ভিডিও বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

চোখ বুলেট নিয়ে ১২ দিন জেল খেটেছেন আশরাফুল

চোখ বুলেট নিয়ে ১২ দিন জেল খেটেছেন আশরাফুল

নিউজ ডেস্ক: কোটা বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে  চোখে বুলেটবিদ্ধ হয়েও ১২ দিন জেল খাটতে হয়েছিলো কলেজ শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলামকে।


নরসিংদীর পলাশ বাজার এলাকার দিন মজুর সাব্বির হোসেনের বড় ছেলে আশরাফুল ইসলাম। তিনি নরসিংদী সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

আলাপকালে আশরাফুল বলেন, ১৮ জুলাই বিকালে নরসিংদীর ভেলানগর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেই। মিছিল কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর এলোপাতাড়ি গুলি আসতে থাকে। এ সময় পুলিশের করা গুলিতে নরসিংদীর এনকেএম হাই স্কুল অ্যান্ড হোমস বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শহীদ তাহমিদ ভুইয়া আমার পাশে গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তাকে উদ্ধার করতে গেলে আমার বাম চোখে পুলিশের ৪টি ছোড়া গুলি লাগে।মুহূর্তে আমিও মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা আমাকে নরসিংদী ১০০ শষ্যা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে আমার বাবাকে খবর দিলে বাবা হাসপাতাল থেকে আমাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে সন্ধ্যার পর বাড়িতে নিয়ে আসে।পরের দিন ১৯ জুলাই সকালে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেদিনই আমার চোখ অপারেশন করে।হাসপাতাল থেকে বাবা আমাকে ২১ জুলাই বাড়িতে নিয়ে আসে।

কান্নারত কন্ঠে শিক্ষার্থী আশরাফুল বলেন, চোখ অপারেশন করে আসার পরের দিনই ২২ জুলাই প্রায় ২০-২৫ জনের একদল পুলিশ আমার বাড়িতে এসে আমাকে মারধর করে ধরে নিয়ে যায়।একদিন থানায় রাখার পর ২৩ জুলাই পুলিশ আমাকে নরসিংদী মডেল থানায় হস্তান্তর করেন। পুলিশ আমার বিরুদ্ধে নরসিংদী জেল খানায় হামলা ও ভাঙচুরের মামলা দিয়ে আমাকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। জেলে থাকা অবস্থায়ও আমাকে ভৈরব রেলওয়ে ফাড়িতে হামলার আরও একটি মামলা দেয় আমার নামে।পুলিশের কাছে আমার চোখের ওষুধ ও কাগজপত্র সাথে নিয়ে যাওয়ার আকুতি মিনতি করেও কোনো লাভ হয়নি।

শিক্ষার্থী আশরাফুল আরও বলেন, ১৯ জুলাই আমি জেলখানার হামলায় ছিলাম না, সে দিন ঢাকাতে চোখ অপারেশন করিয়েছি সে কথা বলার পরও পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো। ১২ দিন জেল খাটার পর ৩ আগস্ট এইচএসসি পরীক্ষার্থী থাকায় ছাত্রজনতার দাবির মুখে আমাকে জামিন দেয়। জামিনে বাড়িতে আসার পর ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে সরকারের পতন হলে নিজেকে তখন মুক্ত মনে করি।

আরও পড়ুন

এদিকে বাম চোখের ভিতর গুলি থাকায় পুরোপুরিই বাম চোখটা দিয়ে কিছুই দেখতে পাই না। এমতাবস্থায় আমার বাবা ১৮ আগস্ট আমাকে পুনরায় ঢাকা ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করলে ডাক্তার ১৯ আগস্ট পুনরায় আমার চোখ অপারেশন করে। সরকারি নির্দেশনায় এ অপারেশন সম্পুর্ণ ফ্রিতে করানো হয়েছে। অপারেশন করার পর ডাক্তার বলেছে চোখ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কম।অপারেশর করার ফলে চোখ শুকিয়ে যাবে না। 

আশরাফুল ইসলামরা দুই ভাই এক বোন। তিনি সবার বড়। ছোট ভাই আনিসুর রহমান পলাশ শিল্পাঞ্চল সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছোট বোন ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। 

ছোট ভাই আনিসুর রহমান জানান,আমার বাবা-মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল আমরা দুই ভাই বড় হয়ে পুলিশ অফিসার হবো।কিন্ত পুলিশের এমন জঘন্য আচরণে আমার বাবা-মার সে আশা নষ্ট হয়ে গেছে। পুলিশের প্রতি তাদের এখন ঘৃণা জন্মেছে। আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আমিও ১৫ দিন পালিয়ে ছিলাম।

আশরাফুল ইসলামের বাবা সাব্বির হোসেন বলেন,আমার ছেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা তার পাশে থেকে আর্থিক সহযোগিতাসহ সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে। আমার ছেলেকে নিয়ে আমি গর্বিত। আমার ছেলের মতো অসংখ্য ছাত্ররা জীবন দিয়ে রক্ত দিয়ে দেশ নতুন করে স্বাধীন করেছে। গুলিবিদ্ধ ছেলের চোখের চিকিৎসা ব্যয় এবং সংসারের আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটাতে গিয়ে খুব বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে আমাকে।আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি সরকার যেন আমার ছেলের চিকিৎসার ব্যয় এবং সংসারের হাল ধরার স্বপ্ন পূরণ করতে তার সাথে থাকে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসি. এর রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির ৪১তম সভা অনুষ্ঠিত

যমুনা ব্যাংক ও নাজিমগড় রিসোর্টস এর মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর

এনসিসি ব্যাংক এর সাথে ফিনকোচ বাংলাদেশের চুক্তি স্বাক্ষর 

ভোটের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ এসেছে : গণসংযোগে সাবেক এমপি সিরাজ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ, ৩ বাংলাদেশি গ্রেফতার

আসন্ন দুর্গাপূজা উৎসব সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে - মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা