পাঁচ বছরে বিএসএফ’র গুলিতে রংপুর বিভাগের ছয় জেলায় ৬১ জন নিহত

রংপুর প্রতিনিধি : বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গত পাঁচ বছরে বিএসএফ’র গুলিতে যে ১৫১ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন তার মধ্যে রংপুর বিভাগের ছয় জেলায় ৬১ জন রয়েছেন, যা মোট হত্যাকান্ডের ৪০ শতাংশ। এর মধ্যে শুধু লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ’র নির্যাতন ও গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে ১৯ জন।
সর্বশেষ গত ১৭ এপ্রিল লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার সিংগীমারী সীমান্তে ঘাস কাটার সময় বাংলাদেশ অংশে ঢুকে হাসিবুল নামে এক বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে বিএসএফ হত্যা করে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। হাসিবুলের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, বিএসএফ তাকে ঘাস কাটা অবস্থায় ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের পর হত্যা করে।
রংপুর বিভাগের লালমনিহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলায় বাংলাদেশ ভারতের কয়েকশ’ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। লালমনিরহাট জেলার যে পাঁচটি উপজেলা রয়েছে সবকটি উপজেলাই সীমান্ত ঘেঁষা।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে সীমান্তে প্রাণ হারিয়েছে ১১৮ জন বাংলাদেশি। এরমধ্যে ৬১ জনই রংপুর বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন সীমান্তে বসবাসকারী। সীমান্তে বসবাসকারীদের অভিযোগ, বিএসএফ’র অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ফলে সব সময়ই তাদেরকে আতঙ্কে জীবনযাপন করতে হয়। গ্রামবাসীরা জানান, তারা চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারেন না। বিএসএফ যখন-তখন ফায়ার করে বসে। তাদের সন্দেহ যারা জমিতে কৃষি কাজ করে তারাই বোধহয় চোরাচালান করছে, এই সন্দেহে তারা প্রায় সময় এই ফায়ার করে।
আরও পড়ুনসীমান্তের কাটাতারের বেড়া ঘেঁষে বাংলাদেশের কৃষকদের যে জমি রয়েছে সেখানে কৃষিসহ নানা কাজে যাতায়াত করে সীমান্ত পাড়ের মানুষেরা। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু মানুষ জড়িয়ে পড়েছে চোরাচালানেও। তবে দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী সরাসরি হত্যা গ্রহণযোগ্য না হলেও ভারতীয় সীমান্তরক্ষীর হাতে হত্যার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত।
সীমান্ত বিশ্লেষক মোকারম হোসেন জানান, বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে প্রতি বছর যতো মানুষ প্রাণ হারান বিশ্বের কোথাও এতো মানুষ সীমান্ত কিলের শিকার হন না। উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীদের সবসময় ভেবে-চিন্তে কাজ করতে হবে। তিনি সেই সাথে বাংলাদেশ সীমান্তে বসবাসকারীদের আইন মেনে চলার পরামর্শ দেন। কেউ যদি কোনো সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন।
রংপুরের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার (স্থানীয় সরকার) আবু জাফর জানান, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলনে সীমান্তে এসব হত্যাকান্ডের ব্যাপারে ভারতের সাথে আলোচনা করে থাকি। তারপরেও কিছু ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, সীমান্ত জেলাগুলো জেলা প্রশাসকদের সাথে এই নিয়ে আমরা একটি নির্দেশনা দিয়েছি। যাতে করে সীমান্তে আর কোন হত্যাকান্ড না ঘটে।
মন্তব্য করুন