তিনি আরো বলেন, ‘আমি কয়েকজনকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখলাম, মনে হচ্ছিল তারা মারা গেছে।’
এই ‘অমানবিক’ হামলাকে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর অন্যতম ভয়াবহ হামলা হিসেবে বর্ণনা করেছেন অঞ্চলটির মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেসামরিকদের লক্ষ্য করে যত হামলা হয়েছে, তার তুলনায় এটি অনেক বড়, আর মৃতের সংখ্যা এখনো নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের অতিথিদের ওপর এই হামলা এক জঘন্য অপরাধ। হামলাকারীরা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট, অমানবিক ও ঘৃণার যোগ্য।’
আরও পড়ুন
এই অঞ্চলে ভারতের নিয়োগকৃত গভর্নর মনোজ সিনহা বলেন, ‘পর্যটকদের ওপর কাপুরুষোচিত এই সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। এই ঘৃণ্য হামলার পেছনে যারা রয়েছে, তারা শাস্তির বাইরে থাকবে না—মানুষকে এই বিষয়ে আশ্বস্ত করছি।’
হামলাটি ঘটেছে জনপ্রিয় গ্রীষ্মকালীন পর্যটনস্থল পহেলগামে, যা শ্রীনগর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
পর্যটনকে কেন্দ্র করে ভারতের প্রচারণা
কাশ্মীরে ভারতের আনুমানিক পাঁচ লাখ সেনা স্থায়ীভাবে মোতায়েন রয়েছে। তবে ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার অঞ্চলটির বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিল করার পর থেকে সংঘর্ষের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। তার পর থেকে কর্তৃপক্ষ এই পার্বত্য অঞ্চলটিকে পর্যটন গন্তব্য হিসেবে জোরালোভাবে প্রচার করে আসছে—শীতে স্কিইং ও গ্রীষ্মে দেশের অন্যান্য জায়গার তীব্র গরম থেকে মুক্তির জায়গা হিসেবে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে প্রায় ৩৫ লাখ পর্যটক কাশ্মীর সফর করেছে, যাদের বেশির ভাগই ভারতীয়।
২০২৩ সালে ভারত কাশ্মীরের শ্রীনগরে কড়া নিরাপত্তায় জি২০ পর্যটন সম্মেলনের আয়োজন করে, যেখানে সরকার বলেছিল, ‘স্বাভাবিকতা ও শান্তি’ ফিরিয়ে আনা হয়েছে ব্যাপক দমন-পীড়নের মাধ্যমে। কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত করে রাখা ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের কাছাকাছি এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পর্যটন রিসোর্ট নির্মাণের কাজ চলছে।
ভারতের বিজেপি নেতা রবীন্দ্র রায়না বলেন, ‘এই কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসীরা নিরস্ত্র, নিরীহ পর্যটকদের লক্ষ্য করেছে, যারা কাশ্মীর দেখতে এসেছিলেন। কিছু পর্যটক আহত অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি আছেন।’
ভারত প্রায়ই কাশ্মীরে এই ধরনের হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, তারা কেবল কাশ্মীরের আত্মনিয়ন্ত্রণ সংগ্রামকে নৈতিকভাবে সমর্থন করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি ঘটেছিল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মীরের পুলওয়ামায়। তখন বিদ্রোহীরা বিস্ফোরকে ভর্তি একটি গাড়ি নিয়ে পুলিশের গাড়িবহরে হামলা চালায়। ওই হামলায় ৪০ জন নিহত ও অন্তত ৩৫ জন আহত হয়। এ ছাড়া বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সর্বশেষ সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলাটি হয়েছিল ২০০০ সালের মার্চ মাসে। তখন ৩৬ জন ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়।