বাবার সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে রিসোর্টে লেকে ডুবে ছেলের মৃত্যু

নিউজ ডেস্ক: গাজীপুরের শ্রীপুরে বাবার সঙ্গে খালার বাড়িতে বেড়াতে এসে রিসোর্টের লেকে ডুবে আরিয়ান স্বপ্নীল (১৪) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজের ২৮ ঘণ্টা পর টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের ডুবুরি দল মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় মরদেহ উদ্ধার করে।
শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে স্থানীয়দের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। শ্রীপুর উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়নের গজারতলি গ্রামে নির্মাণাধীন ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি রিসোর্টের মালিক আতিকুল্লা বাবুল।
নিহত আরিয়ান স্বপ্নীল গাজীপুর মহানগরীর হাড়ীনাল (নোয়াগাঁও) এলাকার রাসেল মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় ইয়ার মডেল স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালে গাজীপুর মহানগরীর হাড়ীনাল (নোয়াগাঁও) এলাকার বাসিন্দা রাসেল মিয়া তার দুই ছেলেকে নিয়ে শ্রীপুর উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়নের গজারতলি এলাকায় খালার বাড়িতে বেড়াতে যায়। দুপুরে বাবা দুই ছেলেকে নিয়ে স্থানীয় নির্মাণাধীন ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি রিসোর্টে ঘুরতে যায়। এ সময় তিনি মেঝো ছেলে স্বপ্নীলকে টিউবে উঠিয়ে নিয়ে লেকে ঘুরেন। পরে তাকে লেকের পাড়ে নামিয়ে ছোট ছেলেকে নিয়ে লেকের মাঝে চলে যান। বাবার অজান্তেই ছেলে বল নিয়ে লেকের পানিতে নেমে খেলা করছিল।
এ সময় হঠাৎ করে স্বপ্নীল তার বাবাকে ডাক দেয়। তিনি শুনতে পেয়ে চেয়ে দেখেন পানির ওপর শুধু দুইটা হাত দেখা যাচ্ছে। তিনি লেকের মাঝখান থেকে আসতে আসতে স্বপ্নীল ডুবে গেলে বাবা পানিতে নেমে ছেলেকে খুঁজতে থাকে। ছেলে পানিতে ডুবে যাওয়ার খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধারে লেকে নেমে জাল ফেলে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। খবর পেয়ে টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ওই লেকে অভিযান চালিয়ে স্বপ্নীলের সন্ধান না পেয়ে অভিযান সমাপ্ত করে। পরদিন মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে দ্বিতীয় দফায় উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। পরে বিকেল ৪টায় স্বপ্নীলের মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়।
আরও পড়ুননিহত স্বপ্নীলের বাবা রাসেল মিয়া বলেন, দুই ছেলেকে সাতে নিয়ে টিউবে লেকের পানিতে সাঁতার কাটছিলেন। মেজো ছেলে স্বপ্নীলকে লেকের পাড়ে রেখে ছোট ছেলেকে নিয়ে লেকের মাঝখানে চলে যান তিনি। কখন যে স্বপ্নীল ফুটবল নিয়ে লেকের কিনারা ধরে তার পেছনে পেছনে আসছিল তিনি খেয়াল করেননি। একপর্যায়ে স্বপ্নীল আমাকে ডাক দিলো আব্বু, ডাক শুনে আমি চেয়ে দেখি ছেলের দুইটা হাত পানির উপরে দেখা যাচ্ছে। লেকের মাঝখান থেকে ছেলের কাছে যাওয়ার আগেই ছেলে আমার সামনেই পানিতে ডুবে গেল। বাবা হয়ে দূর থেকে ছেলেকে দেখেও বাঁচাতে পারলাম না। হাত থেকে বল ফসকে গেলে সাঁতার না জানায় ছেলেটা আমার সামনে পানিতে ডুবে মারা গেল। বাবা হয়ে আমি ছেলেকে বাঁচাতে পারলাম না। আশপাশের এলাকার শত শত নারী-পুরুষ লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে শুধু দোয়া করছিলেন।
নির্মাণাধীন ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি রিসোর্টের মালিক আতিকুল্লা বাবুল বলেন, আমাদের কোনো অবহেলা ছিল না। রিসোর্টটি এখনো নির্মাণাধীন হওয়ায় লেকে কোনো তদারকির ব্যবস্থা ছিল না। লোকজন যার যার ইচ্ছামতো লেকে নেমে সাঁতার কাটে।
টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের প্রধান ইদ্রীস আলী বলেন, সোমবার (১৪ এপ্রিল) দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (৬ ঘণ্টা) নিখোঁজ শিক্ষার্থী উদ্ধারে লেকে অভিযান চালানো হয়। ওইদিন সন্ধান না পেয়ে পরদিন মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে আবার তারা অনুসন্ধান চালিয়ে বিকেল ৪টায় শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, লেকের পানিতে ডুবে নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন