চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলসহ ৫ দফা দাবি বৈষম্যবিরোধী কর্মচারি ঐক্য ফোরামের

নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অবিলম্বে ‘সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল’সহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে ‘বৈষম্যবিরোধী কর্মচারি ঐক্য ফোরাম’। দাবি পুরণ না করা হলে শিগগিরই কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছেন সংগঠনের সভাপতি এ বি এম আবদুস সাত্তার।
তিনি বলেন, “প্রশাসনকে গতিশীল করা ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু-নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সকল চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। সিভিল প্রশাসনে কর্মরত ক্যাডার, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে যারা ফ্যাসিস্টদের দোসর ও দুর্নীতি পরায়ন তাদেরকে অবিলম্বে চাকুরি থেকে অপসারণ এবং আইনের আওতায় আনতে হবে।”
স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন গড়ে তোলার জন্য ‘আওয়ামী আস্থাভাজন, দলদাস ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদেরদের অপসারণ’ করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সভাপতি সাবেক সচিব সাত্তার কথা বলছিলেন।
অন্য দাবিগুলো হল-বৈষ্যমের শিকার সকল কর্মকর্তা-নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরকে মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যান্য সংস্থা ও দফতরে গুতুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন, এখনো বঞ্চিতদের পদোন্নতিসহ প্রাপ্য সুবিধা দেওয়া এবং ফ্যাসিস্টদের দোসর ও দুর্নীতি পরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের পদোন্নতি/পদায়নে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করছেন তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা।
পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন ও বিবৃতির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সিভিল প্রশাসনের সব ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং জড়িত ব্যক্তি ও কর্মকর্তাদের বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরা হবে বরেও জানিয়েছেন সাত্তার।
‘চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রসঙ্গে’
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে সাত্তার বলেন, “ফ্যাসিস্ট আমলেও মতই বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারও চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের ধারা অব্যাহত রেখেছে। এমনকি ফ্যাসিস্ট সরকারের দেওয়া চুক্তিভিত্তিক বাতিল করা হবে এই মর্মে ঘোষণা দিয়েও কোনো কোনো কর্মকর্তার চুক্তি অব্যাহত রেখেছে। চুক্তি বাতিল করে আবার নতুন করে একই ব্যক্তিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে।
“কোনো কোনো পদে পূর্ব পরিচয়, বিশেষ যোগসূত্র বা অজ্ঞাত কারণে কোনো প্রক্রিয়ায় অনুসরণ ব্যতিরেখে ভিনদেশী নাগরিককেও চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে বর্তমান সরকার। আবার কোন কোন পদে ফ্যাসিস্ট সহযোগী, বিতর্কিত ও এক এগারোর দোসর কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।”
এভাবে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা দেশে ‘অস্থিরতা’ সৃষ্টি করছে বলেও মন্তব্য করেছেন সাত্তার।
আরও পড়ুনতিনি বলেন, “শুধু তাই নয়, ক্ষেত্রে বিশেষে উপদেষ্টাদেরও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তার লক্ষ্য প্রশাসন ও সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচন বিলম্বিত করা ও অনৈতিক ফয়দা লাভ করা।কাজেই অবিলম্বে সকল চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “সাতক্ষীরা জেলায় গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যা পরিচালনাকারী বর্তমান পানি সম্পদ সচিব নাজমুল হাসান, শেখ মুজিব জন্মবার্ষিকী পালনে শত শত কোটি টাকা লোপাটের নায়ক বর্তমান কৃষি সচিব এমদাদুল্লাহ মিয়া, মুজিবপ্রেমী কর্মকর্তা বর্তমানে মন্ত্রি পরিষদ বিভাগে মাঠ ও সমন্বয় বিভাগের সচিব জাহেদা পারভীন ও অন্যান্য ফ্যাসিস্ট দোসর সচিবরা এখনে কেন বা কাদের প্রশ্রয়ে চাকরিতে আছে? অবিলম্বে এসব কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে অপসারণ করতে হবে।”
সাত্তার বলেন, “জেলা প্রশাসক পদায়নে ফ্যাসিস্টদের পদায়ন এবং অতি সম্প্রতি ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে ১৮৫ জনকে রহস্যজনকভাবে পদোন্নতি না দেওয়া এবং ফ্যাসিস্ট আমলে জেলা প্রশাসক/ফ্যাসিস্ট মন্ত্রী/সচিবদের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্বপালন করা ২২ জন কর্মকর্তাদের যুগ্ম সচিব করা হয়েছে।”
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার গোটা প্রশাসনকে ‘দলতন্ত্রের পরিণত করেছে’ অভিযোগ করে সাত্তার বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার কোনো রকম ন্যায়নীতির তোয়াক্কা করেনি। দক্ষতা, যোগ্যতা দেখার প্রয়োজন বোধ করেনি। ধার ধারেনি প্রশাসনিক নিয়মকানুনের। যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকা সত্বেও অনেক সিনিয়ন কর্মকর্তাদের ডিঙিয়ে পছন্দের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে। ফলে পেশাদার ও যোগ্য আমলাদের অনেক বন্চনা, হতাশা, অপমানে নিগৃহিত হয়ে মারা গেছেন। মিথ্যা অভিযোগে কারো কারো নামে মামলা দেওয়া হয়েছে, তাদের জেলে যেতে হয়েছে।”
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমরা মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের সাফল্য কামনা করি এবং এই সরকারেরর আইনানুগ ও স্বৈরাচার মুক্ত প্রশাসন প্রতিষ্ঠার সকল পদক্ষেপে সহায়তা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
‘‘বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার সামনে এগিয়ে যাবে এবং জন আকাংখা পুরণে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো বিনির্মাণের মাধ্যমে জনগনের সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় বিচার ফিরে আসবে এটাই সকলের প্রত্যাশা।”
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের কর্মকর্তা সাবেক সচিব বিজন কান্তি সরকার, সাবেক সচিব আবদুল খালেক, সাবেক সচিব আবদুল বারী ও সাবেক সচিব কাজী মেরাজ হোসেনসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন