ভিডিও

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর, পানিবন্দি ৪০ হাজার পরিবার

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪, ১০:১৬ রাত
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪, ১০:২৩ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

করতোয়া ডেস্ক : প্রবল বৃষ্টিপাত আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে রংপুরের কাউনিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে তিস্তা রেলসেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে তিস্তার চর ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ফলে চরের সহস্রাধিক বাড়িঘর পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। এছাড়া ওই সব এলাকায় ধান, বাদাম ও মরিচ ক্ষেত তলিয়ে গেছে। হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় নদী ভাঙন ও ফসল নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে তিস্তার পাড়ের মানুষজন।

লালমনিরহাটে নদী তীরবর্তী এলাকার বেশ কিছু রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্ট ভেঙে গেছে পানির তোড়ে। উঠতি আমন ধান ও বিভিন্ন সবজি ক্ষেত ডুবে আছে বন্যার পানিতে। দীর্ঘ সময় ডুবে থাকলে এসব ফসলের মারাত্মক ক্ষতির শঙ্কা করছেন চাষিরা। একই সাথে বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরের মাছ।

কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি জানান, পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঢুষমারা, তালুক শাহবাজ, পূর্ব নিজপাড়ার অংশ, গোপীডাঙ্গা, আরাজি হরিশ্বর, চর প্রাণনাথ, শনশনিয়া, চর হয়বতখাঁ, চর গনাই, আজমখাঁর চর ও নতুন করে চর নাজিরদহ ও নাজিরদহ গ্রামের নিম্ন এলাকায় পানি উঠতে শুরু করেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচশ পরিবার।

এছাড়াও উঠতি আমন ধানের ক্ষেত বীজ বাদামক্ষেত, সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি আসায় ডালিয়া ব্যারেজের সবকটি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার আবু মো. মনিরুজ্জামান বলেন, অতিবৃষ্টিতে রোপা আমন ৭০ হেক্টর ও সবজি ফসল ২ হেক্টর আক্রান্ত হয়েছে। তবে কৃষকের ভাষ্যমতে আক্রান্ত ফসলের ক্ষেতের সংখ্যা অনেক বেশি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিদুল হক বলেন, আমি টেপামধুপুর ইউনিয়নের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ত্রাণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা সব বন্যাকবলিত এলাকার সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছি। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কাউনিয়ার তিস্তা রেলসেতু পয়েন্টে রোববার দুপুরে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, রাজারহাটে তিস্তা নদীর পানি হু হু বাড়তে শুরু করেছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার  চর ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ফলে চরের সহস্রাধিক বাড়িঘর পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। এছাড়া ওই সব এলাকায় ধান, বাদাম ও মরিচ ক্ষেত তলিয়ে গেছে। হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় নদী ভাঙন ও ফসল নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে তিস্তার পাড়ের মানুষজন।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের রোববার সকাল ৯ টার তথ্যমতে, কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে তিস্তার তীরবর্তী রাজারহাট উপজেলার চর বিদ্যানন্দ, খিতাব খাঁ, চর গতিয়াসাম, চর তৈয়বখাঁ, মাঝের চরের নিম্নাঞ্চলের সহস্রাধিক পরিবারের বসতভিটা এবং কয়েকশ’ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, খিতাব খাঁ মাঝের চরের ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। পানিবন্দি পরিবারদের জন্য ১কেজি মুড়ি, আধা কেজি চিড়া, খাবার স্যালাইন, মোমবাতি, দিয়াশলাই ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা বেগম।

রাজারহাট উপজেলার খিতাব খাঁ গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের বলেন, আমার তিন বিঘা জমিতে আধাপাকা ধানক্ষেত হঠাৎ তলিয়ে গেছে। কিছু ধান কাটতে পারলেও অবশিষ্ট সব পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আমার খুব ক্ষতি হয়ে গেল। আরেক কৃষক নুর ইসলাম বলেন, আমার শাক সবজি, ও বাদাম ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। হঠাৎ করে এমন পানি হবে চিন্তাও করতে পারিনি।

উপজেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) হৈমন্তি রাণী বলেন, রোববার সকালের তথ্যমতে চরাঞ্চলে ৪০হেক্টর জমির ধান, বাদাম, মরিচ ক্ষেত তলিয়ে গেছে। যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে আরও কয়েকশ’ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার খাদিজা বেগম বলেন, এ উপজেলায় বন্যা হতে পারে তাই আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করে চরাঞ্চলের মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে ও আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া পানিবন্দিদের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, পাহাড়ি ঢল আর কয়েক দিনের টানা ভারি বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চলের অনেক বসতবাড়িতে পানি উঠেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩৫ হাজার পরিবার। এদিকে পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলোও ঝুঁকিতে পড়েছে। বন্যা ও ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে নদীপাড়ের মানুষ।

আজ রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১৭ মিটার। যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগের দিন শনিবার দুপুর থেকে বিপৎসীমার কাছাকাছি পানি প্রবাহিত হয়। ফলে নদী তীরবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাম তীরের জেলা লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩৫ হাজার পরিবার। আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে তিস্তাপাড়ের মানুষজন।

নদী তীরবর্তী এলাকার বেশ কিছু রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্ট ভেঙে গেছে পানির তোড়ে। উঠতি আমন ধান ও বিভিন্ন সবজি ক্ষেত ডুবে আছে বন্যার পানিতে। দীর্ঘ সময় ডুবে থাকলে এসব ফসলের মারাত্মক ক্ষতির শঙ্কা করছেন চাষিরা। একই সাথে বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরের মাছ। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সলেডি স্প্যার বাঁধসহ বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। বাঁধ ভেসে যাওয়ায় শঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ভাটিতে থাকা শত শত পরিবার।

সলেডি স্প্যার বাঁধ-২ এলাকার আলী হোসেন বলেন, রাতে পানির গর্জনে ঘুমাতে পারিনি। সলেডি স্প্যার বাঁধে ব্রিজ অংশের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। এসময় বাঁধ কাঁপছিল। আমরা ভয় পেয়েছিলাম, স্প্যার বাঁধ বুঝি ভেসে যায়। স্থানীয়রা রাত জেগে বাঁধে বস্তা ফেলে রক্ষা করেছে। বন্যার সময় নির্ঘুম রাত কাটে তিস্তাপাড়ের মানুষদের।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার বলেন, রোববার সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হয়। ফলে তিস্তাপাড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, কিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী খুব দ্রুত পৌঁছে দেওয়া হবে। একই সাথে যাতে বাঁধ বা সড়ক ভেঙে নতুন এলাকা প্লাবিত না হয় সেটা নজরদারি করে ইতোমধ্যে জিও ব্যাগ দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। বন্যা মোকাবিলা করতে জেলা, উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS