দুবাইয়ে গাড়ী বিষ্ফোরণে ৫ বাংলাদেশি নিহত : পরিবারে শোকের মাতম
নবাবগঞ্জ( ঢাকা) প্রতিনিধি: ঘরের বারান্দায় বসে খেলা করছে ৬ বছরের শিশু ইভা। তবে বাড়িতে কান্নার রোল। পরিবারের সদস্যদের সান্ত¡না জানাতে এসেছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। ইভা জানে না তার দুবাইপ্রবাসী বাবা ইবাদুল ইসলাম সেখানে গাড়ি বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন। তাঁর বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বালেঙ্গা গ্রামে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে স্থানীয় সময় গত রোববার সকাল সাড়ে সাতটায় কর্মস্থলে যাওয়ার পথে গাড়ি বিস্ফোরিত হয়ে ঘটনাস্থলে পাঁচ বাংলাদেশি নিহত হন। এর মধ্যে নবাবগঞ্জের বালেঙ্গা গ্রামের চারজন ও দোহার উপজেলার দোহার বাজার এলাকার একজন।
নিহতরা হলেন বালেঙ্গা গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে মো. রানা (৩০), আবদুল হাকিমের ছেলে মো. রাশেদ (৩২), শেখ ইরশাদের ছেলে মো. রাজু (২৪), শেখ ইব্রাহিমের ছেলে ইবাদুল ইসলাম (৩৪) ও দোহার বাজার এলাকার মো. মঞ্জুরের ছেলে মো. হীরা মিয়া (২২)। পাঁচজনই একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে বালেঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ইবাদুল ইসলামের বাড়িতে শোকাচ্ছন্ন পরিবেশ। স্বামী হারানোর শোকে স্ত্রী জান্নাতুল আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। স্বজনেরা তাঁকে সান্ত¡না দিচ্ছেন। তবে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন জান্নাতুল।
সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় ইবাদুলের মা নাজমা বেগম। এক বছর আগে এনজিও থেকে দেড় লাখ টাকা তুলে ছেলেকে দুবাই পাঠান। ছেলে পরপারে চলে গেলেও কিস্তির দায় তাঁকেই বহন করতে হবে, এ কথা বলতে বলতে তাঁর দুই চোখে পানি গড়িয়ে পড়ে। পাশেই নির্বাক দাঁড়িয়ে আছেন, ইবাদুলের বাবা শেখ ইব্রাহিম ও ছোট ভাই কামরুল ইসলাম।
আরও পড়ুনমো. রাজুর নিহত হওয়ার খবর শুনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাঁর অন্তঃসত্ত¡া স্ত্রী ফারজানা আক্তার। ছয় মাস আগে তাঁদের বিয়ে হয়েছে। বিয়ের তিন মাস পর রাজু দুবাই চলে যান। গতকাল দুপুরে স্বামীর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ফারজানা আক্তার অচেতন হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে দোহারের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
তিন ভাইয়ের মধ্যে রাজু ছোট। রাজুর মা আছিয়া বেগম বুক চাপড়ে বারবার বলছিলেন, ‘তোমরা আমার রাজুকে এনে দাও। একবার ওর মুখটা দেখি।’
মো. রাশেদের বাড়িও বালেঙ্গা গ্রামে। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। ৫ বছর বয়সে বাবাকে হারান রাশেদ। মা ইয়ারন বেগম ছেলেকে বড় করেছেন। ধারদেনা করে ছেলেকে বিদেশে পাঠান। এখনো দেনা পরিশোধ হয়নি। হাউমাউ করে কাঁদছিলেন ইয়ারন বেগম। তাঁর কোলে রাশেদের একমাত্র ছেলে রেজু; বয়স সাড়ে ৪ বছর।
রাশেদের স্ত্রী বৃষ্টি আক্তার গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে বলেন, ‘আপনারা আমার স্বামীকে এনে দ্যান। সে কোথায় আছে? আমি একবার তাকে দেখব।’
মন্তব্য করুন