ভিডিও বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

সন্তানের জন্য ছাড় শুধু মা’কেই দিতে হয় !

সন্তানের জন্য ছাড় শুধু মা’কেই দিতে হয় !

নিজের আলোয় ডেস্ক: শিমু বিয়ের আট বছর পর সন্তানের মুখ দেখবে। কিছু জটিলতার কারণে শিমুকে পুরোটা সময় বেড রেস্টে থাকতে হয়। বিনা বেতনে ছুটিতে থেকে সে বাচ্চার মা হলো। বাচ্চার ছয়মাস বয়স হলো, এরপর সে চাকরিতে জয়েন করবে কিন্তু সহযোগিতায় মা, শাশুড়ি কিংবা বিশ্বস্ত আত্মীয়-অনাত্মীয় কাউকেই সে পাশে পেল না। যার কাছে সে বাচ্চাকে রেখে যেতে পারে। অফিস যদিও আধুনিক, তবু সেখানে বাচ্চা রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই।
স্বামী বলল, ‘আমার ইনকাম কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয়? তোমার কাছে সন্তান আগে না ক্যারিয়ার আগে?’ সন্তানের ভালোর জন্য সে চাকরি ছাড়লেও হতাশা তাকে ছাড়েনি। কারণ, চাকরি ছাড়ার ফলে সে এখন ফুল টাইম বাসায় থাকে। তাদের দুই পরিবারের যত আত্মীয়-স্বজন শহরে নানান কাজে কিংবা চিকিৎসার জন্য আসে, তারা সবাই এখন তাদের বাসায় এসে ওঠে। বাচ্চা সামলানোর পাশাপাশি তাকে মেহমানদের তদারকিতেও থাকতে হয়। আর এতসব সামলাতে গিয়ে সে যেন তার বাচ্চার কেয়ার ঠিকমত করতে পারছে না। চাকরি না করেও চব্বিশ ঘণ্টা সংসার আর মেহমানদারিতে তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বেহাল। এছাড়াও ছোট-বড় যে কোনো খরচের ক্ষেত্রে তাকে টাকা চেয়ে নিতে হয় এবং প্রতিটা খরচের হিসাব দিতে হয়। সে এখন তার আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগছে।
যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে যাওয়ায় বাচ্চার টেককেয়ার করার কেউ না থাকা এবং বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে মানসম্মত ডে কেয়ার সেন্টার না থাকার কারণে আধুনিক কর্মজীবীদের মা হওয়ার আনন্দ যেন ম্লান হতে বসেছে। বাচ্চা মানুষ করার সব দায় যেন একমাত্র মায়ের। অথচ সংসার কিন্তু যৌথ। প্যারেন্টিং শব্দটাতে বাবা-মা দু’জনকেই বোঝায়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বাবারা সন্তানের ন্যাপি পাল্টাবে অথবা বাচ্চাকে ঘুম পাড়াবে এমন দৃশ্য এখনও সাধারণ নয়।
আইনজীবী ও নারী অধিকারকর্মী প্রমা ইসরাত বলেন, ‘জেন্ডার শ্রম বিভাজনের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের কাজের সুষম বণ্টনের সংস্কৃতি আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় গড়ে ওঠেনি। তাই সমাজ নির্ধারণ করে দেয় যে সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রে মাকেই সব সময় বাচ্চার সঙ্গে থাকতে হবে। আর এজন্যই নারীকেই চাকরি ছাড়তে হয়।’ সবার কাছে চাকরি বা ক্যারিয়ার শুধু টাকার সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যাপার নয়। এর সঙ্গে তার আত্মসম্মান, পরিচিতি, স্বাধীনতা, স্বাচ্ছন্দ্য, সব জড়িত থাকে। মানুষের নিজস্বতা, আত্মবিশ্বাস ও স্বপ্ন পূরণের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে তার পেশা।
স্বামীসহ পরিবারের অন্যদের চিন্তাধারা এই যে, ‘সন্তান মায়ের গর্ভে থাকে তাই মাই ভালো বুঝবে অন্যদের চেয়ে। আর তাই সন্তানের সব দায়িত্ব মাই পালন করবে।’ এই ধারণার ফলে সন্তান মানেই নারীর বাইরের কাজের সুযোগ সীমিত কিংবা বন্ধ হয়ে যাওয়া। পুরুষদের মেল ইগোর কারণে অধিকাংশ পুরুষই ভাবেন ‘আমিতো চাকরি করে আয় করছি, আমাকে কেন ঘরের কিংবা বাচ্চার কাজ দেখতে হবে।’ এর কারণ হলো ছোটবেলা থেকেই একটা মেয়েকে মা হতে শেখানো হয় যা কিনা ছেলেদের ব্যাপারে হয় না। এর ফলে ছেলেরা এসব কাজের সঙ্গে পরিচিত হয় না এবং যখন নিজের বাচ্চা হচ্ছে তখন সে বাড়তি দায়িত্ব নেয় না। ফলে মেয়েটির উপরই সবটুকু দায়িত্ব চেপে বসছে।
সরকারিভাবে যদি আইন করা হয় যে, অফিস কিংবা প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলকভাবে ডে-কেয়ার থাকতে হবে, তাহলে অনেকটাই কমে যাবে মায়েদের চাকরি ছাড়ার প্রবণতা। উন্নত বিশ্বে বেবি সিটিং-এর ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। উপযুক্ত সম্মানীর বিনিময়ে প্রতিবেশী অন্য মায়েদের কাছে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সন্তানকে রেখে যায়। বাংলাদেশেও এর প্রচলন শুরু করা যেতে পারে। এতে মায়েরা সন্তানের ব্যাপারে দুশ্চিন্তা না করে নিশ্চিন্তে চাকরি করতে পারবেন। 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি 

গাজা যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবে আবারও ভেটো যুক্তরাষ্ট্রের

সিইসি হলেন এ এম এম নাসির উদ্দীন

আপত্তিকর ভিডিও নিয়ে যা বললেন তিশা

সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখব : প্রধান উপদেষ্টা

মহাখালী থেকে রিকশাচালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া