মুক্তার ও দুলুকে খুঁজছে পুলিশ
শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার শাজাহানপুরে স্বেচ্ছাসেবকলীগ কর্মী সন্ত্রাসী সাগরসহ জোড়া খুনের ঘটনায় কোন ক্লু উদ্ধার হয়নি। এ ঘটনায় কেউ আটক বা গ্রেপ্তারও হয়নি। তবে মুক্তার ও দুলু নামের দুই ব্যক্তিকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ।
ধারণা করা হচ্ছে মুক্তার ও দুলুকে পাওয়া গেলে জোড়া খুনের এই ঘটনার ক্লু পাওয়া যেতে পারে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আজ সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বাদ মাগরিব শাবরুল এলাকায় সাগর ও স্বপনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। খুনের ঘটনায় আজ সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত শাজাহানপুর থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল।
উল্লেখ্য, গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে উপজেলার শাবরুল ছোট মন্ডলপাড়া এলাকায় একটি মুরগির খামারের সামনে পূর্ব শত্রুতার জেরে নৃশংস খুনের শিকার হয় হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি, মাদক, দখলবাজিসহ দেড় ডজন মামলার আসামি স্বেচ্ছাসেবকলীগ কর্মী সাগর তালুকদার (২৯) ও তার সহযোগী স্বপন (২৮)। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শাবরুলের পার্শ্ববর্তী হরিদেব পাড়া এলাকার একটি পুকুরে মাছ চাষ করছিল সন্ত্রাসী সাগর।
মাছের খাবার দেওয়া হয়েছে কিনা তা জানতে গত রোববার সন্ধ্যায় মোটর সাইকেলযোগে সাগর, স্বপন ও মুক্তার ওই পুকুরে গিয়েছিল। সেখানে আগে থেকেই কাজ করছিল পুকুরের কেয়ারটেকার দুলু (৪৬)। সে শাবরুল হাটখোলা পাড়ার মৃত ইয়াছিন আলীর ছেলে। পুকুরপাড়ে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাবরুল ছোট মন্ডল পাড়া এলাকায় ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত একদল দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হয় মোটর সাইকেলে থাকা সাগর ও তার দুই সহযোগী।
হামলাকারীরা রাম দা ও চাপাতি দিয়ে উপুর্যুপরি কুপিয়ে নৃশংসভাবে খুন করে সাগর ও তার সহযোগী স্বপনকে। কিন্তু অপর সহযোগী মুক্তার হোসেন গুরুতর আহত অবস্থায় দৌড়ে পালিয়ে যায়। রোববার সন্ধ্যায় জোড়া খুনের ঘটনার পর থেকে সাগরের সহযোগী মুক্তার হোসেন এবং পুকুরের কেয়ারটেকার দুলুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। পুলিশের ধারণা মুক্তার হোসেন এবং দুলুকে খুঁজে পাওয়া গেলে জোড়া খুনের ঘটনার ক্লু পাওয়া যেতে পারে। শাজাহানপুর উপজেলাসহ শাজাহানপুরের সীমান্তবর্তী কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলার প্রায় ৩০টি গ্রামে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করে স্বেচ্ছাসেবকলীগ কর্মী সাগর।
নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে তোলে সাগর। এই গ্রুপের মাধ্যমে সে হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, জমি ও পুকুর দখলসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল। শাবরুল বাজারের ব্যবসায়ীদের জিম্মী করে হাতিয়ে নিত মোটা অংকের টাকা। সাগরের কাজে কেউ বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেই তাকে দুনিয়া থেকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়া হতো। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না।
শাবরুলের পার্শ্ববর্তী এলাকা কাহালু উপজেলার মালঞ্চাতেও ছিল সাগর বাহিনীর অবাধ বিচরণ। সেখানেও সাগর বাহিনীর দাপটে চলতো চাঁদাবাজি ও দখলবাজি। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন যাবত শাবরুল এলাকায় খুন খারাবির ঘটনা ঘটে আসছিল। এর ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে শাবরুল বাজারের মাছ ব্যবসায়ী স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা শিহাব উদ্দিন বাবু এবং গত বছর প্রভাষক শাহজালাল তালুকদার পারভেজ খুনের ঘটনা ঘটে।
এসব খুনের মামলায় সাগর ও তার সহযোগিরা আসামি ছিল। শাজাহানপুর থানার ওসির দায়িত্বে থাকা সেকেন্ড অফিসার ওমর ফারুক জানিয়েছেন, সন্ত্রাসী সাগর ও তার সহযোগী স্বপন খুনের ঘটনায় শাজাহানপুর থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এ ঘটনার ক্লু উদ্ধারের চেষ্টাসহ জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশী অভিযান চলমান। তবে সাগরের সহযোগি মুক্তার হোসেন এবং পুকুরের কেয়ারটেকার দুলুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। তাদের সন্ধান পাওয়া গেছে জোড়া খুনের ক্লু উদ্ধার করা সহজ হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।