কৃষকদের সুখবর দিলেন তারেক রহমান

প্রতি বছর একজন কৃষককে একটি ফসল চাষের খরচ বাবদ পুরোপুরি সহায়তা করার উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কৃষকদের এমন সুখবর দিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘এক কৃষক বছরে তিন বা দুই ধরনের ফসল করলে একটা ফসলের ফুল সাপোর্ট আমরা দিতে চাইছি। এটা প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষককে দিয়ে আমরা শুরু করব। যাদের দশ বিঘা বা সাত বিঘার উপরে জমি আছে তাদের ক্ষেত্রে আমরা মনে করি না যে দরকার আছে।’
আজ বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে বিএনপির ৩১ দফাসংক্রান্ত এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে এক নেতার প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। কর্মশালায় রংপুর, নীলফামারী ও সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতারা অংশ নেন।
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘কৃষকদের জন্য ফরমার্স কার্ড আনা হবে। এ কার্ডে কৃষকের নাম, জমির পরিমাণ, দাগ নম্বরসহ অনেক কিছু থাকবে। লোন নিতে গিয়ে এখন কৃষকদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়। কৃষকের ঋণ দরকার হলে তথ্যের জন্য কৃষি ব্যাংক সেখানে এক্সেস করতে পারবে। কোনো দালালের দরকার হবে না। অনেক জমির মালিক আছে যারা বর্গা দিয়ে দেয় অন্য কেউ সেগুলো ব্যবহার করে। আপনি যখন কোনো সুবিধা দেবেন তখন দেখা যাচ্ছে, জমির মালিক সেই সুবিধা নিচ্ছে কিন্তু সে তো কৃষিকাজ করছে না।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিএনপিসহ আরও কিছু রাজনৈতিক দলের তরুণ নেতৃত্ব, তরুণ সহকর্মী ছিল, তাদের অনেকেরই আন্দোলন সংগ্রামের কারণে বয়স পার হয়ে গেছে। এটার ভুক্তভোগী ছাত্রদল করেছে শুধু তারাই নয় এর বাইরে অনেক মানুষ আছেন। যারা স্বৈরাচারের রাজনীতি সমর্থন করত না কিন্তু তাদেরও চাকরি খেয়েছে বা দেয়নি। এই বাস্তবতা বিবেচনা আমাদের করতে হবে। যারা চাকরি পায়নি তাদের জন্য একটা শিক্ষিত বেকার ভাতার ব্যবস্থা করার। এটা এক বছর পর্যন্ত থাকবে। এর মধ্যে সরকার তাদের কর্মসংস্থানের জন্য চেষ্টা করবে। শিক্ষিত বেকাররাও তাদের কর্মসংস্থানের চেষ্টা করবে।’
সংখ্যালঘুদের জন্য সংসদে পাঁচ শতাংশ সংরক্ষিত আসনের দাবি নিয়ে প্রশ্ন করেন সৈয়দপুর জেলা বিএনপির সহসভাপতি সুমিত কুমার আগরওয়ালা।
তার প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কোনো মানুষকে তার ধর্ম, বর্ণ দিয়ে বিবেচনা করি না যারা বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা তাদের বাংলাদেশি হিসেবে দেখি। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ বা সংখ্যালঘিষ্ঠ বিষয় নেই। রাষ্ট্র ও সংবিধান একজন নাগরিককে যে অধিকার দেয়, সেই বিচারে সবার সমানভাবে সবকিছু পাওয়ার অধিকার রয়েছে।’
আরও পড়ুনজাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন বাড়ানোর প্রক্রিয়া নিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘সংসদে এই মুহূর্তে সংসদে সংরক্ষিত আসন রয়েছে পঞ্চাশ। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যখন দায়িত্বে ছিলেন তখন ওনি অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যার উদ্দেশ্য ছিল এ দেশের নারীর ক্ষমতায়ন করা। নারীদের শিক্ষা ব্যবস্থা যেটি ডিগ্রি পর্যন্ত আছে এটি বিএনপি বা খালেদা জিয়ার করা। সংসদে যে ৫০টি আসন আছে সেগুলো বৃদ্ধি করা উচিত বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা দলের থেকে প্রস্তাব দিয়েছি ৫০ টিকে বৃদ্ধি করে ১০০টিতে নিয়ে যেতে চাই। এটা আলোচনার বিষয়। ’
রংপুর অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, তিস্তার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন দেখার জন্য রংপুরের ৫ জেলা মানুষ মুখিয়ে আছেন। রংপুর বিভাগ রাষ্ট্রীয়ভাবে অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়েছে। তিস্তার পুরো এলাকা রংপুর বিভাগের তিন কোটি মানুষ কম-বেশি ওতপ্রোতভাবে তিস্তার সঙ্গে যুক্ত। এর বাইরেও আরও বহু মানুষ বিভিন্নভাবে জড়িত। কাজেই তিস্তা আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। যেভাবেই হোক আমাদের তিস্তার সমস্যার সমাধানে একটি জায়গায় পৌঁছাতে হবে।’
আমরা দেখেছি বিগত ১০-১৫ বছর তিস্তাকে নিয়ে রাজনীতি হয়েছে। এতে মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন করেনি। বিএনপির আয়োজনে লালমনিরহাটে তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনে দেশ ও মানুষের স্বার্থে এগিয়ে এসে বিষয়টি তুলে ধরেছে। বিএনপির এই উদ্যোগ প্রমাণ করে আগামী দিনে বিএনপি দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে যে কোনো মূল্যে যেভাবে করলে মানুষের জন্য ভালো হবে আমরা সেভাবেই তিস্তা প্রকল্প গ্রহণ করব।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটির উদ্যোগে সকাল ১১টায় রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এ কর্মশালা শুরু হয়। এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর, সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) আসাদুল হাবিব দুলু, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মোর্শেদ হাসান খান, সহসাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মীর মো. হেলাল উদ্দিন, সহআন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা, মিডিয়া সেলের সদস্য ফারজানা শারমিন।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামুর সভাপতিত্ব ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় কর্মশালায় উদ্বোধনী বক্তব্য দেন দলের প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।
মন্তব্য করুন