আদালতের নির্দেশ না থাকায়
বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় ৬৭৪ জন হতদরিদ্রের জব্দকৃত সরকারি চাল বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না
দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার চামরুল ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৬৭৪ জন হতদরিদ্রর সরকারি জব্দকৃত চাল আদালতের নির্দেশ না থাকায় হতদরিদ্রদের মাঝে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে ভুক্তভোগী কার্ডধারীরা দুর্ভোগে পড়েছেন।
জানা গেছে, উপজেলার চামরুল ইউনিয়নের মোস্তফাপুরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার আব্দুর রহিম অন্যদের সাথে যোগসাজস করে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল কালোবাজারে বেশি দামে বিক্রির জন্য স্থানীয় একটি বাড়ির পরিত্যক্ত ঘরে রেখে পরে বস্তা পরিবর্তন করে প্লাস্টিকের বস্তায় সংরক্ষণ করেন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার জান্নাত আরা তিথি খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ফোর্সসহ ওই ঘরে অভিযান চালান এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৩০ কেজি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ১৭৫টি খালি বস্তা উদ্ধার করেন। এছাড়াও প্লাস্টিকের বড় বস্তায় ৬০ কেজি করে ৫২ বস্তা চাল উদ্ধার করেন। অপরদিকে একই দিন বিকেলে উপজেলার জিয়ানগর বাজারে আব্দুল কাদেরের মালিকানাধীন মেসার্স নুর ট্রেডার্সে অভিযান চালান। সেখানে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৬শ’টি প্লাস্টিকের বস্তায় ২০ কেজি করে ১২শ’ কেজি পুষ্টি মিশ্রিত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল উদ্ধার করেন। এ সংক্রান্তে উপজেলার চামরুল ইউনিয়নের কাথহালী দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত জহির উদ্দীন প্রামানিকের ছেলে ডিলার আব্দুর রহিম (৪৭) ও মিল মালিক জিয়ানগর বড়িয়া গ্রামের আফাজ মন্ডলের ছেলে জিয়ানগর বাজারের মেসার্স নুর ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী আব্দুল কাদের (৫৪) সহ এ কাজে জড়িত মোট পাঁচজনকে আটক করা হয়। ওই দিন রাতেই উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক কৃষ্ণপদ বর্মন বাদি হয়ে আটককৃতদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। জব্দকৃত চালগুলো মোস্তফাপুরে দুটি দোকান ঘরে সিলগালা করে রাখা হয়। এর মাঝে প্রায় ১৪দিন পার হলেও আদালতের নির্দেশ না থাকায় চালগুলো হতদরিদ্র ৬৭৪ জন কার্ডধারীদের মাঝে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
আজ মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী জানান, হতদরিদ্র কার্ডধারীরা চালের জন্য তার সাথে যোগাযোগ করলেও আদালতের নির্দেশ না থাকায় চালগুলো বিক্রির কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। দ্রুত আদালতের নির্দেশের মাধ্যমে চালগুলো উপকারভোগীদের মাঝে বিক্রি করতে পারলে তারা উপকৃত হবেন। এছাড়াও দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ ঘরে চালগুলো আটক থাকায় তার গুণগত মানও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুনউপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল হক জানান, গত ২৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি ইউএনও জান্নাত আরা তিথির সভাপতিত্বে সভায় কালোবাজারে সরকারি চাল বিক্রির অভিযোগে আটক ডিলার আব্দুর রহিমের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে। তার জামানতের ২০ হাজার টাকা বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সাথে ডিলার আব্দুর রহিমের জব্দকৃত চাল আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে ভোক্তাদের মাঝে বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আদালতের নির্দেশ না থাকায় চালগুলো হতদরিদ্রদের মাঝে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, এ বিষয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ও ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার পর পর দু’দিন ‘দৈনিক করতোয়ার’ সপ্তম পাতায় ‘দুপচাঁচিয়ার ডিলারের বিরুদ্ধে সরকারি খাদ্যবান্ধব চাল আত্মসাতের অভিযোগ’ ও ‘দুপচাঁচিয়ায় সরকারি চাল কালোবাজারে ডিলার ও মিল মালিকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা’ শিরোনামে দু’টি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
মন্তব্য করুন