভূমি ছিল ইরাক। ইরাকেই তিনি নবুয়্যত লাভ করেন এবং নিজের জাতির মানুষকে আল্লাহর দীনের দাওয়াত দেন। তাদেরকে মূর্তিপূজার অসারতা বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু দীর্ঘ দিন অনেক চেষ্টার পরও তারা আল্লাহর দীনের প্রতি বিমুখই থেকে যায়। এক পর্যায়ে তারা তাকে আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত ইবরাহিম (আ.) নিজের স্ত্রী ও ভাতিজাকে সঙ্গে নিয়ে ইরাক ছেড়ে বরকতময় ভূমি ফিলিস্তিনে হিজরত করেন। ফিলিস্তিনেই জীবনের শেষ সময় কাটিয়ে তিনি ইন্তেকাল করেন।
২. হজরত লুত (আ.)
হজরত লুত (আ.) ছিলেন হজরত ইবরাহিমের (আ.) ভাতিজা। তিনি হজরত ইবরাহিমের (আ.) দাওয়াতে ইমান গ্রহণ করেছিলেন এবং তার সাথে ইরাক থেকে ফিলিস্তিনে হিজরত করেন। পরবর্তীতে আল্লাহ তাআলা তাকেও নবুয়্যত দান করেন।
৩. হজরত ইসহাক (আ.)
হযরত ইবরাহিমের (আ.) ছেলে ইসহাকের (আ.) জন্ম ফিলিস্তিনে। বাবার পর তিনিও নবুয়্যতের মর্যাদা লাভ করেন। ফিলিস্তিনেই তিনি বসবাস করেন এবং ইন্তেকাল করেন।
৪. হজরত ইয়াকুব (আ.)
হজরত ইসহাকের (আ.) ছেলে ইয়াকুবকেও (আ.) আল্লাহ তাআলা নবুয়্যত দান করেছিলেন। তিনিও জীবনের বেশিরভাগ সময় ফিলিস্তিনে বসবাস করেন। ফিলিস্তিনেই তিনি ইন্তেকাল করেন।
৫. হজরত ইউসুফ (আ.)
হজরত ইয়াকুবের (আ.) ছেলে হজরত ইউসুফের (আ.) জন্ম ফিলিস্তিনে। ভাইদের ষড়যন্ত্রে তিনি বাবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে যান। দাস ব্যবসায়ীরা তাকে নিয়ে মিশরে বিক্রি করে দেয়। পরবর্তীতে মিশরে তিনি আল্লাহ তাআলার দীন প্রচার করেন।
আরও পড়ুন৬. হজরত দাউদ (আ.)
হজরত দাউদ (আ.) ফিলিস্তিনে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই নবুয়্যত লাভ করেন। তিনি ছিলেন একজন সাহসী যোদ্ধা। তার জালুতকে পরাজিত করার ঘটনা কোরআনের সুরা বাকারায় বর্ণিত হয়েছে। ফিলিস্তিনেই তিনি ইন্তেকাল করেন।
৭. হজরত সুলাইমান (আ.)
হজরত দাউদের (আ.) ছেলে হজরত সুলাইমানও (আ.) ফিলিস্তিনে বসবাস করতেন। দাউদের (আ.) মৃত্যুর পর আল্লাহ তাআলা তাকে রাজত্ব ও নবুয়্যত দান করেন। তিনি মসজিদুল আকসা পুননির্মাণ করেন। জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি ফিলিস্তিনে বসবাস করেন এবং ফিলিস্তিনেই তিনি ইন্তেকাল করেন।
৮. হজরত জাকারিয়া (আ.)
হজরত জাকারিয়া (আ.) ফিলিস্তিনে জন্মগ্রহণ ও বসবাস করেন। তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে দুটি মত রয়েছে—একদল ঐতিহাসিকের মতে তিনি ফিলিস্তিনেই ইন্তেকাল করেন, অন্যদল মনে করেন সিরিয়ার হালাব শহরে তার ওফাত হয়।
৯. হজরত ইয়াহিয়া (আ.)
হজরত ইয়াহিয়া (আ.) হজরত জাকারিয়ার (আ.) ছেলে। ফিলিস্তিনে বসবাস করলেও কিছু বর্ণনা অনুযায়ী দামেস্কে তার মৃত্যু হয়।
১০. হযরত ঈসা (আ.)
হজরত ঈসা (আ.) ও তার মা হজরত মারিয়াম (আ.) ফিলিস্তিনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার মায়ের সাথে মিসরে হিজরত করেছিলেন। পরে আবার তিনি ফিলিস্তিনে ফিরে যান এবং সেখানে বসবাস করেন।
১১. হজরত মুহাম্মদ (সা.)
আমাদের নবি হজরত মুহাম্মাদকে (সা.) মিরাজ বা উর্ধ্বজগৎ ভ্রমণে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ফিলিস্তিন থেকে। এক রাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে প্রথম মসজিদুল আকসায় নিয়ে যাওয়া হয়, তারপর তাকে উর্ধ্বজগৎ ভ্রমণে নিয়ে যাওয়া হয়। মক্কা থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত নবিজির (সা.) রাতের ভ্রমণ ইসরা নামে এবং সেখান থেকে উর্ধ্বাজগৎ ভ্রমণ মেরাজ নামে পরিচিত।
মন্তব্য করুন