ভিডিও শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

ঠাকুরগাঁওয়ে রাক্ষুসের বেশে চাল সংগ্রহ : শিশুদের বৈশাখী আনন্দ

ঠাকুরগাঁওয়ে রাক্ষুসের বেশে চাল সংগ্রহ : শিশুদের বৈশাখী আনন্দ

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি : ভোর হতে না হতেই বেজে উঠেছে ঢোল। কারো হাতে তবলা, কারো হাতে বাঁশি। কারো মুখে রঙচঙে রাক্ষুসের সাজ, কেউ বা মাথায় বাঁধা কাগজের মুকুট। পথঘাট মুখর হয়ে উঠেছে একঝাঁক শিশু-কিশোরের উচ্ছ্বাসে। এরা কেউ ক্লাস থ্রি, কেউ বা সেভেনের শিক্ষার্থী। দল বেঁধে ছুটে বেড়াচ্ছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি গ্রামের পথে পথে।

গ্রামের প্রতিটি অলিতে-গলিতে গিয়ে তারা ডাক ছাড়ে, “রাক্ষুস এসেছি রে চাল দে, নইলে খেয়ে ফেলব তোকে!” সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন গৃহস্থ। হেসে হেসে তাদের হাতে তুলে দেন চালের একমুঠো থলে। রঙিন শিশুমুখে আনন্দের ঝিলিক এর যেন নতুন বছরকে বরণ করার অভিনব উৎসব।

এই দলটিতে আছে বাঁধন, প্রান্ত, কৃষ্ণা, হৃদয়, অপূর্বদের মতো অনেকেই। কেউ বাজায় ঢোল, কেউ তবলা। কারও রঙে রাঙানো মুখে রাক্ষুস ভঙ্গি, তবু তাতে ভয়ের ছায়া নেই আছে মায়াবী এক আমন্ত্রণ। চাল নয়, সংগ্রহ হচ্ছে আনন্দের মূলধন। এই ‘চাল তোলা’ তাদের কাছে নিছক সংগ্রহ নয় এ এক বৈশাখী অনুশীলন। বছর ঘুরে গ্রামে বসে বৈশাখী মেলা, তারই প্রস্তুতিতে এই আয়োজন। গ্রাম ঘুরে তারা যে চাল পায়, তা বাজারে বিক্রি করে মেলায় যাওয়ার খরচ জোগাড় করে। নতুন জামা, খেলনা, মিষ্টান্ন সবই আসে এই টাকায়।

সপ্তম শ্রেণির ছাত্র অপূর্ব বলে, “আজ এক গ্রাম ঘুরেছি, ৩০ কেজির মতো চাল পেয়েছি। বিকালে আরেক গ্রাম যাব। সব মিলিয়ে ভালো টাকা হবে তাতেই কিনব নতুন জামা, খেতে পাব মিষ্টি!” মেলার দিন যেন এক স্বপ্নের নাম। কেউ সেই টাকায় কিনবে রসগোল্লা, বাতাসা, মনডাই। কেউ ঘুরবে নাগরদোলায়, কেউ বা জড়ো হবে পুতুলনাচের আসরে। শিশুরা বলে, “বৈশাখ মানেই আমাদের কাছে আনন্দের দিন। মেলায় আমরা সবাই একসঙ্গে দল বেঁধে যাই। ঘুরে বেড়াই, খেলি, খাই আর হইচই করি।”

আরও পড়ুন

শিশুদের এমন আয়োজনকে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখছেন ঠাকুরগাঁও জেলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মনোতোষ কুমার দে। তিনি বলেন, “এ এক আবহমান বাংলার রূপ। এই শিশুরাই আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির প্রাণ। সহজ-সরল নাটুকে ভঙ্গিতে তারা নির্মাণ করে এক অন্যরকম পৃথিবী।”

গ্রামের ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী আহসান হাবীব বলেন, আজ সোমবার বসবে এই গ্রামে বৈশাখী মেলা। তার আগে শিশুর দল চলছে চাল সংগ্রহ অভিযানে। গ্রাম থেকে গ্রামে, হাত থেকে হাতে। শিশুরা জানে না তাদের এই উল্লাস আসলে এক বিশাল সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের অনুশীলন। কিন্তু যারা দেখছে, যারা অনুভব করছে তারা জানে, রঙিন মুখে রাক্ষুসের হাসি আসলে বাঙালির মাটির ঘ্রাণ।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রণবীরের সঙ্গে বিচ্ছেদের কারণ জানালেন ক্যাটরিনা

বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক চায় ভারত

যুক্তরাষ্ট্রের ১৫ প্রেক্ষাগৃহে চলবে শাকিবের ‘বরবাদ’

গাজায় ইসরায়েলের হামলা : নিহত ৪০

দুপুরের মধ্যে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আশঙ্কা

ইয়েমেনে হুথি নিয়ন্ত্রিত বন্দরে মার্কিন হামলা, নিহত অন্তত